• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
শাপলা বিলে ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের

ছবি: বাংলাদেশের খবর

ভ্রমণ

শাপলা বিলে ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের

  • চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের অপরূপ স্থান ঐতিহ্যবাহী নলবিলার ‘শাপলা বিল’। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। একপাশে মহাসড়ক, অপরপাশে গ্রামীণ বসতি, অন্য দুপাশে গহিন অরণ্যঘেরা পাহাড়। ঘন সবুজ বন ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার শাপলা বিল লাগোয়া সবকিছু মিলিয়ে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন এক নতুন কোনো জগতে। বিলে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! নিশ্চিতভাবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে চলেছেন।

আগাছা আর লতাগুল্মে ভরা বিলের পানিতে ফুটে আছে হাজারো নানা রঙের শাপলা। সূর্যের সোনালি আভা শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে বিলের সৌন্দর্য। নৌকা কিংবা কোমরসমান পানি মাড়িয়ে বিলের ভেতর ঢুকলে মনে হবে বাতাসের তালে তালে এপাশ-ওপাশ দুলতে দুলতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে শাপলার দল। সে হাসিতে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দের ফাল্গুন ধারা।

পাহাড়ের ঝিরি-উপঝিরি ও হাজারো একর জলাবদ্ধ নলবিলার জমিতে লাল-হলুদসহ নানা রঙের শাপলা ফুল ফুটে রয়েছে বিলের ঝিলে। বছরের আট মাসই এই শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। শীতের চাষাবাদের জন্য মেশিন বসিয়ে পানি বাইরে না ফেললে বছরজুড়েই এই শাপলা বিলে দর্শনার্থীরা বিনোদন আহরণ করতে পারবেন।

বিশাল এ বিলে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। হাজারো শাপলার মাঝ দিয়ে নৌকা নিয়ে গেলে মনে হয় শাপলার দেশে যেন একখণ্ড নৌকা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে দর্শনার্থীরা দলবেঁধে ছুটে যায় নলবিলা ‘শাপলা বিলে’। এখানে সারা বছর শাপলা ফোটার কারণে এটিকে স্থানীয় মানুষ নাম দিয়েছে নলবিলার ‘শাপলা বিল’। শাপলা ছাড়াও এখানে প্রতি বছর শীত মৌসুমে আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই শাপলা বিলে।

উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মাঝখানে বিশাল অংশজুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। বর্ষা মৌসুমে এই বিলে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে। বর্ষার পরপরই পানি একটু কমলে প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসুরা ছোট নৌকা নিয়ে ঘুরতে যায়। বর্ষার জলরাশির বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে শাপলা ফোটে, তার সঙ্গে নৌকার পাল তুলে ঘুরতে কার না মন চায়।

বিশেষ করে ঈদ ও কোরবানির সময় ছাড়াও ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে শাপলা বিল। দেখা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসছেন। কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, লামা, আলীকদমসহ দুই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন শাপলাবিলে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসে শাপলা বিলে হাজারো শাপলা দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। রাস্তার পাশ থেকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাপলা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এই শাপলা বিলে ভিড় করে শিক্ষার্থীরা অবসর সময় কাটাতে ঘুরতে যান। আস্তে আস্তে শাপলা বিলে সৌন্দর্য উপভোগে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠছে। যদি প্রশাসনের পক্ষে নানাবিধ সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে নলবিলা শাপলা বিল পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।

নলবিলা ‘শাপলা বিলে’ ঘুরতে যাওয়া একজন দর্শনার্থী তাওরিফ ইবনে আবেদিন বলেন, বিকালবেলায় দর্শনার্থীরা শাপলা বিলে নৌকাভ্রমণে আসে শুনে আমরা দলবেঁধে ১৫ জন বন্ধু এসেছি। নৌকায় চড়ে শাপলা বিল ঘুরে খুব ভালো লেগেছে এবং উপভোগ করেছি নতুন আনন্দ। তিনি আরো বলেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে এখানে বসার ও পর্যটন টাওয়ার করা হয় এবং প্রশাসনের তদারকিতে নৌকার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে দিন দিন দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাবে।

নলবিলা ‘শাপলা বিল’ নৌকা নিয়ে বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থী জামশেদ বলেন, ‘বর্ষা থেকে শুরু করে প্রায় ৬-৮ মাস শাপলা বিলে প্রচুর পানি থাকে। এ সময় শাপলা ফুলে ভরে যায় বিলটি। এ সময় দর্শনার্থীরা দলবেঁধে ঘুরতে যায়। বিকালবেলায় শাপলা বিলে ঘুরতে খুব ভালো লেগেছে আমাদেরও। শাপলা বিল ছাড়াও দুপাশের পাহাড়ে ঘেরা মনোরম পরিবেশ আকৃষ্ট করেছে।

যাওয়ার উপযুক্ত সময় : জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

যাতায়াত : চট্টগ্রাম থেকে যেকোনো বাসে ১৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে চকরিয়া সরকারি কলেজ গেট ও কক্সবাজার থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় একই স্থানে নেমে শাপলা বিলে যাওয়া যায়। চকরিয়াসহ আশপাশের উপজেলার লোকজন প্রাইভেট গাড়ি না থাকলে চিরিংগা স্টেশন থেকে রিকশা, টমটম বা সিএনজি নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় নরবিলার নৌকার ঘাটে। ওখান থেকে ১-২ ঘণ্টার জন্য ২০০-২৫০ টাকায় নৌকা ভাড়া নিয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে শাপলা বিলে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads