• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
৯ মাস পর ফের চীনে যাচ্ছে কাঁকড়া

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

৯ মাস পর ফের চীনে যাচ্ছে কাঁকড়া

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০২১

বাংলাদেশের কাঁকড়ার সবচেয়ে বড় বাজার চীনে প্রায় নয় মাস বন্ধ থাকার পর আবারো রপ্তানি শুরু হয়েছে।

পণ্যের মান নিশ্চিত করা ও সনদ জালিয়াতি ঠেকানোসহ চীনের দেওয়া বেশ কিছু শর্ত পূরণের পর গত ২ জুন থেকে নতুন করে রপ্তানি চলছে বলে জানান মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, নতুন করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে চীন তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে কাঁকড়া ও কুচিয়ার ৩৪টি চালান চীনে পাঠানো হয়েছে।

নিয়াজ জানান, রপ্তানি করা কাঁকড়া ও কুচিয়ায় সিসা ও ক্যাডমিয়াম ধরা পড়ার পর ২০২০ সালের জুনে চীন কিছু শর্ত আরোপ করে। তখন মৎস্য অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট ইস্যু করার মাধ্যমে রপ্তানি সচল করা হয়। পরে সেপ্টেম্বরে এক রপ্তানিকারক জাল সার্টিফিকেট দিয়ে ধরা পড়ার পর রপ্তানি আবার বন্ধ হয়। বিএম ট্রেডার্সকে এজন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

চীনের সব শর্ত পূরণ করে নতুন করে রপ্তানি শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার সাভার, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মৎস্য অধিদপ্তরের তিনটি ল্যাবরেটরিতে নতুন প্রযুক্তির স্থাপনের মাধ্যমে ১২/১৩টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখন রপ্তানির সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। আগে চীনের এ ধরনের টেস্ট রিকোয়ারমেন্ট ছিল না। যার ফলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাড়াই যে কেউ চায়নায় কাঁকড়া কুচিয়া রপ্তানি করতে পারতেন। তাদের নতুন শর্ত অনুযায়ী, ইংরেজি ও চীনা ভাষায় এখন সার্টিফিকেট দিতে হচ্ছে। ২০২০ সালের শুরুতে কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকেই চীনে কাঁকড়া রপ্তানির বাজারে ধস নামে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হলেও পরের বছর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা ১২ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। হংকং, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, জাপান, মালয়েশিয়াসহ আরও কিছু দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হলেও মূল বাজার চীন। চীনের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাবে সামগ্রিক রপ্তানি ৫০ শতাংশ কমে যায়। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন করিব জানান, মূলত দুই কারণে গত বছর কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল চীন। দেশটি কিছু ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রতিবেদন চেয়েছিল। তখন ওইসব টেস্টের ল্যাব বাংলাদেশে ছিল না। দ্বিতীয়ত কিছু ‘অসাধু ব্যবসায়ী’ জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে রপ্তানি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। এদিকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চাঁদপুরসহ কাঁকড়া চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চগুলোতে খামারিরা ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েন। এরই মধ্যে অনেকেই এই চাষাবাদ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। বাগেরহাট থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রি করতেন বিপ্লব কুমার। চীনের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজার পড়ে গেছে বলে জানান তিনি। বিপ্লব বলেন, আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি কাঁকড়া ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় কেনাবেচা হত। এখন সেটা ৫৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কাঁকড়া সংগ্রহ ও চাষাবাদেও ভাটা পড়েছে। ঢাকার উত্তরায় কাঁকড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নয়ন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক কার্তিক রায় বলেন, এক দিকে কোভিড, আরেক দিকে চীনের বাজার বন্ধ। এসব কারণে ব্যবসা সংকুচিত হয়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, চীনের পক্ষ থেকে কিছু সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছিল। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে এখন আর রপ্তানিতে বাধা নেই। যে কোনো কোম্পানি কমপ্লায়েন্স অর্জন করলে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি করতে পারবে। যারা এরই মধ্যে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে তারাও নতুন করে উৎপাদনে যুক্ত হতে পারবেন, বলেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads