• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পঞ্চগড়ের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান

পঞ্চগড়ের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান

ছবি : সংগৃহীত

ভ্রমণ

পঞ্চগড়ের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান

  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মহারাজার দিঘি : ‘মহারাজার দিঘি’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০ বাই ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। জলভাগের আয়তন প্রায় ৪০০ বাই ২০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। দিঘিতে রয়েছে মোট ১০টি ঘাট। ধারণা করা হয়, পৃথু রাজা এই দিঘিটি খনন করেন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে দিঘির পাড়ে মেলা বসে।

 

ভিতরগড় দুর্গ : ভিতরগড় পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল। দুর্গনগরীটি প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। পুরো দুর্গটি কয়েকটি স্তরে চারটি আবেষ্টনী দেয়াল দিয়ে বিভক্ত ও এর উত্তর দিকের দেয়াল এবং পূর্ব-পশ্চিম দেয়ালের কিছু অংশ ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় পড়েছে। এটি মধ্যযুগের একটি দুর্গনগরী। সম্পূর্ণ এলাকার আয়তন ২৫ বর্গকিলোমিটার। প্রাচীন ভিতরগড় দুর্গটিতে বেশ কয়েকবার খননকাজ পরিচালনা করা হয়।

 

বদেশ্বরী মন্দির : বদেশ্বরী মন্দিরটি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের দে. ভি. বদেশ্বরী মৌজার প্রায় ২ দশমিক ৭৮ একর জমিতে (মন্দির ও পার্শ্ববর্তী অংশসহ) অবস্থিত। শিব তার সহধর্মিণীর মৃত্যুযন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে উন্মাদ হয়ে তার সহধর্মিণীর শবদেহটি কাঁধে নিয়ে পৃথিবীর সর্বস্তরে উন্মাদের মতো ঘুরতে থাকেন এবং প্রলয়ের সৃষ্টি করেন। সে মুহূর্তে স্বর্গের রাজা বিষ্ণুদেব তা সহ্য করতে না পেরে স্বর্গ থেকে একটি সুদর্শনচক্র নিক্ষেপ করেন। চক্রের স্পর্শে শবদেহটি ৫২টি খণ্ডে বিভক্ত হয়। শবের ৫২টি খণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশে পড়ে দুটি খণ্ড। একটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে; অপরটি পঞ্চগড়ের বদেশ্বরীতে। মহামায়ার খণ্ডিত অংশ যে স্থানে পড়েছে, তাকে পীঠ বলা হয়। বদেশ্বরী মহাপীঠ এরই একটি।

 

মির্জাপুর শাহী মসজিদ : মির্জাপুর শাহী মসজিদ পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামেরই এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং  দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। মসজিদটিতে একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের কোনায় একটি করে মিনার রয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি মোগল আমলে নির্মিত হয়েছিল।

 

বারো আউলিয়ার মাজার : বারো আউলিয়ার মাজারটি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪৭ দশমিক ৭৩ একর জমিতে অবস্থিত। জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১২ জন আউলিয়া ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তারা ইন্তেকাল করলে ওই স্থানে তাদের সমাহিত করা হয়। ১২ জন আউলিয়াকে সমাহিত করায় এবং তাদের মাজার থাকায় এই স্থানের নাম হয় বারো আউলিয়া। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।

 

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর : তেঁতুলিয়া উপজেলার ১ নং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ মানচিত্রের সর্বউত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এই স্থানে মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।

 

আটোয়ারী ইমামবাড়া : আটোয়ারী ইমামবাড়া পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত। এটি ঐতিহাসিক মির্জাপুর শাহী মসজিদের কাছেই অবস্থিত এবং বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিফতরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইমামবাড়াটি একটি প্রাচীন আয়তাকার ইমামবাড়া। এর অভ্যন্তরে মাত্র একটি কক্ষ রয়েছে। পুরো ইমামবাড়াটি এক গম্বুজবিশিষ্ট। এর প্রবেশমুখে বৃহত্তর আকৃতির একটি প্রাচীর রয়েছে, যা প্রবেশফটক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইমামবাড়াটির পাশে অনেক প্রাচীন কবর রয়েছে যা কিছুটা রহস্যেরও জন্ম দিয়েছে। এর নির্মাণকারী ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

গোলকধাম মন্দির : গোলকধাম মন্দিরটি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটি ১৮৪৬ সালে নির্মিত হয়। দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন। এর স্থাপত্য কৌশল গ্রিক পদ্ধতির অনুরূপ। 

 

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো : তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো আছে। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো অবস্থিত। এই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য বেশ উপভোগ করা যায়।

 

রকস্ মিউজিয়াম বা পাথরের জাদুঘর : পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে এই জাদুঘরের অবস্থান। শুধু বাংলাদেশে নয়, এশিয়ার মধ্যে এ রকস্ পাথরের জাদুঘর আর দ্বিতীয়টি নেই। জাদুঘরের ভেতর থরে থরে সাজানো রয়েছে হরেকরকমের পাথর। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রাচীনকালের মানুষের ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র। নদী থেকে পাওয়া বিশালাকার দুটি নৌকাও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে জাদুঘরের ঠিক মাঝখানে। ১৯৯৭ সালে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ নাজমুল হক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরটি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads