• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
রেকর্ড রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

রেকর্ড রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০২২

স্বাধীনতার ৫০ বছরে রপ্তানি আয়ের রেকর্ড গড়ার পথে বাংলাদেশ। কারণ চলতি অর্থ বছরে ৫১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে সরকার। ইতোমধ্যে গত ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের হাতছানি দেখা দিয়েছে। কারণ চলতি অর্থ বছর শেষ হতে আরো তিন মাস বাকি। এই তিন মাসের মধ্যে আরো ১২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।

তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরের গত ৯ মাসেই ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্জিত হয়েছে। তাই বছর শেষে পূরণ হবে লক্ষ্যমাত্রা। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরে (২০২১-২২) ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে আয় করা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা খাত  থেকে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। এছাড়া আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন রপ্তানির আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত অর্থ বছরে (২০২০-২১) দেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। পরের মাস আগস্টে সেটি দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। এর পর  সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে রপ্তানি। ইতোমধ্যেই  চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে বেশ কয়েকটি মাইলফলক অর্জন করেছে। একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছেল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে। মার্চ মাসে এসেছে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়।

চলতি অর্থ বছরের রপ্তানি আয়ের মাসিক গড় ৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। করোনা মহামারি মধ্যেও মাসিক গড় আয় রপ্তানি হয়েছে। আর এ অর্থ বছরের বাকি আরো দুই মাস মে-জুন যদি এই গড় আয় অর্জন করা যায় তাহলে লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার আয় অর্জন করা সম্ভব হবে। তাতে কোনো সমস্যা থাকবে না বলে রপ্তানি বিশেষজ্ঞরা জানান।

তারা জানান, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক শিল্প খাত  থেকে। তাই এ খাতের রপ্তানি আয়ের অবস্থা ভালো হলে সার্বিক রপ্তানি ভালো হয়। এই খাতের ব্যবসায়ীরা এবারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হবার কোনো কারণ নেই।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’র সহ-সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজিম জানান, মার্চ, এপ্রিল ও জুন এই তিন মাসে রপ্তানির আয় কমার কোনো কারণ নেই। দেশে করোনাভাইরাসের মধ্যেও কোনো রপ্তানি আয় কম হয়নি। বর্তমানে ভয়াবহ করোনাভাইরাস কমেছে। এখন যেসব পোশাক রপ্তানি হচ্ছে সেগুলো জুনের পর রপ্তানি হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছর পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। তিনি বলেন, এখন দেশে ভয়াবহ করোনাভাইরাস নেই। গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ হচ্ছে বেশি। সরকার তাদের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির। তবে তিনি প্রত্যাশা করছেন এবার পোশাক রপ্তানি হবে ৪২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ডলারের অঙ্কে রপ্তানি আয়ের কতটা বাড়লো, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানির পরিমাণ কতটা বেড়েছে। তিনি রপ্তানির পরিমাণের দিকে নজর দিতে বলেন। তৈরি পোশাক মোট রপ্তানির সিংহভাগ হলেও অন্য খাতও রপ্তানির আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, চলতি বছরের ৯ মাস ( জুলাই-মার্চ) সময়ের কৃষি প্রক্রিয়াজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশলী পণ্য ও হস্তশিল্পের রপ্তানিও বেড়েছে। এতে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৪  কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১০০ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি বেড়েছে দেড় গুণের মতো। অন্যদিকে ভারতেও পণ্য রপ্তানিতে নতুন আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি কারকরা ভারতের বাজারে ১৫৩ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন। এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের পুরো সময়ে চেয়েও ২০ শতাংশ বেশি।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেই নয়, রাশিয়া, জাপান, চিলিসহ সব অপ্রলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের ৬ মাসে রাশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৮ দশমিক ১০ শতাংশ। এই ছয় মাসে ৩৪ কোটি ১২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।

গত অর্থবছরের (২০২০-২১) একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আগের বছরগুলোর ট্রেড দেখলে বোঝা যায় আগামী তিন মাসের (এপ্রিল, মে ও জুন) রপ্তানিতে ভালো করবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিজিএমইর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়  প্রতিবছরই বাড়ছে। তবে করোনার ছোবলে কমেছিল রপ্তানি বলে তিনি জানান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads