• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
এএফসির সন্দেহ করাটাই সন্দেহের!

সংগৃহীত ছবি

ফুটবল

এএফসির সন্দেহ করাটাই সন্দেহের!

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবল এমনিতেই ‘যায় যায়’ অবস্থা! আগের বিপুল জনপ্রিয়তার ছিটেফোঁটাও এখন নেই। মান বাড়ার সম্ভাবনাও আপাতত আলোর মুখ দেখছে না। সবমিলিয়ে মৃতপ্রায় খেলায় পরিণত বাংলাদেশের ফুটবল। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে পাতানো ম্যাচের ইঙ্গিত পাচ্ছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। এমনিতেই আমাদের ফুটবল ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে আমাদের লিগের খেলা নিয়ে এএফসির আচমকা সন্দেহ করাটাই এখন সন্দেহ তৈরি করেছে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য। এ যেন বাংলাদেশের ফুটবলে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চলমান আসরে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের কয়েকটি ম্যাচ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এএফসি। এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ আরামবাগের আর দুটি ম্যাচ ব্রাদার্সের। প্রশ্ন উঠতে পারে, কীভাবে এএফসি পাতানো ম্যাচের এই সন্দেহ করল। আসলে বাংলাদেশের ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো নিয়ে এএফসির একটি গোপন সংস্থা রয়েছে। তারাই তথ্য দিয়েছে এএফসির হেড অফিসে। এএফসি আবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) ঘটনার তদন্ত করতে বলেছে। বাফুফে সেই মোতাবেক ওই দুটি ক্লাবের কাছে বিস্তারিত জানতেও চেয়েছে। ইতোমধ্যে গোপীবাগের ক্লাব ব্রাদার্স ‘বেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত নই’- এমনটি দাবি করে বাফুফেকে জবাব দিয়েছে। অবশ্য অপর ক্লাব আরামবাগ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেয়নি বলে জানা গেছে।

এখানে কিছুটা রহস্য রয়ে গেছে এএফসির সন্দেহ করা নিয়ে। সাধারণত, যেকোনো ম্যাচ পাতানোর ঘটনা ঘটে একাধিক পক্ষের যোগশাজশে। সেখানে এককভাবে কিছু করা যায় না। আরামবাগ ও ব্রাদার্সের যে ম্যাচগুলোর ওপর এএফসির নজর পড়েছে, সেখানে তো প্রতিপক্ষ রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে প্রতিপক্ষের নাম নেয়নি এএফসি। তাই আচমকা, শুধু আরামবাগ ও ব্রাদার্সকে সন্দেহের তালিকায় রাখা নিয়ে এএফসির কার্যক্রম অবশ্যই নতুন করে ভাবনা সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের ফুটবলামোদীদের মনে। জানা গেছে, ওই পাঁচ ম্যাচের প্রতিপক্ষ দলগুলো ‘বিগ টিম’ বলে পরিচিত। হয়তো সে কারণেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এএফসির যে গোপন সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশ থেকে তথ্য কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠিয়েছে, তারাও কি জানে না যে, কোনো পাতানো ম্যাচে একটি মাত্র দল জড়িতে থাকতে পারে না? এখানে ধারণা করা হচ্ছে, ব্রাদার্স ও আরামবাগ ক্লাব দুটিকে বেকায়দায় ফেলতে এমন ঘটনা সাজানো হয়েছে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের ফুটবলে পাতানো ম্যাচ যে হয় না, সেটা বলা হচ্ছে না। বাংলাদেশে যখন ফুটবল ছিল জমজমাট, আকর্ষণীয় ও সম্ভাবনাময়, তখন ম্যাচ পাতানোর ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এএফসির প্রয়োজন তখন পড়ত না। বাফুফের কর্মকর্তা বা দর্শকরাই ম্যাচ দেখে বুঝতে পারত, কোনটা পাতানো ম্যাচ, কোনটা স্বাভাবিক ম্যাচ। এখন বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থান বিশ্ব অঙ্গনে একেবারে নিচের সারিতে। সেখানে হঠাৎ করেই প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ পাতানোর সন্দেহের তালিকায় পড়াটা নতুন করে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। 

বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ, অলিম্পিক, ইউরোপীয় বিভিন্ন লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ বিশ্ব ফুটবলের বড় বড় আসরে অনেক সময় পাতানো ম্যাচ হয়েছে। তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সরগরম হয়েছে। সেখানে কিন্তু শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর মধ্যে ম্যাচ পাতানোর চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতা-পরবর্তীকাল থেকে এখন পর্যন্ত ফুটবলে পাতানো ম্যাচের সন্দেহের তিরটা মূলত শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর প্রতি থেকেছে। শুধু ফুটবলই নয়, ক্রিকেট, হকি, টেনিস, শুটিং ইত্যাদি ইভেন্টেও দেখা যায়, যেকোনো আসরে বড় দলগুলোর দিকেই পাতানো ম্যাচের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে দেখা গেছে, শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলো তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে স্বেচ্ছায় ম্যাচ পাতানোর কাজে জড়িয়ে পড়েছে। ঠিক জড়িয়ে পড়েছে বললে ভুল বলা হবে। বিভিন্ন মিডিয়া সন্দেহবশত রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাপ্রত্যাশী নয়, এমন দুই দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর সন্দেহ আসলেই অমূলক। উল্টো, এই সন্দেহ করাটাই এখন নতুন করে সন্দেহের বীজ তৈরি করেছে আমাদের মনে।

বাফুফেকে পুরো বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তা করা দরকার বলে মনে হয়। আমরা নিশ্চয়ই চাই, বাংলাদেশের ফুটবলে যাতে কোনো ধরনের পাতানো ম্যাচের চেষ্টাও কেউ না করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads