• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ফুটবল

ফুটবলে হযবরল অবস্থা

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কম নাটক হয়নি। কর্মকর্তাদের গড়িমসিতে বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের ফুটবলের অস্তিত্ব যেখানে বিলীন হওয়ার পথে, সেখানে নাটক চলছেই। এবার বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফা নতুন করে শাস্তি দিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের জন্য যে অনুদান তারা দেয়, তা নাকি এবার বন্ধ রেখেছে বাফুফের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে! অবশ্য বাফুফে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছে। আবার তারা এটাও বলেছে, ফিফা বাফুফের আর্থিক খাতসমূহকে আরো শক্তিশালী ও বেশি বেশি স্বচ্ছ করার তাগিদ দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, বাফুফের যদি আর্থিক অনিয়ম না হয়, তাহলে তো তারা এটা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন না-ও করতে পারত, একটা বিবৃতি দিলেই তো হতো। সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশের মানুষকে বিষয়টা জানাতে হবে কেন? বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলের প্রতি এতটাই বিরক্ত যে, বাফুফেকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময়ই নেই তোদের। আসলে ‘যাহা রটে তার কিছুটা তো বটেই’-বাফুফের সংবাদ সম্মেলনের ধরন দেখে অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে। সব মিলে আমাদের ‘মৃতপ্রায়’ ফুটবলে নতুন করে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।   

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দুর্বলতার কারণে আমরা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় ২০০তম স্থানে রয়েছি। আমাদের চেয়ে অনেক পড়ে চর্চা শুরু করেও বহু দেশ বাংলাদেশের তুলনায় র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে গেছে। আর আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ফুটবল অঞ্চল সাফে (সাউথ এশিয়া) বাংলাদেশ তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। আগে একসময় একমাত্র ভারত ছিল র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে কিছু এগিয়ে, মাঝেমধ্যে আমরা ওই প্রতিবেশী দেশটিকেও পেছনে ফেলতাম। অথচ এখন ভারত তো আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। উল্টো নেপাল ও মালদ্বীপের মতো দেশও বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এসবের মূল কারণ, ফুটবলকে যথা নিয়মে আমাদের দেশে লালনপালন করা হয় না। আমরা খেলাটির উন্নতির পরিবর্তে আনুষ্ঠানিকতাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। আমরা বাফুফের নির্বাচন, লোকদেখানো কিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন, ঘটা করে ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে টুর্নামেন্ট উদ্বোধন, আকর্ষণীয়ভাবে খেলোয়াড় দলবদল, অযথা সংবাদ সম্মেলন করা, উদ্দেশ্যহীনভাবে বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান-ইত্যাদি নিয়ে যে সময়টা দিয়ে থাকি, খেলাটির মানোন্নয়ন নিয়ে তার এক-দশমাংশ সময়ও দিতে পারি না। ফলে দিন দিন খেলাটির মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, মানের এই যে অধঃপতন তা নিয়ে কখনো হতাশ হতে দেখা যায় না বাফুফের কর্মকর্তাদের। মনে হয়, ফুটবলের বিশাল জনপ্রিয়তা ও সম্ভাবনা আজ যে শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে, সেটাই বোধ হয় আমাদের প্রাপ্য। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হলো বাফুফের আর্থিক অনিয়মের কাহিনী।

আর্থিক বিষয়ে বাফুফের হিসাবে গড়মিল খুঁজে পাওয়াসহ ফিফা কর্তৃক ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে নাকচ করে দিয়েছে বাফুফে। ফেডারেশনের দাবি, আর্থিক হিসাবে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জন্য তাগিদ দিয়েছে ফিফা। ফান্ড স্থগিতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত ৬ এপ্রিল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাফুফের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, ‘বাফুফেকে আর্থিক-সংক্রান্ত কার্যক্রমে আরো স্বচ্ছ্বতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফিফা থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যার ফলে ভবিষ্যতে ফিফার ফরোয়ার্ড প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘ফিফা আমাদের বলেছিল একটা ফাইন্যান্সিয়াল পলিসি করতে। ফিফা একজন কনসালট্যান্টের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয় ছয় মাস। আমাদের টেন্ডারিং মেথড, পেমেন্ট প্রসিডিউর, আমরা যেসব ভেন্ডরদের সঙ্গে কাজ করি এসব বিষয়ে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ফিফা আমাদের তাগিদ দিচ্ছে। ফিফা গেল মেয়াদের হিসেবে গড়মিল খুঁজে পেয়েছে বলে জানান বাফুফের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘২০১৬-১৭ সালে আমাদের বাফুফের পেমেন্টগুলো অনিয়মিত ছিল। কোচদের পেমেন্ট, টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পেমেন্ট, বিদেশি কোচদের পেমেন্ট এসব নিয়মিত করতে বলেছে।’ সালাম মুর্শেদী ও আবু নাঈমের কথাতেই কিন্তু বাফুফের দুর্বলতা বেড়িয়ে এসেছে। যেখানে সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ফিফা বাফুফের আর্থিক-সংক্রান্ত কার্যক্রমে আরো স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে, সেখানে আবু নাঈম বলেছেন, ফিফা গেল মেয়াদের হিসেবে গড়মিল খুঁজে পেয়েছে। প্রশ্ন হলো, বাফুফে যদি সবকিছু নিয়মের মধ্যেই রাখত, তাহলে ফিফা কি ‘স্বচ্ছতা’, ‘নিরপেক্ষতা’, ‘জবাবদিহি’, ‘গড়মিল’-ইত্যাদি শব্দগুলো প্রয়োগ করত? নিশ্চয়ই নয়।

এর আগে একবার বাংলাদেশের ফুটবল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল ফিফা। এবার যেন ওই ধরনের কোনো অবস্থা  তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার বাফুফেকে। সবার আগে আর্থিক কার্যক্রম স্বচ্ছ রাখতে হবে। বিভিন্ন দেশের ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক অনিয়মের কী শাস্তি ফিফা দেয়, সেটার কথা মাথায় রাখতে হবে বাফুফেকে। আর বাংলাদেশের ফুটবল কার্যক্রম যাতে তার চাহিদামতো এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকটায় খেয়াল দিতে হবে। এর জন্য নতুন নতুন খেলোয়াড়  তৈরি এবং সময়োপযোগী ফুটবল চর্চার দিকে মনোযোগী হতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads