• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ভ্রমণ

কেদারকণ্ঠ ট্রেকিং

  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০১৯

শাহ আমীর রাজন

 

 

যারা লাইফের ফার্স্ট স্নো ট্রেকিংয়ের কথা ভাবছেন তাদের জন্য কেদারকণ্ঠ একটা বেস্ট অপশন। আমাদের গ্রুপের সবার জন্যও তাই ছিল।

কেদারকণ্ঠের সৌন্দর্য নিয়ে আগেই শুনছিলাম। সাদা বরফ, নীল আকাশ আর মাইনাস রেঞ্জের টেম্পারেচার-সে এক রোমাঞ্চকর অবস্থা। আর রাতের পরিষ্কার আকাশের লাখ লাখ তারা আপনার এতটাই সঙ্গী হবে যে, মনে হবে তারা আপনার জন্যই, তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। পুরো ট্রেকেই আপনার জন্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছেই।

১২ হাজার ৫০০ ফিট উচ্চতার কেদারকণ্ঠ চোখ দিয়ে যতবার দেখেছি তত বেশি মুগ্ধ হয়েছি। বরফ-নীলিমার কথা এখনো চোখে ভাসে। রাতের হাজারো তারার আকাশ আর মাইনাস ৮-১০ ডিগ্রির তাপমাত্রা আর হাতে কফি, ভাবুন তো একবার।

যেভাবে যাবেন : (বাজেট ট্যুরের জন্য) কলকাতা থেকে ট্রেন ধরে চলে যেতে হবে উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেরাদুন। সময় লাগবে ৩০ ঘণ্টার মতো। অর্থাৎ আপনি কলকাতা থেকে যেদিন রাতে ট্রেনে উঠবেন দেরাদুন পৌঁছাবেন তার পরের দিনের পরের দিন সকালে।

দেরাদুন থেকে আপনাকে যেতে হবে সাংক্রি। সাংক্রি যাওয়ার জন্য দেরাদুন থেকে একটাই বাস, সকাল ৮টায়। সাংক্রি যাওয়ার এই রাস্তাটা অনেক অনেক সুন্দর। সাংক্রি ভিলেজটাই অলমোস্ট ২ হাজার মিটার ওপরে।

অত ওপর থেকে, পাহাড়ের গা ঘেঁষে আপনি যখন নিচের নদী-ঘরবাড়ি দেখবেন, তখন আসলেই শিহরিত হবেন। সাংক্রি পৌঁছাতে সময় লাগবে ৮-৯ ঘণ্টা। অর্থাৎ ওইদিন রাতে আপনি সাংক্রি পৌঁছালেন। পরের দিন থেকে আপনি ট্রেক শুরু করবেন। সাংক্রি পৌঁছে হোটেল-কটেজ ভাড়া নেবেন। আমরা কটেজে ছিলাম কারণ সাশ্রয়ী! কটেজ থেকেই পরের দিনের ট্রেকিংয়ের সরঞ্জাম ভাড়া নিতে পারবেন। গাইড, পোর্টার/খচ্চরও কটেজের মালিকের সঙ্গে কথা বললে পেয়ে যাবেন।

ট্রেকের প্রথম দিনে সাংক্রি থেকে কেদারকণ্ঠের উদ্দেশে রওনা হব। সাংক্রি থেকে কেদারকণ্ঠ মোটামুটি ৯ কিলোমিটার। পুরো পথটাই বরফাচ্ছন্ন। অনেকেই এই ট্রেকটা ৩-৪ দিনে করে। আমরা অবশ্য দুদিনেই শেষ করেছি। সে ক্ষেত্রে প্রথম দিনে আমাদের কভার করতে হয় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত, অর্থাৎ বেজক্যাম্প পর্যন্ত। সকাল সকাল কটেজে নাস্তা করেই বের হয়ে গেলাম। কটেজের মালিকের সঙ্গে কথা বলে গাইড, টেন্ট, স্যুট, স্টিক, ওয়াটারপ্রুফ জুতো, ম্যাট্রেস, স্লিপিং ব্যাগ যাবতীয় যা দরকার তা নিয়েই বের হলাম। আর ওইদিন দুপুরে আর রাতে খাবার হিসেবে কটেজ থেকেই রুটি-সবজি নিয়ে নিলাম। বেজক্যাম্প যেতে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে একটি লেকের অবস্থান। লেকের সৌন্দর্য বড়ই মনোমুগ্ধকর। লেকের সমস্ত পানিই বরফ হয়ে গেছে।

লেক পার হয়ে বেজক্যাম্প পৌঁছতে একটু বেগ পেতে হলো। এমনিতেই লাইফের প্রথম স্নো ট্রেক; তার ওপর সব খাড়া আর ভেজা স্লোপ। বিকাল ৪টা নাগাদ বেজক্যাম্পে পৌঁছালাম। মোটামুটি ৭ ঘণ্টা লাগল! বেজক্যাম্প পৌঁছে টেন্ট রেডি করলাম, হালকা নাস্তা করলাম, আর সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সময়টা কাটালাম। সন্ধ্যা রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে আকাশটা একটু উপভোগ করে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়লাম, পরের দিন কিনা আবার ভোরে ট্রেক শুরু হবে তাই। রাতে বেজক্যাম্পে প্রচুর ঠান্ডা। অলমোস্ট মাইনাস ১০ ডিগ্রি প্রায়। স্লিপিং ব্যাগের মধ্যেও অতগুলো স্যুট, সোয়েটার পরেও ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা।

ট্রেকের দ্বিতীয় দিনে ভোর ৪টায় গাইড আমাদের উঠিয়ে দেওয়ার পর সাড়ে ৪টার মধ্যেই ট্রেক শুরু করলাম। এক হাতে টর্চলাইট, আরেক হাতে স্টিক নিয়ে শক্ত বরফের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ৩ কিলোমিটার শুনে মনে হলো যে বেশ সহজেই সামিটে উঠে যাব। কারণ অলরেডি আগের দিন ৬ কিলোমিটার বেশ ভালোভাবেই পার করে আসছি। কিন্তু এই ৩ কিলোমিটার যে কি জিনিস! এত বড় বড় স্লোপ আর এত ডিস্টেন্সের। বারবার মনে হচ্ছিল এইতো চলে আসলাম এইতো চলে আসলাম কিন্তু কোথায় কি? অলরেডি আমাদের গ্রুপের দুজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে। ওরা কোনোমতে চার হাত-পা ব্যবহার করে, ইনহেলারের সহায়তা নিয়ে, অবশেষে সামিট দেখার সুযোগ পেল!

সামিট থেকে ব্যাক করার সময় বেজক্যাম্প হয়ে সরাসরি সাংক্রির কটেজে চলে এলাম। পুরো ৯ কিলোমিটার নামতে সময় লাগল মোটামুটি ৬ ঘণ্টা। পুরা পথটাই স্লাইড খেতে খেতে বেশ সুন্দরভাবে নামা যায়।

দ্বিতীয় দিনের খাবার বলতে আমাদের ছিল চকোলেট, বিস্কুট, বাদাম, ফ্রুটস, খেজুর-এ রকম কিছু শুকনা খাবার যা আগে থেকেই ব্যাগে নিয়েছিলাম।

 

খরচ : (রুপিতে)

কলকাতা-দেরাদুন (দুন এক্সপ্রেস) ১৪০০ রুপি/প্রতি জন

দেরাদুন-সাংক্রি ৩৩০/প্রতি জন

কটেজ ভাড়া (রাতের খাবারসহ)- ৪৫০/ প্রতি জন

 

আরো লাগবে :

জুতা-১০০/ দিনপ্রতি, জ্যাকেট-৫০/ দিনপ্রতি, স্লিপিং ব্যাগ-২০০/ দিনপ্রতি, টেন্ট-১২০০/ দিনপ্রতি, ম্যাট্রেস-১৫০/ দিনপ্রতি, গাইড-৮০০/ দিনপ্রতি, স্টিক- ২০/ দিনপ্রতি, ক্যাম্প এনট্রি- ৭০০, সাংক্রি ব্যাক করার পরে পুনরায় কটেজ ভাড়া (রাতের খাবারসহ)- ৪৫০/ প্রতি জন, সাংক্রি-দেরাদুন ৩৫০/ প্রতি জন, দেরাদুন-কলকাতা ১৪০০/ প্রতি জন।

অতএব মোটামুটি পার পারসন বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকায় বেশ ভালোভাবেই আপনি এই ট্র্যাকটা করতে পারবেন।

কলকাতা-দেরাদুনের টিকিট আগে থেকেই কেটে রাখুন, এটাতে ফরেন কোটাও নেই যে গিয়ে টিকিট কাটতে পারবেন। আমরা টিকিট পাইনি বলে আমাদের দুদিন কলকাতা থাকতে হয়েছে সাথে টাকাও বেশি লেগেছে।

দেরাদুন থেকে সাংক্রি যাওয়ার বাস একটাই এবং তা সকাল ৮টায়। এটা খেয়াল রাখা দরকার। অবশ্য এটা মিস হলে মোরির বাসে উঠতে পারেন। তারপর ওখান থেকে সাংক্রি গেলেন। মোরি থেকে সাংক্রি ২৩ কিলোমিটার। কারো হাইটে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে আগে থেকে ইনহেলার নিয়ে যেতে পারেন। এই ট্রেকটা করার ভালো সময় নভেম্বর-মে, এরপর বরফ থাকে না।

ঘুরতে গিয়ে অবশ্যই আপনার ব্যবহারকৃত উচ্ছিষ্ট ফেলে আসবেন না, সুন্দর পরিবেশ সব সময় আরো সুন্দর করে রাখার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads