• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
চুক্তির সব চাল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

চুক্তির সব চাল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০২১

মহামারীর কারণে বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে মজুত বাড়াতে সরকার গত চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বেশ কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে এসেছে চুক্তির অর্ধেকের মতো। বাকিগুলো কবে আসবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

সরকারের কাছে বর্তমানে চালের মজুত পাঁচ লাখ টনের কম। মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই সময় তা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়াসহ  নানা সমস্যা ও কিছু নিয়মের জটিলতায় বিদেশ থেকে চাল আমদানির টার্গেট পূরণ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। 

গত বছর বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায়, সরকারিভাবে আমদানির মাধ্যমে চালের মজুত বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর তিন লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে বাজারে দাম ও সরকারের মজুত পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যাওয়ায়, কয়েক দফায় মোট ১৩ লাখ টন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয় সাড়ে ১০ লাখ টনের।  গত সপ্তাহ (২০ মে) পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ২২৪ টন চাল এসেছে দেশে। কার্যাদেশ দেওয়া সাড়ে ১০ লাখ টনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ৯ লাখ টন। এরমধ্যে এসেছে চার লাখ ৯৮ হাজার ৬০৯ টন। মিয়ানমারের এক লাখ টনের মধ্যে এসেছে মাত্র ২০ হাজার ৬১৫ টন। শুধুমাত্র ভিয়েতনাম থেকে চুক্তির ৫০ হাজার টন চালের শতভাগ এসেছে।

কার্যাদেশের চাল আসতে কেন এতো দেরি হচ্ছে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, চুক্তি হয়েছে তিন দেশের সঙ্গে। ভিয়েতনাম থেকে চাল পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। শতভাগ পেয়েছি। তবে সমস্যা হচ্ছে ভারত ও মিয়ানমারের চাল নিয়ে। ভারতকে সবচেয়ে বেশি চালের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। চাল এখনো পাচ্ছি। তবে করোনার কারণে আসা-যাওয়ার সমস্যায় কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে। তার চেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে, কলকাতা থেকে বড় জাহাজে চাল আনা যাচ্ছে না। ওরা (ভারত) জানিয়েছে, কলকাতা বন্দরে নাব্যতা না থাকায় বড় জাহাজ ভিড়ছে না। তাই ছোট ছোট জাহাজে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টন করে চাল পাঠাচ্ছে। এ করণে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।

ভারত থেকে চাল পরিবহনে সমস্যার কারণে চলতি মাসে প্রথমবারের মতো ট্রেনে করে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রেলপথে কলকাতা ও ছত্তিসগড় থেকে ট্রেনবোঝাই করে বেনাপোল ও দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে এই চাল প্রবেশ করবে। রেলপথে এটিই হবে চালের প্রথম চালান। চাল আমদানির নানা জটিলতায় এর আগে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে কয়েক দফায় চাল আমদানির বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকার। তারপরেও যেন চুয়ে চুয়েই আসছে চাল। কাটছে না অনিশ্চয়তা। এরমধ্যে দেশে চুক্তির পুরো চাল পাওয়া যাবে কি-না সেটা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বৈদেশিক সংগ্রহ) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, খাদ্য সংকটে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশই ভারত থেকে চাল কেনার চেষ্টা করছে। এতে করে ভারতে চালের দাম বেড়ে গিয়েছে। ফলে আমাদের চাল দেওয়ার জন্য যারা আগে চুক্তি করেছিল, তারা আর ওই দামে চাল দিতে পারছে না। যাদের আগের মজুত ছিল তারাই দিচ্ছে। কিন্তু ভারতের বাজার চাল সংগ্রহ করে দিতে চেয়েছিল, তারা দিচ্ছে না।

এছাড়া ভারতে জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট খরচও অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে ভারত থেকে চুক্তির পুরো চাল পাওয়া এখনো অনিশ্চিত। মিয়ানমারের সামরিক সরকার খুব একটা সহযোগিতা করছে না এ বিষয়ে।  তবে এই কর্মকর্তা মনে করেন, এখন আমদানি চালের প্রয়োজন খুব একটা নেই। বিদেশ থেকে এখন আর চাল না পেলেও সমস্যা হবে না। আমরা বোরো থেকে যথেষ্ট পরিমাণে চাল সংগ্রহ করতে পারব।

এদিকে চলমান বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছে থেকে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান ও মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। যদিও তার কতটুকু সংগ্রহ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ গত বছর থেকে করোনা মহামারীতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিতরণ বাড়লেও সেই অনুযায়ী সরকার চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। গত আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগও পূরণ হয়নি। বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় বোরো মৌসুমেও ধান-চাল কিনতে পারেনি। তাই এ বছর ধান-চাল সংগ্রহে গত বছরের মতো বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েই গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত এক যুগের বেশি সময়ের তুলনায় সরকারের হাতে চালের মজুত কম। আর এ সময় সরকার আমদানি করতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। দেশের বাজার থেকে বেশি পরিমাণ চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে। তার একটি নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়তে পারে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, চালের দাম কমানোর ভালো সমাধান হলো, আগে-ভাগে সরকারি পর্যায়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানি। কিন্তু সরকার সেটা করতে পারেনি। এখন মজুত বাড়াতে দেশের অভ্যন্তরে বেশি বেশি চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে। তবে সে পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে সেটা বড় প্রশ্ন।

কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, গত দুই মৌসুমে গুদামে চালের মজুত না থাকায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এখনো অবস্থার উন্নতি হয়নি। বোরো মৌসুমেও সিন্ডিকেট অ্যাক্টিভ (তৎপর) থাকবে। তারা চাইবে সরকার বেকায়দায় থাকুক। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকুক। কারণ বিদেশ থেকে বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী চাল এনেছে। তারা কখনো লোকসান চাইবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads