• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ঘুরে আসুন বিজ্ঞান জাদুঘর

সংগ‍ৃহীত ছবি

ভ্রমণ

ঘুরে আসুন বিজ্ঞান জাদুঘর

  • প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯

শাহ আমীর রাজন

 

 

সাধারণত যেখানে অদ্ভুত বা কৌতূহলজাগানো জিনিস সংগ্রহ করে রাখা হয়, সেটাকে জাদুঘর বলে। তাই বলে কোথাও এমন জিনিস পূর্ণ করে গুদামের মতো রাখলে কিন্তু চলবে না। অবশ্যই এমনভাবে রাখতে হবে যেন সবাই দেখতে পারে এবং জ্ঞানার্জন করতে পারে। বর্তমানে অনেক রকমের জাদুঘর দেখা যায় এই রহস্যময় পৃথিবীতে। মানুষও বেশ কৌতূহল নিয়ে ওইসব ঘুরেফিরে দেখে। এই দিক থেকে বাংলাদেশ ও পিছিয়ে নেই। আমাদেরও বেশকিছু জাদুঘর রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর’।

১৯৬৫ সালের ২৬ এপ্রিল পাকিস্তান সরকারের এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ঢাকায় এর যাত্রা শুরু হয়। সেই বছর সেপ্টেম্বরে এটি গণগ্রন্থাগার ভবনে কাজ শুরু করে। ১৯৭০ সালে এটিকে চামেলীবাগে নেওয়া হয় এবং যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১-এর মে মাসে এটিকে ধানমন্ডির ১ নং সড়কে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসে এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে আবার এটিকে ধানমন্ডি ৬ নং সড়কে এবং ১৯৮০-তে কাকরাইল মসজিদের সামনে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে ১৯৮১ সালে ঢাকার আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগরে পাঁচ একর জমি বরাদ্দের মাধ্যমে এটির নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়।

বর্তমানে এটিকে বেশ সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তি। ‘বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন’ স্লোগানে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনীবস্তুর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করা এবং নবীন ও অপেশাদার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনীমূলক কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এই জাদুঘরটির কার্যক্রম চলছে।

মহাকাশ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র বস্তু পর্যন্ত, প্রায় সবকিছুরই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে এখানে। পর্যবেক্ষন করা যাচ্ছে অনেক মূল্যবান বস্তুকণা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন তত্ত্বের ব্যবহারিক বিশেষণের। মনে হতে পারে আগে এখানে এলে হয়তো বিজ্ঞানের এই সূত্রটা আরো ভালো বুঝতাম, ওই জিনিসটা সম্পর্কে আরো ভালো জানতে পারতাম, ওই জিনিসটা আরো ভালো মনে থাকতো।

জাদুঘরে প্রথমেই প্রবেশদ্বারের পাশ থেকে প্রবেশ টিকিট নিয়ে নেওয়া যাক। সঙ্গে ভেতরে ৪ডি সিনেমা আছে যার জন্য ৪০ টাকা দিয়ে আরেকটি টিকিট নিয়ে নিলাম। ঢুকতেই জাদুঘরের প্রাঙ্গণে চোখে পড়ল একটি ডাইনোসরের ভাস্কর্য, যা দেখে অনেক বাচ্চাই হা করে তাকিয়ে থাকে। আরেকটু সামনে গেলেই দেখা যায় একটি পুরাতন যুদ্ধবিমান, ঘাসফড়িং, পেন্ডুলামসহ বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীবস্তু। এটিকে ‘সায়েন্স পার্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে ছোট বাচ্ছাদের কাছে এই অংশটি খেলাধুলা করার নতুন স্থান।

জাদুঘরের মূল ভবনে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল একটি গাড়ির কাঠামো। এটিকে এমনভাবে রাখা হয়েছে যেনো ভেতরে কী আছে তা দেখা যায়। আর উপরের দিকে তাকালে দেখা যায় সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ সুন্দরভাবে ঝুলানো আছে। পাশেই রয়েছে ক্যান্টিন। ক্যান্টিনের পাশে খুব সুন্দর কিছু মাছ রাখা আছে অ্যাকুয়ারিয়ামে।

নিচতলায় নির্দেশনা চিহ্নের মাধ্যমে দেখানো আছে কোন গ্যালারি কোনদিকে। এখানে জাদুঘরটিকে ৮টি গ্যালারিতে ভাগ করে সাজানো হয়েছে।

ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারিতে রয়েছে ভাসমান বাগানের একটি মডেল, যেটির প্লেট চুম্বকের মাধ্যমে এমনভাবে লাগানো আছে যে মনে হবে বাগানটি ভেসে আছে। এরপর আপাত বিরুদ্ধ মধ্যাকর্ষণ বিশেষণের জন্য একটি কাঠের মডেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের মডেল, বৈদ্যুতিক ঘন্টা, ভরবেগের সূত্রের প্রমাণ, নিউটন মামার ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর প্রমাণ, কেন্দ্রাতিক বল, বয়েলের সূত্র, ভরের ধাঁধা।

রয়েছে মিরর ডাইনিং, এতে বসলে মনে হবে আপনি নিজেই পাঁচজনের মতো গোল হয়ে একটি ডাইনিংয়ে বসে আছেন। আরেকটি মিররের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হবে আপনার প্রতিবিম্বটি উল্টাদিকে হাঁটছে। রয়েছে ইনফিনিটি মিরর। এর ভেতরে তাকালে মনে হবে নিচে/উপরে অনেক খাঁদ। এটি আয়নার মাধ্যমে করা হয়েছে। যেটা বাস্তব জীবনে কিছু সেলুনে গেলে দেখা যায়। আবার একটা মিররের সামনে দাঁড়ালে একপাশে আপনার শরীর দেখা যাবে কিন্তু মাথা হবে অন্যপাশের মানুষটির। এরপর গাউসীয় ফাংশনের সম্ভাব্যতা বক্ররেখা বিশ্লেষণ। টরসিলের পরীক্ষা। রয়েছে এনামোরফোসেস, সিনেমাস্কোপ, নিউটনের বর্ণচক্র, বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও ড. কুদরত-এ-খুদার ব্যবহার্য জিনিসসহ আরো অনেক কিছু। যা দেখলে একজন পদার্থ বিজ্ঞানপ্রেমী অবশ্যই বেশ খুশি হবে।

এরপর যাওয়া যাক দ্বিতীয় গ্যালারি, শিল্প গ্যালারিতে। এখানে জানা যাবে শিল্পের একাল-সেকাল। টারবাইন প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, পুরাতন গ্রামোফোন, বিদ্যুৎ চালিত গ্রামোফোন, ভিডিকন ক্যামেরা, বিটিভির ব্যবহূত প্রথম দিকের ক্যামেরা, বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন কাঠামোর কম্পোজ মেশিন-মুদ্রণ মেশিন, নানান ধরনের কপিকলের বিশেষণ, ১৯৭২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেওয়া বলাকা বিমানের জেট ইঞ্জিন, ১৯৪১ সালে তৈরিকৃত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহূত একটি বিমানের ইঞ্জিন। রয়েছে সাসপেনশন ব্রিজ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মডেল। এছাড়া কয়েকটি কারখানার মডেল, বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন, ব্যারোগ্রাফসহ অনেক কিছু রয়েছে এই গ্যলারিতে।

এবার যাওয়া যাক ৩ নম্বর গ্যালারি, অর্থাৎ জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে। এই গ্যলারিতে ঢুকতেই চোখে পড়লো বিশাল এক নীল তিমির কঙ্কাল। যার দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় বঙ্গোপসাগরে এই তিমিটি পাওয়া যায়। এই গ্যালারি আসলেই ভালো লাগার মত। এখানে রয়েছে মানুষের কংকাল, মস্তিষ্কের মডেল, হূৎপিণ্ডের মডেল, আরএনএ-ডিএনএ মডেল, দাঁতের মডেল, পরিপাকতন্ত্রের মডেল, ডাইনোসরের হাড়, করাত মাছের করাত, মহিষের মাথা, কুমিরের মাথা, মায়া হরিণের মাথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের ব্যবহূত বিভিন্ন জিনিস, বিভিন্ন জীবাশ্ম, লালমাই পাহাড়ে প্রাপ্ত পুরোনো গাছের জীবাশ্ম, ইত্যাদি।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো সংরক্ষণ করা কয়েক মাসের শিশু ভ্রূণ। সংযুক্ত যমজ শিশু, ১৭, ১৯, ২২, ২৮, ৩২ সপ্তাহের শিশুর দেখা মিলবে এই গ্যালারিতে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী, স্থলবাগের প্রাণী, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর অবয়বের সংরক্ষণ রয়েছে এই গ্যালারিতে। এখানে কিছু মূল্যবান ধাতুও রাখা আছে। জানি না এগুলো কেনো এই গ্যালারিতে রাখা হয়েছে। হয়তো নিরাপত্তার স্বার্থে। এখানে শিল্পী সাইফুল্লাহ নবীনের তৈরি ‘ঘাতক ব্যাধি এইডস’ ভাস্কর্যটি রয়েছে।

এর পাশেই পরবর্তী গ্যালারি, শিশু বিজ্ঞান গ্যালারি। এই গ্যালারি খুব ভালো করে দেখা হয়নি পুরোটা। তবে এখানে শিশুদের জন্য বেশকিছু চমৎকার প্রদর্শনীবস্তু ও মডেল রয়েছে।

এবার কিছুক্ষণ মহাকাশে ঘুরে আসা যাক। মহাকাশে ঘোরা মানে কিন্তু মহাকাশে যাওয়া নয়। মহাকাশ সম্পর্কে কিছু জানা আরকি! এবার তাহলে আমাদের পঞ্চম গ্যালারি, মহাকাশ বিজ্ঞান গ্যালারি।

এখানে প্রথমেই রয়েছে মহাশূন্যে পৃথিবীর একটি মডেল। ঢুকতেই সামনে রয়েছে তিনটি স্পেসসুট, যার মাথা নেই। ওটা আসলে ছবি তোলার জন্য দেওয়া। এই সুটের পেছনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে মনে হবে আপনি সুটটি পরে আছেন। রয়েছে সাউন্ড ডিশ, ল্যান্ডফোন- যার মাধ্যমে কথা বলা যায়, ব্যালেন্স টেস্টিং, ম্যাজিক কেটলি, রিফ্যাকটিং টেলিস্কোপ, রিফ্ল্যাকটিং টেলিস্কোপ, স্পেস সিকনেস অনুভব করার মডেল, গ্রাভিটি ওয়েল, চাঁদের মানচিত্র, মহাকাশে চাষ গবেষণার মডেল (অ্যাস্ট্রোকালচার) সহ আরো অনেক মজার জিনিস। এছাড়া লেজার শো, মিশন কন্ট্রোল, নিউটনের সর্বজনীন মহাকর্ষ ও আইনস্টাইনের থিউরি অব রিলেটিভিটির প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয় এই গ্যালারিতে। প্লাজমা টিউবে হাত বুলানো কিন্তু মিস করা যাবে না। এই গ্যালারিতে পানি দিয়ে একটি সাইক্লোনের মডেল বানানো আছে। এছাড়া কয়েকটি মজার জিনিস আছে এই গ্যালারিতে, যা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে উপভোগ করার সুযোগ হয়নি। তবে শিগগির মেরামত কাজ সম্পন্ন হবে বলে জেনেছি। মজার জিনিসগুলো হলো ভিআর সিমুলেটর গেম, স্পেসস্যুট, ফ্লাইট সিমুলেটর। শিগগির এগুলো আবার আগের মতো সচল হবে বলে আশাবাদী।

৬ নম্বর গ্যালারি, ইনোভেশন গ্যালারি। মূলত বিজ্ঞান জাদুঘরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্ভাবিত সব নতুন জিনিস এই গ্যালারিতে রাখা হয়েছে।

৭ নম্বর গ্যালারি হলো তথ্যপ্রযুক্তি গ্যালারি। এই গ্যালারিতে ঢুকলে বোঝা যাবে প্রযুক্তির ধারা। প্রযুক্তি আসলে কীভাবে ধাপে ধাপে উন্নত হয়েছে আর এখনো হচ্ছে।

এখানে অ্যানালগ কম্পিউটার রয়েছে। অ্যানালগ কম্পিউটারে বাইনারি সংকেতের পরিবর্তে অ্যানালগ বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ, ইত্যাদি রয়েছে এই গ্যালারিতে। রয়েছে ইন্টারঅ্যাকটিভ করা স্মার্ট ফ্লোর। এটি মূলত একটি গেম। এছাড়া একটি কম্পিউটার রয়েছে যেটির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কুইজে অংশগ্রহণ করা যায়। এবং বিজয়ীর জন্য থাকে পুরস্কার।

এবার ৮ নম্বর এবং শেষ গ্যালারি, মজার বিজ্ঞান গ্যালারি। এই গ্যালারিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন মজার মজার প্রয়োগ দেখানো আছে, যা যেকোনো ব্যক্তিকে আনন্দিত করবে এবং বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে বাধ্য করবে। আসলে বিজ্ঞান জিনিসটাই ভালোবাসার, মজার। এটা মূলত ভৌতবিজ্ঞান গ্যালারির অংশ। এই গ্যালারির কিছুটা ভৌতবিজ্ঞানে বলে ফেলেছি। আর না বলি। তাহলে আর মজা কীসে! নিজে গিয়েই দেখে আসুন। অবশ্যই ভালো লাগবে। সঙ্গে ছোটদের নিতে ভুলবেন না কিন্তু।

সব গ্যালারি দেখার পর এবার আকাশ পর্যবেক্ষণ করা যাক। সন্ধ্যা নেমে এলে চলে গেলাম ছাদে। সেখানে দুটি টেলিস্কোপে চাঁদ ও শুক্র দেখানো হচ্ছে। যদিও আরো অনেক কিছুই দেখানো হয় এর মাধ্যমে। কিন্তু ওইদিন শুধু চাঁদটাই ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল।

যা হোক, ১০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। আমি লাইনের পেছনে দাঁড়িয়েছি ইচ্ছা করেই, যেনো বেশিক্ষণ দেখার সুযোগ পাই। তাই কেউ এলেই আমার সামনে দিয়ে দিই। অতঃপর দেখলাম। অপরূপ চাঁদ। এর মধ্যে অনেকগুলো খাঁদ রয়েছে। এরপর দেখলাম শুক্র, যেটা শুধু একটা আলোক বিন্দুর মতো দেখা যাচ্ছিল। কেউ না থাকায় আমি আরেকবার চাঁদ দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। এবার দায়িত্বরত ভাইয়াটা আমার নিজ হাতে টেলিস্কোপ ঘুরিয়ে চাঁদ দেখার সুযোগ দিলেন, যে সুযোগটা আসলে দেওয়া হয় না কাউকে।

নিচে এসে  সিনেমা দেখলাম। এখান থেকে বেরুলেই পাশে রয়েছে ভূমিকম্প সিমুলেটর। এটায় দাঁড়ালে সর্বোচ্চ ৮.৪ মাত্রার ভূমিকম্পের স্বাদ পাবেন।

এবার জাদুঘরকে বিদায় জানানোর পালা। যদিও যেতে ইচ্ছা করছে না তবু যে বিদায় নিতে হবে!

জাদুঘর থেকে বের হতেই পাঁচটি বাস দেখতে পেলাম। জানতে পারলাম এগুলো ‘ভ্রাম্যমাণ মিউজুবাস’, যার মধ্যে তিনটি মুভিবাস ও দুটি অবজারভেটরি বাস। এগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে বিজ্ঞান জাদুঘরের ভিশন ও মিশন সম্পন্ন করতে এই বাসগুলো বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচিন্তা ও বিজ্ঞানের কঠিন সমস্যাগুলো সহজভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে ও সহজভাবে বুঝতে সাহায্য করছে।

এই বাসগুলোর দুটি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। একটিতে মহাকাশ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে আরেকটিতে ৪ডি সিনেমা। এই সিনেমাটা অনেক উন্নত। এই বাসের বাইরে বিশাল এক মনিটরে চলছিল ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। মুভি দেখার পর ভাষণ পুরোটা দেখে এবং শুনে এবার বাসায় ফেরার পালা। ভালো থেকো বিজ্ঞান জাদুঘর।

জাদুঘর আসলেই ভেলকি আর মায়ায় ঘেরা। অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি, অনেক কিছু জেনেছি।

ভালো লাগার জিনিস কী ছিল, সেই তালিকা করতে গেলে বেশ সময় লাগবে হয়তো। তবে মহাকাশ গ্যালারি থেকে শুরু করে ভৌতবিজ্ঞান গ্যালারি সবই ছিলো অসাধারণ। জীববিজ্ঞানপ্রেমী না হওয়ায় হয়তো জীববিজ্ঞান গ্যালারি কিছুটা কম ভালো লেগেছে। তবে এই গ্যালারিও ছিলো অসাধারণ এবং জ্ঞানের ভান্ডার। শিল্প গ্যালারি, উদ্ভাবনী গ্যালারি বা শিশু গ্যালারি কম কিসে। প্রত্যেকটি গ্যালারি খুব সুন্দরভাবে সাজানো এবং সমৃদ্ধ।

টেলিস্কোপে চাঁদ দেখাটা অবশ্যই ভোলার মতো নয়। তাও আবার নিজ হাতে টেলিস্কোপ ছুঁয়ে চাঁদ খুঁজে বের করছি! ‘মিউজুবাস’ এই জাদুঘরের এক যুগোপযোগী প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রত্যেক গ্যালারিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আছেন। তারা খুবই আন্তরিক। কিছু জিনিস ধরতে মানা আছে, ওইগুলো ধরা যাবেনা। কিছু জিনিস চালিয়ে দেখা যায়, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দায়িত্বরত কর্মকর্তার অনুমতি নেবেন। কোনো জিনিস নষ্ট করা উচিত নয়। ছবি তুলতে পারবেন সবকিছুর। তবে কিছু স্থানে ভিডিও করতে বারণ আছে। অবশ্যই সেই নির্দেশনাগুলো মানবেন।

খরচ বলতে প্রবেশে ১০ টাকা, ৪ডি সিনেমা ৪০ টাকা, আকাশ পর্যবেক্ষণে ১০ টাকা। এর বাইরে সবকিছুই ফ্রি। ভাগ্য ভালো হলে মিউজুবাসের দেখা পেতে পারেন। ওইগুলোও ফ্রি।

পরিদর্শনের সময় : রোববার থেকে বুধবার- সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। শুক্রবার- দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা। শনিবার- সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। গ্যালারিসমূহ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে।

টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ পর্যবেক্ষণ : প্রতি শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যায় আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে টেলিস্কোপের সাহায্যে চাঁদ, শুক্রগ্রহ, মঙ্গলগ্রহ, শনিগ্রহ, বৃহস্পতিগ্রহ, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, রিংনেবুলা, সেভেন সিস্টার ও তারার ঝাঁক পর্যবেক্ষণ করা যায়।

জাদুঘরের কোনো অংশ নোংরা মনে হয়নি। তাই কোথাও নোংরা করবেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads