• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ভ্রমণ

ভারতের মেঘালয় ভ্রমণ

  • প্রকাশিত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সেরাজুম মনিরা

 

 

প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড খ্যাত ভারতের ছোট্ট রাজ্য মেঘালয়। এবারের মেঘালয় সফরটি আমার জন্য ছিল নতুন এক অ্যাডভেঞ্চার। কারণ সফরে প্রথমবারের মতো আমার সফরসঙ্গী ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। ৩ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ছিল আমাদের ৫ দিনের মেঘালয় সফর। মেঘালয় যাওয়ার জন্য আপনার ভিসাতে উল্লেখ থাকতে হবে বাই রোড ডাউকি। অর্থাৎ সিলেটের তামাবিল বর্ডার দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া বাই রোড ডালু বা শেরপুরের নকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়েও আপনি সহজে মেঘালয় ঘুরতে পারবেন।

আমি গিয়েছি তামাবিল বর্ডার দিয়ে। তামাবিল বর্ডার সকাল ৯টায় ওপেন হয়। আপনি যত সকালে যাবেন তত আপনার জন্য সুবিধা। তামাবিল বর্ডারের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝামেলামুক্ত ইমিগ্রেশনের একটি। এখানে দালালের কোনো চিহ্ন নেই। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশ নিজে থেকেই আপনার কাছে ১০০ টাকা চেয়ে নেবে। তামাবিল বর্ডার দিয়ে গেলে চেষ্টা করবেন ট্রাভেল ট্যাক্স আগে থেকে দিয়ে যেতে। ওখানেও দিতে পারবেন তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে ৬০০ টাকা দিতে হবে।

তামাবিলে ইমিগ্রেশন শেষ করে এবার ডাউকির পালা। ডাউকি ইমিগ্রেশন দেখে আমার মনে হয়েছে, এটি ভারতের সবচেয়ে এনালগ ইমিগ্রেশন। তবে এটিও মোটামুটি ঝামেলামুক্ত। তবে এই বর্ডার দিয়ে যেতে একটি আবশ্যিক বিষয় ডলার এন্ডোর্সমেন্ট। ডাউকি দিয়ে গেলে আপনার পাসপোর্টে অবশ্যই ডলার এন্ডোর্স করা থাকতে হবে এবং কাছে সমপরিমাণ ডলার থাকতে হবে। নয়তো ভালো ঝামেলায় পড়বেন। এবার গাড়ি ঠিক করার পালা। আপনার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে আগে থেকেই গাড়ি ঠিক করে যাওয়া। তবে ইমিগ্রেশনের বাইরে থেকেও গাড়ি রিজার্ভ করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো।

গাড়ি রিজার্ভ শেষে আপনার মূল ট্যুর শুরু। এদিন আপনার মূল গন্তব্য শিলং। তবে শিলং যাওয়ার পথে কিছুু স্পট দেখে নেবেন। যার প্রথমে রয়েছে উমক্রেম ফলস। সেখান থেকে যাবেন বোরহিল ফলস যেটাকে আমরা পান্তুমাই ফলস নামে বিছনাকান্দি থেকে দেখি। এর পর যাবেন এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম মাওলিনং ভিলেজ। মাওলিনং ভিলেজ দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। মাওলিনংয়ের পাশেই রয়েছে একটি লিভিং রুট ব্রিজ। এসব স্পট দেখা শেষে সরাসরি চলে যাবেন শিলং। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন।

২য় দিন, মূলত শিলংকেন্দ্রিক ঘোরাঘুরি। সকালে নাশতা সেরে প্রথমেই চলে যাবেন ডন বস্কো মিউজিয়াম দেখতে। বিশাল একটি মিউজিয়াম। তবে রোববার বন্ধ থাকায় আমি দেখতে পারি নাই। এরপর দেখবেন মদিনা গ্লাস মসজিদ, উমিয়াম লেক, ওয়াটস লেক। এর পর আপনি চলে যেতে পারেন এলিফ্যান্ট ফলস দেখতে। এলিফ্যান্ট ফলস চেরাপুঞ্জি যাওয়ার পথেও দেখতে পারেন। তবে আমার মতে, আগে দেখাই ভালো। সব শেষে যাবেন লাইটলুম ভিউ পয়েন্ট। লাইটলুম ভিউ পয়েন্ট মেঘালয়ের অন্যতম গভীর ক্যানিয়নগুলোর একটি। তবে এটি প্রায় ২৪ ঘণ্টাই মেঘে ঢাকা থাকে। কপাল ভালো থাকলে দেখতে পারেন আসল রূপ। এদিন এসব প্লেস দেখেও আপনার হাতে কিছু সময় থাকতে পারে। তাই এদিন শিলং পুলিশ বাজার থেকে টুকিটাকি শপিং করতে পারেন। পরে হয়তো আর সময় পাবেন না। তবে আপনার মেঘালয় সফরের উদ্দেশ্য যদি হয় শপিং তবে আপনাকে পুরোপুরি হতাশ হতে হবে।

৩য় দিন খুব সকাল সকাল রওনা দেবেন চেরাপুঞ্জির উদ্দেশে। এদিন যেসব জায়গা দেখবেন তা হলো- মকডক ভিউ পয়েন্ট, গার্ডেন অব কেভস, ওয়াকাভা ফলস, মসমাই কেভস, ইকো পার্ক, নোহকালিকাই ফলস, ডেন্থলেন ফলস, ওয়াইসেডাং ফলস এবং সেভেন সিস্টার্স ফলস। মকডক ভিউ পয়েন্টে আপনি চাইলে ৪০০ রূপিতে জিপ লাইনিং করতে পারেন। মজা পাবেন।

এসব জায়গা দেখে চেরাপুঞ্জিতেই থেকে যাবেন এই রাত। এখানে থাকার জন্য তুলনামূলক কম দামে অনেক হোম স্টে পেয়ে যাবেন। চতুর্থ দিনটি সবার জন্য নয়। তবে যিনি এই দিনের চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন তিনি হয়তো অনেক কিছুই পেয়ে যাবেন। এদিন আপনার গন্তব্য হবে লিভিং রুট ডাবল ডেকার ব্রিজ এবং রেইনবো ফলস। লিভিং রুট ব্রিজ পর্যন্ত যেতে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩ হাজার সিঁড়ি এবং সেখান থেকে রেইবো ফলসে যেতে পাড়ি দিতে হবে আরো ৪ হাজার সিঁড়ি।

অর্থাৎ মোট ৭ হাজার সিঁড়ি। আমার সঙ্গে পরিবারের মানুষ থাকায় রেইনবো ফলস পর্যন্ত যেতে পারিনি। ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে। এদিন আপনার সারাটা দিন ট্র্যাকিংয়েই কেটে যাবে। আপনি চাইলে ট্র্যাকিং শেষ করে স্নোনেংপেডেংয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন অথবা ওই রাতটাও চেরাপুঞ্জি থেকে যেতে পারেন। তবে আমার মতে, স্নোনেংপেডেং যাওয়াটাই ভালো হবে।

রাতেই যদি স্নোনেংপেডেং এসে থাকেন তবে অনেকটা সময় পর্যন্ত উমেংগট নদীর স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে পারবেন। চাইলে রাতে নদীর পাড়ে টেন্ট ভাড়া নিয়ে ক্যাম্পিংও করতে পারবেন। অথবা নদীর পাড়ে থাকার মতো অনেক কটেজ পেয়ে যাবেন।

পঞ্চম দিন আপনার বিভিন্নভাবে উমেংগট নদীর কাচের মতো স্বচ্ছ পানি উপভোগের পালা। আপনি চাইলে নদীতে বোটিং, কায়াকিং, জিপ লাইনিং, স্নোর কোলিং ইত্যাদি করতে পারেন। এ ছাড়া নদীতে মাছ ধরা এবং গোসলের ব্যবস্থাও রয়েছে। সকাল থেকে আপনার ইচ্ছামতো সময় নদীতে কাটিয়ে চলে যাবেন ক্রাংসুরি ফলস দেখতে। ক্রাংসুরি ফলসের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। সেখানে গোসলের ব্যবস্থাও রয়েছে। ক্রাংসুরি ফলস দেখে বিকাল ৪টার মধ্যেই চলে আসবেন ডাউকি। সেখানে অত্যন্ত ট্রাফিক জ্যাম হওয়ায় আগেভাগে আসাই ভালো। এরপর ডাউকিতে ইমিগ্রেশন শেষ করে চলে আসুন নিজের প্রিয় মাতৃভূমিতে।

এই ট্যুরে আমার গাইড বা ড্রাইভার সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। তার সম্পর্কে শুধু একটা কথাই বলব। আল্লাহর রহমতে অনেক জায়গাতেই ঘুরেছি। আমার এবারের গাইডটা এতটাই ভদ্র আর মিশুক ছিল, আম্মা চলে আসার সময় তার জন্য কাঁদতেছিলেন। তার উসিলায় আমাদের ট্যুরটা অনেক উপভোগ্য আর সহজ হয়েছে। মেঘালয় অত্যন্ত পরিষ্কার জায়গা। সবখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলার আলাদা স্থান চোখে পড়ে। আমরা যখন যেখানেই যাই ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলি আর প্রকৃতিটাকে সুন্দর রাখি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads