• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সমতল ভূমিতে সবুজ চা বাগান

সমতল ভূমিতে সবুজ চা বাগান

ছবি : সংগৃহীত

ভ্রমণ

সমতল ভূমিতে সবুজ চা বাগান

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পঞ্চগড় একসময় অর্থকরী ফসল আখ ও আনারস চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বর্তমানে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় সমতল ভূমিতে গড়ে উঠছে নিত্যনতুন চা বাগান। অবশ্য ১৯৯০ দশকের পর থেকে সমতল ভূমি খনন করে পাথর উত্তোলনও শুরু হয়। এর আগে তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা হতো। তখন তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড় জেলার অর্থনীতি আখ, আনারস ও পাথরের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে আখ ও আনারসের আবাদ কমেছে। এর পরিবর্তে সমতল ভূমিতে ব্যাপকভাবে চা চাষ হচ্ছে। সিলেট ও চট্টগ্রামের পর দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা স্থান দখল করে নিয়েছে। ১৯৯৭ সালে তেঁতুলিয়ায় প্রথম স্বল্প পরিসরে সমতলে চা আবাদ শুরু করে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি লিমিটেড (টিটিসিএল)। পরে তেঁতুলিয়ায় বৃহৎ পরিসরে চা চাষ শুরু করে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড। একপর্যায়ে বিকাশ বাংলাদেশ নামের একটি কোম্পানি ক্ষুদ্র চা চাষিদের বিনাসুদে চা চারা প্রদান করে। তখন থেকেই চা আবাদে সাধারণ চাষিদের আগ্রহ বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় অফিসের তথ্যমতে, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলাসহ গোটা জেলায় দুই হাজার ২৬৫ হেক্টর সমতল ভূমিতে চা চাষ হয়েছে। ২০১৭ সালে ৫৪ দশমিক ৪৬ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলা শীর্ষে। পঞ্চগড় অফিসের সমীক্ষা অনুযায়ী তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়ে নিবন্ধনকৃত বড় চা বাগানের (২০ একর জমির উপরে নয়) সংখ্যা সাতটি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীনে পঞ্চগড় জেলায় ২১টি চা কারখানা রেজিস্ট্রেশন ও অনুমোদিত আছে। এর মধ্যে ১২টি কারখানা পুরোদমে কাজকর্ম শুরু করেছে। এসব কারখানায় বৃহৎ ও ক্ষুদ্র চা চাষিরা প্রতি কেজি সবুজ চাপাতা ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে। বর্তমানে প্রস্তুতকৃত চা পাতার নিলাম মার্কেটে (অকসন মার্কেট) দাম বেশি থাকায় কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাষিদের কাছে কোনো কোনো টি ফ্যাক্টরি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত সবুজ চা পাতা কিনছে। সবুজ চা পাতার দাম আকস্মিক বৃদ্ধিতে সাধারণ চাষিরা বসতবাড়ির আশপাশে বাঁশ ঝাড়, কাঠ গাছের বাগান, আমের বাগান ইত্যাদি উপরে ফেলে নতুন নতুন চা বাগান সৃজন করছেন। ফলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সাধারণ চাষিদের অন্যান্য ফসলের তুলনায় অর্থকরী ফসল চা আবাদের আগ্রহ রীতিমতো আলোচিত বিপ্লবে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পলিব্যাগে লাগানো ১২ ইঞ্চির প্রতিটি চা চারা ১৪ থেকে ১৭ টাকা দরে বিক্রি করছে।

তেঁতুলিয়ায় চা আবাদ বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার যুবক ও শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। অনেক অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাছে পাইকারি দরে কমিশনের ভিত্তিতে সবুজ চা পাতা কিনে টি ফ্যাক্টরির সঙ্গে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এদিকে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট অর্গানিক পদ্ধতিতে চা উৎপাদনসহ বাজারজাত করছে। তেঁতুলিয়ার উৎপাদিত চা বহির্বিশ্বে রফতানি হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads