• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পর্যটন সম্ভাবনায় অনন্যা- বরগুনা

সংগৃহীত ছবি

ভ্রমণ

পর্যটন সম্ভাবনায় অনন্যা- বরগুনা

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০১৯

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে অবস্থিত উপকূলীয় জেলা বরগুনা। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ জেলায় পর্যটন জোন স্থাপন এবং মৎস্য ও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে শিল্প স্থাপন করা গেলে বরগুনা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা।

যোগাযোগের সমস্যা ও পথের দূরত্ব কমে এলে জেলার ঐহিত্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান, যেমন- ফাতরার বন, সোনারচর, কুমিরমারার বন, লালদিয়ার বন ও সমুদ্রসৈকত, হরিণঘাটা, বিবিচিনি মসজিদের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে বাড়বে পর্যটকদের ভিড়। সোনারচর, কুমিরমারার বন, লালদিয়ার বন ও সমুদ্রসৈকত, হরিণঘাটা বরগুনা এসব পর্যটন স্পটে এলে পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে তুলবে। এসব বন সাগরের কোল ঘেঁষে হওয়ার কারণে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন বেশ সহজে। চোখে না দেখলে কারো বিশ্বাস হবে না প্রকৃতির এই লীলাভূমি। প্রচারের অভাবে বরগুনার এসব পর্যটন স্পট পর্যটকদের আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। এ পর্যটন স্পটগুলোতে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন প্রচারাভিযান।

বিশ্লেষকদের মতে, বঙ্গোপসাগরের তীরের জেলা বরগুনার এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে দেশের পর্যটনশিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। একদিকে শ্যামল ছায়ার কোমল পরশ, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের শোঁ শোঁ গর্জন। পৃথিবীখ্যাত মায়াবী চিত্রল হরিণের দুরন্তপনা, রাখাইন নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনচিত্র, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযুদ্ধ যে কাউকে মুগ্ধ করে। একই স্থানে প্রকৃতির এমন বাহারি সৌন্দর্যের সমাহার খুব কম জায়গায়ই মেলে। বরগুনায় এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে এলে প্রকৃতির এমন নিবিড় সান্নিধ্য পাওয়া যায়। বিপুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে শুধু প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। বরগুনার তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল; পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়ারচর, হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পদ্মার চর; বরগুনা সদরের সোনাতলা বনাঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠতে পারে দেশের পর্যটনশিল্পের বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।

ফাতরা বন টেংরাগিরি : বঙ্গোপসাগরের কোলে গড়ে ওঠা এই বনে এসে কান পাতলে শোনা যায় সাগরের গর্জন। সাগর থেকে উঠে আসা বাতাসে ছন্দময় অনুরণন তোলে বনের পত্রগুচ্ছ। তালতলী উপজেলার ফকিরহাটে অবস্থিত টেংরাগিরি একসময় সুন্দরবনের অংশ ছিল। প্রাকৃতিক এই বনকে স্থানীয় লোকজন ‘ফাতরা বন’ হিসেবে চেনে। সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় টেংরাগিরি বনাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৬৭ সালে। তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্তৃত এই বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর ৪ হাজার ৪৮ দশমিক ৫৮ হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত হয় টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই বনাঞ্চলের তিন দিকে বঙ্গোপসাগর, বান্দ্রা খাল, মেরজে আলীর খাল, সিলভারতলীর খাল, ফেচুয়ার খাল, গৌয়মতলার খাল, কেন্দুয়ার খাল, সুদিরের খাল, বগীরদোন খাল। বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১১ সালে ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেংরাগিরি বনাঞ্চলের অভয়ারণ্যে ১০টি হরিণ, ২৫টি শূকর, ৩টি চিতাবাঘ, ২৫টি অজগর, ২টি কুমির, শতাধিক বানর, ২টি সজারুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। সারি সারি গেওয়া, জাম, ধুন্দল, কেওড়া, সুন্দরী, বাইন, করমচা, বলই কেওয়া, তাল, কাঁকড়া, হেতাল, তাম্বুলকাটা গাছের মধ্যে এখানে ঘুরে বেড়ায় কাঠবিড়ালি, বানর, সাপ, সজারু, শূকর, উদ, কচ্ছপ, শৃগাল, ডোরাকাটা বাঘসহ হাজার প্রজাতির জীবজন্তু। তালতলীর ২৩টি পল্লীতে বসবাস করছে কয়েকশ বছরের পুরনো রাখাইন সম্প্রদায়। তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন, প্রাচীন উপাসনালয়, বুদ্ধ মূর্তিগুলো পর্যটকদের ভিন্ন মাত্রার আনন্দ দেয়।

সোনাকাটা ও আশারচর : টেংরাগিরি বনের খুব কাছেই আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাকেন্দ্র সোনাকাটা চরাঞ্চল। তালতলী সদর থেকে খুব কাছেই বঙ্গোপসাগরের কোলে সোনাকাটা। এর একদিকে টেংরাগিরি বনের সবুজ নৈসর্গ আর অন্যদিকে বিশাল সৈকতের বুকে কান পাতলে শোনা যাবে বঙ্গোপসাগরের কুল কুল ধ্বনি। সোনাকাটায় দেখা যাবে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। বালিহাঁস, গাঙচিল, পানকৌড়িসহ হরেক পাখির কুজনে সব সময় মুখর থাকে আশারচর। তালতলী সদর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত আশারচরে আছে শুঁটকির সাম্রাজ্য। রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে দূর সাগরের বুকে মাছ ধরতে নামা ছোট ছোট ডিঙি নৌকার টিপটিপ আলোর মিছিল দূর থেকে দেখলে মনে হবে ভাসমান কোনো শহর।

সোনাতলা বনাঞ্চল : বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বর বঙ্গোপসাগরে মিলেছে সোনাতলা এলাকায়। তিন নদনদীর সঙ্গমস্থলে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক নৈসর্গের আরেক লীলাভূমি সোনাতলা বনাঞ্চল। সোনাতলা, বাবুগঞ্জ, ছোনবুনিয়া, পদ্মা, কুমিরমারা এই এলাকার বিস্তীর্ণ চর ঘিরে গড়ে ওঠা সৃজিত এই বনভূমির আয়তন ৪ হাজার ৬০০ একর। সারি সারি কেওড়া, গেওয়া গাছে ছাওয়া এই বনে শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, মেছো বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রয়েছে। রয়েছে একটি পিকনিক স্পট, কয়েকটি গোলঘর, একটি ডাকবাংলো, পুকুর।

হরিণঘাটার বন বা লালদিয়ার চর  : চঞ্চল হরিণরা দলবেঁধে ছুটছে। বানর আর বুনো শূকরের অবাধ বিচরণ, পাখির কলরব আর সবুজ পাতার সানাইয়ে সারাক্ষণ মুখর থাকে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত হরিণঘাটার সৃজিত বনে হরিণ, বানর, শূকর, কাঠবিড়ালি, মেছো বাঘ, ডোরা বাঘ, সজারু, উদ, শৃগালসহ অসংখ্য বুনো প্রাণীর বিচরণ এ বনে। হরেক প্রজাতির পাখির কলরবে সারাক্ষণ মুখর থাকে হরিণঘাটা। একদিকে বিস্তীর্ণ সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যাদের মুগ্ধ করে তাদের জন্য এই দেশের মাঝেই বেড়ানোর চমৎকার একটি স্থান হতে পারে হরিণঘাটা। বরিশাল বিভাগের দক্ষিণ প্রান্তে বরগুনা জেলায় অবস্থিত এই হরিণঘাটায় এসে একদিকে যেমন উপভোগ করা যায় সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য তেমনি দেখা মেলে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম বণ্যপ্রাণীরও। বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা সদর তালতলী থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে হরিণঘাটা বাজারের পাশ থেকেই এই বনের শুরু।  হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টা হেঁটে বন পার হয়ে গেলে পাওয়া যায় এই লালদিয়া। এ বনের আগে বিষখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে। বনসংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোনো অংশে কমতি নেই। এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত এবং ফিরে আসবেন বারে বারে। এখানে সাগরের নোনা জল এসে আছড়ে পড়ছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দল ঘুরে বেড়ায় বেলাভূমিতে। সে এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভূতি যা আপনাকে আবারো কাছে টানবে বারবার।

লালদিয়ার এ চরটি সুন্দরবনের খুব কাছে থাকায় পর্যটকরা সহজেই সুন্দরবনের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারবেন। এখানকার বনের মেছো বাঘ, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী সহজেই পর্যটকদের মনে দোলা দেবে। লাখ লাখ লাল কাঁকড়া চরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণে। চরের বালুতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই মুহূর্তে আবার গর্তে ঢুকে যায়। এভাবে রাত-দিন লুকোচুরি খেলতেও ওদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে না। লালদিয়া সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি শুঁটকিপল্লী। সৈকত ঘেরা লালদিয়ার চরে বছরে কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে শুঁটকি চাষ। এখানে যে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় তার ৯০ ভাগই হয় হাঁস-মুরগির খাদ্যের জন্য, বাকি ১০ ভাগ আমরা খাই। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শুঁটকির কারবার চলে আসছে। স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে হরিণঘাটার এই বন ফাতরার বন নামে পরিচিত হলেও ২০১০ সালে বন বিভাগের আমতলী রেঞ্জের টেংরাগিরি (সখিনা) বিটের এ জায়গাটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে এর নাম দেওয়া হয় টেংরাগিরি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এ বনের পূর্বদিকে রয়েছে- কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন, উত্তর পাশে রাখাইনদের বেশ কিছু বসতি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

বিবিচিনি শাহী মসজিদ : বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিমি দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নে এই মসজিদটি অবস্থিত। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে উত্তর দিকে ১০ কিলোমিটার পথ অগ্রসর হলেই বিবিচিনি গ্রাম। যেখানে সর্বদাই আলো জ্বলছে। দিগন্তজুড়ে সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্যকর্মের নিদর্শন এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ। এ যেন এক হূদয় ছোঁয়া পরিবেশ যা মনের বিষণ্নতাকে মুগ্ধ করে। দেশের অনেক দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বিবিচিনি মসজিদ একটি। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই মসজিদকে দক্ষিণ বাংলার যত ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই উজ্জ্বল নিদর্শনটি টিকে থাকলেও কালের বিবর্তনে আজ এর ঐতিহ্য অনেকটা হারিয়ে গেছে। তবু এর অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ পুরনো ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই সময়ে মসজিদটির অনেক জৌলুস ছিল বলে স্থানীয় বৃদ্ধ লোকদের মুখে শোনা যায়। মসজিদ ঘিরে রয়েছে আরো অনেক অলৌকিক ঘটনার কাহিনী ও নানা ইতিহাস। জানা যায়, এই মসজিদের নির্মাতা সাধক নেয়ামত শাহের কন্যা চিনিবিবি ও ইছাবিবির নামের সঙ্গে বিবিচিনি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, চিনিবিবি থেকেই বিবিচিনি নামের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলার অন্যতম মোগল স্থাপত্যশিল্প এবং এলাকার পুরনো দিনের অতীত স্মৃতি ও ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক কীর্তি হিসেবেও দক্ষিণাঞ্চল তথা সমগ্র দেশের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদ। একসময় এ অঞ্চল ছিল মগ অ-মুসলিম ফিরিঙ্গিদের তুমুল হামলার আড্ডা ভূমি। হামলার প্রতিরোধ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মগ ফিরিঙ্গিদের দমনের জন্য শাহসুজা ঝালকাঠির সুজাবাদেও এক সেনানিবাস গড়ে তোলেন, যাহা সুজাবাদ কেল্লা নামে পরিচিত।

তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের নিকটবর্তী বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে আধ্যাত্মিক সাধক শাহ নেয়ামত উল্লাহ ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দের এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। দস্যুদের হামলার প্রতিরোধ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদটির অগ্রণী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধেও মসজিদটি মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ছয় ফুট চওড়াবিশিষ্ট। দক্ষিণ এবং উত্তর দিকে তিন তিনটি দরজা রয়েছে। তবে মসজিদটিতে মূল প্রবেশদ্বার একটি। মসজিদের সংস্কার কাঠামোয় প্রবেশদ্বারের মূল ফটক সংস্কার করা হলেও প্রবেশপথ এখনো অপরিসর। জানা যায়, ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে হজরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রহ.) পারস্য থেকে এই এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইসাবিবির নামানুসারে বিবিচিনি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে এবং মসজিদটির নাম রাখা হয়ছে বিবিচিনি শাহী মসজিদ। জানা যায়, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে হজরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রহ.) পরলোকগমন করেন এবং মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। উল্লেখ্য, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক মসজিদটি তালিকাভুক্ত করে এর সংস্কার করা হয়েছে।

এই ঐতিহাসিক দর্শনীয় শোভা বর্ধনকারী মসজিদটি ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ঘটনা যা মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। শোনা যায়, আগের সময় স্বপ্নেপ্রাপ্ত দূরবর্তী অনেক লোকজন এই মসজিদ থেকে গুপ্তধন নিয়ে যেত। প্রতিদিন এখানে অগণিত নারী-পুরুষ এসে নামাজ আদায় করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের নেক মকসুদ পূর্ণতা লাভের উদ্দেশ্যে। এ ছাড়া টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মানতের মালামাল রেখে যেত মসজিদ প্রান্তে। এখনো প্রতি সপ্তাহে অসংখ্য মানুষ এসে সারাক্ষণ ইবাদত বন্দেগি করে কাটায়। যে যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে আসে তার অধিকাংশ আশাই পূর্ণ হয় বলে অসংখ্য মানুষের কাছে শোনা যায়। মোগল আমলের এ দীঘি থেকে মানুষ যা চাইত তা ইচ্ছানুযায়ী পাওয়া যেত বলে শোনা যায়। আর তাই মসজিদের নিকটবর্তী বড় দীঘিটি ইছাবিবির দীঘি নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে এসব দীঘির অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads