• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মধুমতীর কোল ঘেঁষে

ফাইল ছবি

ভ্রমণ

মধুমতীর কোল ঘেঁষে

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৯

মধুমতীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে গোপালগঞ্জ জেলার সভ্যতা-সাংস্কৃতিক অবকাঠামো। প্রাচীনকালে এ এলাকাটি বঙ্গ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। সুলতানি ও মোগল যুগে এ অঞ্চল হিন্দু রাজারা শাসন করতেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩) সময় গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা ছিল যশোর জেলার অন্তর্গত। বাকি অংশ ছিল ঢাকা-জালালপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত। ১৮০৭ সালে মুকসুদপুর থানা যশোর থেকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। ফরিদপুর জেলার একটি পরগনার নাম ছিল জালালপুর। গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া জালালপুর পরগনাভুক্ত ছিল। ১৮১২ সালে চান্দনা (মধুমতী) নদী যশোর ও ঢাকা-জালালপুর জেলার বিভক্ত রেখা হিসেবে নির্ধারিত হয়। গোপালগঞ্জ-মাদারীপুর এলাকা ছিল বিশাল জলাভূমি। এখানে নৌ-ডাকাতির প্রকোপ ছিল বেশি। এজন্য বাকেরগঞ্জ থেকে বিভাজিত হয়ে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭২ সালে মাদারীপুর মহকুমায় গোপালগঞ্জ নামক একটি থানা গঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থেকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়। গোপালগঞ্জ এবং কোটালীপাড়া থানার সঙ্গে ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানাকে নবগঠিত গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গোপালগঞ্জের প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন সুরেশ চন্দ্র সেন। ১৯২১ সালে গোপালগঞ্জ শহরের মানে উন্নীত হয়। ১৯২৫ সালে গোপালগঞ্জে সিভিল কোর্ট চালু হয়। ১৯৩৬ সালে প্রশাসক ছিলেন এএফএম এহিয়া চৌধুরী।

পর্যটনের আকর্ষণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি

নির্জন নিরিবিলি একটি শহর। যেন ছবির মতো সাজানো এই টুঙ্গিপাড়া। গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গিপাড়া। প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত গোপালগঞ্জ জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান। এসব স্থানের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য টুঙ্গিপাড়া অন্যতম। মধুমতী নদীর তীরে পাটগাতীর পরেই টুঙ্গিপাড়া। এই টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি। এখানে ঢুকতেই চোখে পড়বে পাথরের গায়ে লেখা রয়েছে- ‘দাঁড়াও পথিকবর যথার্থ বাঙালী যদি তুমি হও। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে। এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা।’ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। টুঙ্গিপাড়াকে বদলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ টুঙ্গিপাড়ায় আসেন প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধুর সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে মুজিব আদর্শের সৈনিকরা কবরে শ্রদ্ধা জানান, তার জন্য কাঁদেন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন। গ্রামটি পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হলেও গ্রামের নামেই উপজেলা সদরের নাম হয়েছে টুঙ্গিপাড়া। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সমাধিসৌধের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ৩৮ দশমিক ৩০ একর জমির ওপর ১৭ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ সমাধিসৌধ নির্মাণ করে। টুঙ্গিপাড়ার বাইগার নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এ মাজার কমপ্লেক্স। লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো টাইলস দিয়ে গ্রিক স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত সৌধের কারুকার্যে ফুটে উঠেছে বেদনার চিহ্ন। কমপ্লেক্সের সামনের, দু’পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর কবর। পাশেই তার বাবা-মায়ের কবর। এই তিন কবরকে ঘিরেই নির্মাণ করা হয়েছে মূল টম্ব। সাদা পাথরে নির্মিত গোলাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট সমাধিসৌধের ওপর দেয়ালে জাফরি কাটা। এই জাফরি কাটা দিয়েই সূর্যের আলো আসে। উপরে কাচের কারুকাজ দিয়েও আলো ছড়িয়ে পড়ে কবরে। চারদিকে কালো টাইলস এবং মাঝখানে শ্বেতশুভ্র টাইলসে বঙ্গবন্ধুর কবর বাঁধানো। উপরের অংশ ফাঁকা। কবর তিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে সংক্ষিপ্ত রেলিং দিয়ে। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, মসজিদ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাথেটেরিয়া, উন্মুক্ত মঞ্চ, বকুলতলা চত্বর, সুভেনির কর্নার, প্রশস্ত পথ, মনোরম ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়। মাজার কমপ্লেক্সের পাঠাগারে দেড় হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। এখানে চারদিকে গাছ-গাছালি, ফল ও বিল। বঙ্গবন্ধুর সমাধির পাশেই তার বাড়ি। টুঙ্গিপাড়ার সবুজ শ্যামল মায়ায় মোহিত হওয়ারই কথা। এখানকার মানুষ অনেক সহজ-সরল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads