• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

আমদানি-রফতানি

গতি ফিরেছে চট্টগ্রাম বন্দরে

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১৩ আগস্ট ২০২১

মহামারির প্রকোপ কমে আসা এবং টিকার কারণে গত জুন-জুলাইয়ের দিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় জীবনযাত্রা সচল হতে শুরু করে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এসব দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট খুলে দেওয়ায় বিভিন্ন পণ্যের বিশাল চাহিদা তৈরির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রচুর রপ্তানি পণ্যের ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। কিন্তু কন্টেইনারবাহী জাহাজ সংকট, জাহাজের ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধি, লকডাউনে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ কন্টেইনার জটসহ নানা সমস্যায় চিন্তিত হয়ে পড়েন রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। একই কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ে আমদানিতেও। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেই পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট কমে যাওয়ায় ২ থেকে ৩ দিন ধরে আমদানি-রপ্তানিতে গতি সঞ্চার হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনার জট দূর করার পাশাপাশি জেটিতে জাহাজ ভিড়তে সময়ক্ষেপণ রোধে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে আগে যেখানে একটি জাহাজকে পণ্য খালাসের জন্য ৪ থেকে ৫ দিন অপেক্ষা করতে হতো বর্তমানে তা আর হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই স্বাভাবিক। আগের তুলনায় অনেক সহজেই কন্টেইনার অপারেশন হচ্ছে।’

বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনার জট দূর করতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ছুটির দিনগুলোতেও কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়া হয় এই লক্ষ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির প্রতি আহ্বান জানান। গত সোমবার (৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত চিঠিতে পণ্যের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গতিশীল ও স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, ফ্রোজেন ফুডের এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনার কার্গোসহ সকল ধরনের আমদানি পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নিতে অনুরোধ করা হয়। এতে ইতিবাচক সাড়া মেলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে। তারা বন্দরের জট এড়াতে আমদানিকারকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার তাগিদ দেন। চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি ডিপো সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ এবং ঈদের ছুটির পর প্রায় সব শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। তা সত্ত্বেও জুলাই মাসে রেকর্ড পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়। সূত্র বলছে, জুলাই মাসের প্রথম ২৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৮ হাজার ২৬৪ একক পণ্যবাহী কনটেইনার রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি ডিপোতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মনোনীত কোম্পানির কাছে ১২ হাজার ৯৭৯ একক পণ্যবাহী কনটেইনার বুঝিয়ে দিয়েছে রপ্তানিকারকেরা। আবার ডিপোর বাইরে ক্রেতাদের মনোনীত কোম্পানির হাতে বুঝিয়ে দিতে অপেক্ষায় আছে রপ্তানি পণ্যবাহী অসংখ্য কাভার্ড ভ্যান। ফলে আগস্ট শেষে রপ্তানি আয় নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

রপ্তানিকারকরা জানান, গত বছর করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রচুর ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়। পরে ধীরে ধীরে সেগুলো রপ্তানি হয়। চলতি বছর সে ধরনের  সমস্যা তৈরি হয়নি। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা জানান, বিদায়ী (২০২০-২১) অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছে ৮১ শতাংশ বা ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলার। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী কনটেইনারের সিংহভাগই তৈরি পোশাকের। পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বাড়লে পাল্লা দিয়ে পোশাক রপ্তানিও বাড়ে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৭ ক্যাটাগরির ১০৪টি যন্ত্রের অর্ধেক বন্দরের বহরে যুক্ত হবে চলতি বছরেই। এছাড়া ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বাকি যন্ত্রপাতি আসবে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে। এছাড়া ১১টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৪টি রিচ স্টেকার, ১০০ মেট্রিক টন ক্ষমতার মোবাইল ক্রেন, ফর্কলিস্ট ট্রাক, স্ট্র্যাডাল ক্যারিয়ার, লগ হ্যান্ডলারের মতো ভারি যন্ত্রপাতিও আনা হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি বহরে যুক্ত হলে বন্দর বছরে ৪০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতায় পৌঁছাতে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, বলেন, এসব যন্ত্রপাতি কেনা হলে বন্দরের কাজের গতি আরো বাড়বে। সাধারণ ক্রেন দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৫টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যায়। কিন্তু গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে হ্যান্ডলিং করা যায় ৩০টিরও বেশি। তাই বর্তমানে যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে, এগুলো বহরে যুক্ত হলে বন্দরের বছরের হ্যান্ডলিং দক্ষতা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads