• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সংসদীয় আসন ১৭০, মানিকগঞ্জ-৩

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো ( শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ), মো. আতাউর রহমান আতা (উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মানিকগঞ্জ সদর), জহিরুল আলম রুবেল (যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটি জাতীয় পার্টি)

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বিশ্লেষণ

মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া

সংসদীয় আসন ১৭০, মানিকগঞ্জ-৩

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের সরকার। জনগণই যেখানে সব ক্ষমতার উৎস। সংবিধানমতে, প্রতি পাঁচ বছর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে তাদের প্রতিনিধি। যিনি মহান সংসদে দাঁড়িয়ে নির্বাচিত এলাকার জনসাধারণের সমস্যা সমাধানে কথা বলবেন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। জনগণের নিজস্ব মতামত থাকে, যা অনেক সময়ই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজেকর্মে প্রতিফলিত হয় না। তাই বাংলাদেশের সব মানুষের অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে এক পাতাজুড়ে আমাদের আয়োজন ‘খবরের কাগজে সংসদ’। এখানে রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকর্মীর পাশাপাশি কথা বলবেন তৃণমূল থেকে শুরু করে সংবিধান প্রণেতাসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা। এরই ধারাবাহিকতায় মাকিনকগঞ্জ-৩ আসন নিয়ে এবারের আয়োজন।

একনজরে মানিকগঞ্জ-৩ আসন

মানিকগঞ্জ-৩ জাতীয় সংসদের ১৭০তম আসন। জেলা শহর ও পৌরসভাকেন্দ্রিক হওয়ায় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আসন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ও সাটুরিয়ার ৯টি ইউনিয়ন এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই আসনের স্থানীয় জনগণ এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে আছেন- বিএনপির সাবেক মন্ত্রী, প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের পরীক্ষিত নেতা, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান আতা এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান। আওয়ামী লীগের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এফবিসিসিআইর পরিচালক ও মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম খান। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল আলম রুবেল, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান সাঈদ ও জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি এম হাবিবুল্লাহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া জেলা জাসদের সভাপতি ইকবাল হোসেন খান ১৪-দলীয় জোটের মনোনয়ন না পেলে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা লক্ষ করা গেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে তারা জানান, ‘এ বিষয়ে কোনো কথা বলার সময় এখনো আসেনি, পরে কথা বলবো।’ স্থানীয়দের মতে, বৃহৎ দুটি দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের কেউ ঋণখেলাপি, আবার কেউ বিতর্কিত এবং দলীয় মনোনয়ন লাভে অনিশ্চয়তা থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে তারা সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। যে কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। তাই তুলনামূলক তরুণ ও মাঠে থাকা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সাজানো হয়েছে আজকের খবরের কাগজে সংসদ। সহযোগিতায় সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন, পরিকল্পনা গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় মো. আসিফ উল আলম সোহান

 

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ 

 

 

 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন এফবিসিসিআইর তিনবারের নির্বাচিত পরিচালক ও মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো। তার পৃষ্ঠপোষকতায় জেলাটিতে ডাউটিয়া বুলবুল ক্লাব, শিল্পরথসহ বিভিন্ন সামাজিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭৪ সালের ৮ মার্চ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ডাউটিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবদুল মুন্নাফ খান (মুন্নু) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। টিটো ১৯৯০ সালে কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও ১৯৯২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে ডিগ্রি, ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে এমবিএ এবং ২০১৬ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) থেকে তিনি ক্যাপস্টোন কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে টিটো মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। মানিকগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান  

বাংলাদেশের খবর : রাজনীতি শুরু কবে থেকে?  

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো : আমি যখন ঢাকা কলেজে পড়ি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম রব্বানী ছিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সেক্রেটারি। তার হাত ধরেই ছাত্রলীগে যোগ দিই। এরপর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসে বর্তমানে আমি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।   

বাংলাদেশের খবর : আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কি কোনো সংশয় আছে?    

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো : এক ফোঁটাও সংশয় নেই, যেহেতু জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের স্বাধীনতা এনেছেন। তার কন্যার হাতে দেশ সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমি বিশ্বাস করি না যে তার মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক কিছু হবে। নির্বাচন হবে, যথাসময়েই হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি হান্ড্রেড পার্সেন্ট আমাদের আস্থা আছে। আশা করি, আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসবে।   

বাংলাদেশের খবর : কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে রেখে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে কী পরিকল্পনা আপনাদের?    

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো : জেলে তো আর আওয়ামী লীগ রাখেনি। এটা কোর্টের ব্যাপার, মামলার ব্যাপার। কোর্ট যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই বলবেন। কোর্ট নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। নম্বর টু, তাকে নির্বাচনে বাইরে রাখার তো কিছু নেই। কোর্ট যে ডিসিশন দেবেন, সেটাই হবে। আর গতবার তো তিনি বাইরে থেকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। এটা তাদের দল, তাদের ডিসিশন— তারা নির্বাচনে আসবেন কি আসবেন না।  

বাংলাদেশের খবর : আপনি এফবিসিসিআইর তিনবারের নির্বাচিত পরিচালক। ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কতটা সম্ভাবনা রয়েছে? 

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো : ইনভেস্টমেন্টের জন্য সবদিক থেকে এখন বাংলাদেশের মতো উপযুক্ত জায়গা আর নেই। সরকার একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) করেছে ইনভেস্টমেন্টের যেসব অবস্ট্রাকল বা ব্যারিয়ার আছে, সেগুলো কাটানোর জন্য। আগে উদ্যোক্তারা হয়রান হতেন। এই অফিস থেকে ওই অফিস, ব্যুরোক্রেসি, লালফিতার দৌরাত্ম্য— সব মিলিয়ে উদ্যোক্তারা হয়রানির শিকার হতেন। এই লাইসেন্স, ওই লাইসেন্স— এ জন্যই এই ওয়ানস্টপ সার্ভিসটি করা হয়েছে, যাতে ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে বাধাগুলো না থাকে। অবকাঠামোগতভাবে সবকিছুই এখন বেটার পজিশনে আছে। আগের থেকে রাস্তাঘাট ভালো হয়েছে, ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। সরকার এখন স্পেশাল ইকোনমিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো করছে। এটার ফলে এক জায়গা থেকে ডেডিকেট আপনি, পানি-গ্যাস সবকিছু পাচ্ছেন। ওখানে কোনো রাজনীতি নেই। সব মিলিয়ে একটা সাউন্ড বিজনেস এনভায়রনমেন্টের মধ্যে ব্যবসা করতে পারছেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ ইজ দ্য বেস্ট প্লেস ফর দা ইনভেস্টমেন্ট। পোশাক খাতে আমরা ওয়ার্ল্ডে সেকেন্ড হায়েস্ট। সামনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আসছে, তাতে বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। একটা জায়গায় একটু প্রবলেম ছিল, ব্যাংক ইন্টারেস্টে, সেটিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকগুলোকে বলে দিয়েছেন ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট করার জন্য। এটিকে ফলপ্রসূ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি একটু মনিটর করে, তাহলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ইজ দ্য বেস্ট প্লেস টু ইনভেস্টমেন্ট।  

বাংলাদেশের খবর : মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলছেন। এখানে আপনার দলের একজন প্রতিমন্ত্রীও আছেন। কেন মনে করছেন দল তাকে না দিয়ে আপনাকে মনোনয়ন দেবে?   

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো : আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব এবং পাব; কারণ আমার এলাকার মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। আমাদের নেত্রী একটা কথা বার বার বলছেন— এবার তৃণমূলে যারা জনপ্রিয়, এলাকায় যাদের চাহিদা বেশি, যে লোকের জনপ্রিয়তা বেশি, তাকেই নমিনেশন দেওয়া হবে। আমরা আসলে জননেত্রীর এই কথাটাকে বিশ্বাস করি। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি এবং সাটুরিয়ার ৯টি ইউনিয়ন আর মানিকগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে মানিকগঞ্জ-৩ আসন গঠিত। এখানে রাস্তাঘাটগুলো আরো চওড়া করা দরকার। মানিকগঞ্জকে কোনোভাবেই একটি জেলা শহর মনে হয় না, সেই সুযোগ-সুবিধাও এখানে নেই। মেইন শহরের মধ্যে একটি খাল রয়েছে। এতে কোনো পানি থাকে না। পানি এলেও দু-এক মাস থাকে। তারপর দেখা দেয় পচা পানি, ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ, এটা একটা অব্যবস্থাপনা। মানিকগঞ্জে গ্যাসের লাইন আছে কিন্তু গ্যাস সরবরাহ নেই অথচ মানিকগঞ্জবাসীকে প্রতিমাসে গ্যাসবিল পরিশোধ করতে হয়। 

এটা কেমন কথা, হয় গ্যাস দিন বিল নিন, না হয় গ্যাস লাইনই বন্ধ করে দিন। মানিকগঞ্জ শহরে বা আশপাশে বিনোদনের জন্য, একটু হাঁটার জন্য, বসার জন্য বড় কোনো পার্ক নেই। এসবের উন্নয়ন চায় এলাকার মানুষ আর যুবসমাজ তো আমার সঙ্গেই আছে। নেত্রী বলেছেন তরুণ এবং জনপ্রিয়দেরই মনোনয়ন দেবেন। কাজেই নেত্রীর এই কথাটাকে মনে-প্রাণে ধারণ করি। ওই কথার ওপর বেইজড করেই আমরা মাঠে নেমেছি। আমি তো মনে করি, এলাকার শতভাগ আমার সাপোর্টার। তার ওপর ভিত্তি করেই বলতে পারি, আমি নমিনেশন পাব এবং জয়লাভ করব।    

বাংলাদেশের খবর : মানিকগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান সমস্যা ও সমাধান কী?  

তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটো : মাদক মানিকগঞ্জে একটি বড় সমস্যা। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে মানিকগঞ্জে কাজ করছি। মাদক থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। কারণ ফিউচারে তো এরাই দেশের নেতৃত্ব দেবে— যারা নেতৃত্ব দেবে, ইয়াং জেনারেশন, এরাই যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তো সামনে দেশ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে। মানিকগঞ্জে মাদকের সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মানিকগঞ্জে যে স্কুল-কলেজগুলো আছে, সেগুলো মানসম্পন্ন নয়। মানিকগঞ্জ ঢাকার খুব কাছে বলে ম্যাট্রিক পাস করার পর বড় একটা অংশ ঢাকায় পড়ালেখা করতে আসছে। কেউ ঢাকার স্কুলে পড়তে আসছে, কেউ কলেজে। একটাই কারণ, মানিকগঞ্জে মানসম্পন্ন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ভালো ইংলিশ ও বাংলা মিডিয়াম দরকার। দেবেন্দ্র কলেজ একটি আছে— বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এখানে আরো ফ্যাকাল্টি বাড়ানো দরকার। সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করা হলে মানুষ কিন্তু ঢাকায় আসবে না। রাস্তাঘাটগুলোর বেহাল দশা, এসব ঠিকঠাক করতে হবে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। শহরে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা-মসজিদ, কোর্ট-কাছারি এসব কাছেই। ঠিক করতে হবে দূরের রাস্তা, যাতে তারা দ্রুত স্কুল কলেজ হাসপাতালের সেবা নিতে পারে। প্রত্যেক ইউনিয়নে ভালো মানের ক্লিনিক স্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা একদম মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। বেকার সমস্যা মানিকগঞ্জের একটা বড় সমস্যা। আমি এফবিসিসিআইর পরিচালক, প্রতিদিন প্রায় ১০০ সিভি পাই চাকরির জন্য; কিন্তু আমার পক্ষে তো সবাইকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কয়জনকে রিকোয়েস্ট করতে পারি? মানিকগঞ্জে যদি অর্থনৈতিক বিশেষায়িত ১০১টি অঞ্চলের একটিও করতে পারি, তাহলে খুবই ভালো হয়। আমি সবসময় আমার টকশো, মিডিয়ায় বলি- শুধু গাজীপুর ও অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে মানিকগঞ্জে এখনো জায়গার দাম অনেক কম, সবকিছু আছে। এদিকে শিল্পায়নটা করুন। গাজীপুরে যে জমির দাম এখন এক কোটি টাকা, সেটা মানিকগঞ্জে বিশ লাখ টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন। আমার কথা হলো, এত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও আপনি এখানে কেন ইন্ডাস্ট্রি করবেন না? কমিউনিকেশন গাজীপুরের চেয়েও ভালো। গাজীপুর যেতে-আসতে ৮ ঘণ্টা লেগে যাবে। সেখানে মানিকগঞ্জে এই এফবিসিসিআই অফিস থেকে যেতে ১ ঘণ্টা আর আসতে মাত্র ১ ঘণ্টা লাগবে। নদীপথেও যোগাযোগের সুবিধা আছে। সব মিলিয়ে আমি চাই মানিকগঞ্জকে একটি শিল্পোন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে। তাহলে এলাকায় বেকার সমস্যা থাকবে না। এখানে যদি মিল-ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে পারি, তাহলে অটোমেটিক এলাকার লোকের কর্মসংস্থান হবে।  

এ ছাড়া সাটুরিয়া উপজেলাকে আধুনিকায়ন করে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সাটুরিয়ার কেন্দ্রস্থলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পার্ক, খেলার মাঠ ও নাগরিক সুবিধার উপযোগী সর্বোচ্চ নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

মো. আতাউর রহমান আতা

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

মানিকগঞ্জ সদর

 

 

মো. আতাউর রহমান আতার রাজনীতিতে হাতেখড়ি ১৯৬৮-৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ’৭৩ সালে জাসদে যোগ দিয়ে এক বছর জাসদে ছিলেন। তারপর জিয়াউর রহমানের বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাগো দলের জাগো যুবদলে ছিলেন। ১৯৭৯ সালে মানিকগঞ্জ সদর থানা যুবদলের সভাপতি ও জেলা যুবদলের সদস্য হন। ১৯৯০ সালে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। ’৯৬ সালে জেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। মানিকগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান

বাংলাদেশের খবর : আপনার প্রথম রাজনীতিতে আসাটা কীভাবে?

মো. আতাউর রহমান আতা : স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮-৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি। ৬৯-এ আমি ছাত্রলীগ করতাম। ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে যখন বন্দি করা হয়, তখন তার মুক্তির দাবিতে মিছিল মিটিং শুরু হয়েছিল। আমার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল, আমি তখন ক্লাস টেনের ছাত্র। আমি মুক্তিযুদ্ধও করছি. স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে আমি ’৭৩ সালে জাসদে যোগ দিয়েছিলাম। এক বছর পর্যন্ত আমি জাসদের লোকদের কিছু অপকর্ম করতে দেখে রাজনীতি থেকে দূরে থাকি। রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাবের পরে আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাগো দলের জাগো যুবদলে ছিলাম। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত যুবদলের জেলা (মানিকগঞ্জ) কমিটির সদস্য। ১৯৭৯ সালে নির্বাচন দেওয়ার পরে আমি সদর থানা যুবদলের সভাপতি ও জেলা যুবদলের সদস্য হই। থানা যুবদলের সভাপতি দুই টার্ম হয়েছি। আবার ১৯৯০ সালে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলাম। ’৯৬ সালে সম্মেলন করে আবার জেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হই। ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলাম। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখি। তখন তো যুগপৎ আন্দোলন হয়েছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাসদ মিক্সড হয়ে। আমি দেলোয়ার সাহেব, ইকবাল সাহেব আর আবু ভাইকে বলেছিলাম, বাসস্ট্যান্ডের দায়িত্ব আমার। হরতাল, অবরোধ আমি একা করাতাম। এরপর ’৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নিজামউদ্দীন খানের নির্বাচন পরিচালনা করি। ’৯৬-এর নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে নিজামউদ্দীন খানের নির্বাচন পরিচালনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখি। নিজামউদ্দীন খানের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে ’৯৭ সালে আমি, যখন ওয়াহাব সাহেব নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এমপি হলেন তখন আমি মনোনয়ন চাইলেও ওয়াহাব সাহেবের জন্য পাইনি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের প্রার্থী মুন্নু সাহেবের পক্ষে কাজ করেছি। ২০০৬ সালে চেয়েছিলাম, পরে ১/১১ হলো। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, দেওয়া হয়নি। দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করেছি। এ যাবৎ দলের জন্য যা করা দরকার করছি। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব আমাকে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি করে কমিটি বানিয়েছিলেন। সভাপতি কে জানা ছিল না। বলছিলেন, ম্যাডাম দেবেন। পরে জানতে পারলাম, কোনোভাবে আমাকে বাদ দিয়ে মুন্নু সাহেবের মেয়ে রিতাকে সভাপতি আর শান্তকে সেক্রেটারি করে কমিটি করেছে। শুনেছি কোনো এক কুচক্রি মহল কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমাকে বাদ দিয়েছিল। পরে আমাকে সেন্ট্রাল কমিটির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক বানিয়েছে। সেটাও কেটে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিএনপি করি। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি আমি প্রথম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে যখন ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন আমি প্রতিবাদ করে ১৪ নভেম্বরের হরতালে গ্রেফতার হই। আমিই একমাত্র উপজেলা চেয়ারম্যান, যিনি প্রতিবাদ করে গ্রেফতার হয়েছিলাম। ম্যাডামকে বাসা থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ডাকা হরতালে গ্রেফতার হই। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ম্যাডাম যেদিন গ্রেফতার হন, তার আগে ৪ তারিখে ডেকেছিলেন আমাদের সবাইকে। ভূমিকা রাখতে হবে। ৬ তারিখে আমাকে স্পেশাল ডেকে নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আতা ভাই, আপনাকে খুব ডিপেন্ড করি। আপনার লোকজনসহ আপনাকে থাকতে হবে। আমি থেকেছি, সারাদিন সেই মিছিল-মিটিংয়ে ছিলাম। পুলিশ-র্যাবের সামনে সেদিন ম্যাডামের পক্ষে মিছিলে স্লোগান দিয়েছি। আবার ম্যাডামকে যখন জেলে পাঠানো হলো, তার মুক্তির দাবিতে মানিকগঞ্জ শহরে আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণের সময় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন আমি দীর্ঘদিন কারাবাসে ছিলাম। 

বাংলাদেশের খবর : জনগণ সংসদ নির্বাচনে কেন আপনাকে ভোট দেবে বলে মনে করেন? 

মো. আতাউর রহমান আতা : আমি মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া এলাকায় ১৯৭৯ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে যতবার  এমপি নির্বাচন হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনে ডোর টু ডোর কাজ করেছি নিজামউদ্দীন খানের সঙ্গে, ওয়াহাব খানের সঙ্গে, মুন্নু কাকার সঙ্গে। কাজেই এলাকার জনগণের সঙ্গে আমার বিশেষ আত্মিক সম্পর্ক আছে- তারা আমাকে চেনে, ভালোবাসে। আর দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাবাসী আমাকে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান লোক হিসেবে চেনে। যদিও বিরোধী দলের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বেশি কাজ করে দেখাতে পারিনি; কারণ সরকার আমাদের সুযোগ দেয়নি। তারপরও যতটুকু পেরেছি, ন্যায়-নীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে বণ্টন করে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার জনগণ সেটার জন্য আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যে কারণে আমাকে তারা অত্যন্ত ভালোবাসে। এখন আমি জোরালো প্রার্থী। আশাবাদী, আমার দল আমাকে মনোনয়ন দেবে ইনশাল্লাহ। আর আমার এলাকার জনগণ আমাকে ভালোবাসে। 

বাংলাদেশের খবর : কী কাজ করার আছে এলাকায়?

মো. আতাউর রহমান আতা : যদি নির্বাচিত হই, আল্লাহর রহমতে প্রথমেই এক নম্বরে থাকবে আমার মানিকগঞ্জের স্থানীয় রাস্তাঘাট, দ্বিতীয়ত থাকবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া। সুশিক্ষা— শিক্ষার সম্প্রসারণ ও বিস্তার করা। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। আর সবচেয়ে বড় একটি ইস্যু, মানিকগঞ্জের গ্যাস লাইনে গ্যাস নেই অথচ মানিকগঞ্জবাসীকে গ্যাসের বিল দিতে হয়- এই কাজটি করা। হয় গ্যাস দিতে হবে, বিল নিতে হবে। না হয় গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। মানিকগঞ্জবাসীকে ঠকিয়ে গ্যাস বিল নিতে আমি দেব না। তারপর আমার দাবি আছে,  মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু চাইব। মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া হয়ে রেললাইন চাই। আমার মেনিফেস্টোতে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, সুশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, গ্যাসের ব্যবস্থা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার কথা তুলে ধরব।

বাংলাদেশের খবর : বিএনপির তো ওখান থেকে একজনের নাম শোনা যাচ্ছে মুন্নু সাহেবের মেয়ে রিতা। তাকে বাদ দিয়ে আপনাকে কেন মনোনয়ন দেবে দল? 

মো. আতাউর রহমান আতা : মুন্নু সাহেবের মেয়ে লবিং করতে পারে, তাদের টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু আমি যতটুকু জানি— তিনি ডিফল্টার, ঋণখেলাপি। সেটাও যদি না বলি, তিনি পাঁচ বছর মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতিত্ব করছেন। আমাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে ১৬ জনের কমিটি করে এনেছেন তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন বলে। পাঁচ বছরের মধ্যে ১৬ জনকে নিয়ে একসঙ্গে বসতে পারেননি। একটি মিটিং করতে পারেননি। আর ১৬ জন থেকে ১৭ জন হয়নি। মোট কথা হলো ব্যর্থ কমিটি হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপিকে তিনি দুর্বল করে দিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি এই দুজনে। যে কারণে তিনি ব্যর্থ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। এমনকি ম্যাডাম জিয়া যেদিন গ্রেফতার হন, কোর্টে হাজিরা শেষে যেদিন জেলে পাঠানো হয়, আমি সেখান থেকে শুরু করে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছি। আমার গ্রেফতার হওয়া নেত্রীর মুক্তির জন্য মিছিল করে অ্যারেস্ট হয়েছি, জেল খেটেছি। আর সভাপতি রিতা এবং শান্ত দুজনের কেউই এই ৮ তারিখে ছিলেন না। সেদিন তারা একজন লন্ডন গেছেন, আরেকজন গেছেন কানাডা। তাদেরকে কর্মীরা বলেছেন, আপনারা যদি যান আর সহযোগিতা করেন হাজার লোক নিয়া যাই। কিন্তু তারা বলেছেন, এর মধ্যে আমরা নাই। তোমরা তোমাদের নিজ দায়িত্বে যেতে পার। আমরা কোনো টাকা-পয়সা দিতে পারব না। আমি এর আগে-পিছে নাই। আর দ্বিতীয়ত, তিনি একজন ব্যর্থ সভাপতি, মানিকগঞ্জ বিএনপিকে ধ্বংস করেছেন। কাজেই বিএনপি তাকে নমিনেশন দেবে না ইনশাল্লাহ আমি আশাবাদী। তৃতীয়ত হলো, মুন্নু কাকা পাঁচ বছর মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়ার এমপি ছিলেন। তিনিও কোনো উন্নয়ন করেননি সেই পাঁচ বছরে। তাই তার মেয়েও কিছু করবেন না এটাও এলাকার জনগণ নিশ্চিত। এ জন্য মানিকগঞ্জবাসী তাকে ভোটও দেবে না। এখানে আমার দলের হাইকমান্ড বহুবার জরিপ করেছে। সরকারিভাবে, বেসরকারিভাবে, তাদের ব্যক্তিগত জরিপে আমি এগিয়ে। সবাই বলেছে আতা ভাইকে দিলে পাস করবে, রিতাকে দিলে ফেল করবে। কাজেই আমার দল, নিশ্চিত তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে— আমি আশাবাদী তারা আমাকে নমিনেশন দেবে বিএনপির পক্ষ থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার। ইনশাল্লাহ জনগণের দোয়ায়, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমি বিজয়ী হয়ে আমার নেতা তারেক রহমান এবং আমার নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই সিট উপহার দেব। নেত্রী খালেদা জিয়া সরকার গঠনে সমর্থ হবেন ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশের খবর : বেগম জিয়া এখন কারাগারে। এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে ডিসেম্বরের শেষ দিকে, ২৭ তারিখের দিকে ইলেকশন হবে। এক্ষেত্রে বেগম জিয়াকে, আপনাদের চেয়ারপারসনকে ভেতরে রেখে বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে বলে আপনি মনে করেন?

মো. আতাউর রহমান আতা : সেটা আসলে সেন্ট্রাল হাইকমান্ডের ব্যাপার। আমি মনে করি, নির্বাচনের আগেই আমার নেত্রীর প্রায় সব মামলায় জামিন হয়ে যাবে। দুটি মামলার জামিনের শুনানি সামনে আছে। আমি বিশ্বাস করি, মনে করি যে (এটা তো সেপ্টেম্বর চলছে), অক্টোবরের আগেই আমার নেত্রীর সেই দুই মামলায়ও জামিন হয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ, আমার দলের নেত্রীও বের হয়ে আসবেন। আর আমার দলও নির্বাচনে ইনশাল্লাহ যাবে। সেটা আমি আশাবাদী। কারণ তাদের খালি মাঠে গোল দিতে দেওয়া ঠিক না। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি যেন নির্বাচনে না আসে। কিন্তু আমি মনে করি, আমার নেতারা তাদের আর সেই খালি মাঠে গোল দিতে দেবেন না। আমার হাইকমান্ডই জানেন লাস্ট ডিসিশন কী আসবে এবং আমার নেত্রীও মুক্তি পেয়ে তিনিও নির্বাচন করবেন ইনশাল্লাহ। 

 

জহিরুল আলম রুবেল

যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটি জাতীয় পার্টি

 

 

 

খালেদা জিয়া এখন জেলে, জেলখানা থেকে তার লাশ বের হবে! জীবিত খালেদা জিয়া বের হবেন না, এটা গভর্মেন্টের পরিকল্পনা আমরা যতদূর জানি - জহিরুল আলম রুবেল

 

জহিরুল আলম রুবেল ১৯৮২ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজে যোগদানের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর জাতীয় পার্টির যুব সংগঠনটির মতিঝিল থানার সেক্রেটারি, ’৯১ সালে জাতীয় পার্টির মতিঝিল থানার সেক্রেটারি এবং ’৯৬ সালে ঢাকা মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগরীর জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সেক্রেটারি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদক হন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগরীর সেক্রেটারি। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির একমাত্র প্রার্থী। নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান।

বাংলাদেশের খবর : আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের কোনো সংশয় আছে? নির্বাচন হবে কি-না?

জহিরুল আলম রুবেল : অবশ্যই সংশয় আছে। একটি বৃহৎ দল বিএনপি এবং আরো যত দল আছে, তাদের বাইরে রেখে নির্বাচন হবে, এটা কি বার বার সম্ভব! একবার হয়েছে, আবারো হবে- এটা তো চিন্তার ব্যাপার। জাতীয় পার্টি সব সময় ট্রাম্পকার্ড হয়েছে। এবারো ট্রাম্পকার্ড হবে।

বাংলাদেশের খবর : বিএনপি এবার নির্বাচনে না এলে আপনাদের ভূমিকা কী হবে? আপনারা কি জোটবদ্ধভাবে, নাকি এককভাবে নির্বাচন করবেন?

জহিরুল আলম রুবেল : আসলে সেটা সময়ই বলে দেবে। আর শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক তো চেয়ারম্যান, হাইকমান্ড হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এটা অনিশ্চিত। তবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।

বাংলাদেশের খবর : গত টার্মে আপনার এলাকার এমপি ছিলেন জাহিদ মালেক স্বপন। এলাকায় এখন জনগণের কী কী সমস্যা আছে বলে মনে করেন?

জহিরুল আলম রুবেল : পুরো মানিকগঞ্জই তো সমস্যায় জর্জরিত। মানিকগঞ্জের বাড়ি বাড়ি গ্যাসলাইন আছে। সরকার গ্যাস দিয়েছে কিন্তু কেউ জ্বালাতে পারে না অথচ বিল পরিশোধ করতে হয়। মানিকগঞ্জ শহরে গ্যাস নেই, সোজা চলে যায় জাহিদ মালেক স্বপনের ইন্ডাস্ট্রিতে। এটা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে ৩১টি মামলা হয়েছে কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। সব গ্যাস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রীর ইন্ডাস্ট্রিতে। মানিকগঞ্জের মানুষ গ্যাস পায় না বছরের পর বছর। যারাই এটা নিয়ে আন্দোলন করে, মামলা দেওয়া হয় তাদের নামে। বললাম না, ৩১টি মামলা হয়েছে শুধু প্রতিবাদ করার কারণে। মেয়র রমজান আলীও মামলা খেয়েছেন এর জন্য। মানিকগঞ্জ হাইওয়ে কত বছর কোনো সংস্কার নেই। কোনো এমপি-মন্ত্রীর আমলেই মানিকগঞ্জ শহরের কোনো উন্নয়ন নেই। ঢাকার এত কাছাকাছি, তবু কোনো উন্নয়ন না থাকায় বেকার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জায়গাজমি সব দেখা যায় বুকড; কিন্তু কোনো মিল-ইন্ডাস্ট্রি নেই। যার ফলে বেড়েছে মাদকের ভয়াবহতা। মানিকগঞ্জের টং দোকানে, পান দোকানে এখন ইয়াবা পাওয়া যায়, যা কন্ট্রোলের বাইরে।

বাংলাদেশের খবর : আপনার বক্তব্য কী এসব বিষয়ে?

জহিরুল আলম রুবেল : যদি বলি সব সমাধান করব সুযোগ পেলে, তা হবে ভাঁওতাবাজি। এত সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারবে না। তবে একটা বিষয় বলতে পারি— কাবিখা, টিআর, রিলিফ, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা,  মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এগুলো আমরা খাব না।

বাংলাদেশের খবর : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন।

জহিরুল আলম রুবেল : দেখুন, উন্নয়ন দিয়ে যদি ক্ষমতায় থাকা যেত তাহলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সারা জীবন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতেন। তার মানে, শুধু উন্নয়ন দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। রাজনৈতিক পরিবেশও ভালো নয়। মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার- এগুলো বাঙালি জাতি চায়। এগুলো দিতে না পারলে লাভ নেই। দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার চিত্র বেশি আসছে। আমরা জাতীয় পার্টি ভালো অবস্থানে আছি। আমরা যেদিকে যাব, ক্ষমতা সেদিকে— এটা পরিষ্কার। ২০০১-এর চিত্র দেখেন— ওখানে দেখবেন আওয়ামী লীগ ১৫৬ সিটে হেরেছে ১ থেকে ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। বাংলাদেশে এটা দেওয়ার ক্ষমতা আছে জাতীয় পার্টি আর জামায়াতের। আওয়ামী লীগ কিন্তু ভোট পেয়েছিল বেশি। কিন্তু সিট সম্ভবত ৫৭ কি ৬৭টি পেয়েছিল। কাজেই হিসাব-নিকাশ করব এবার। কারণ আওয়ামী লীগের এসব দেখতে দেখতে ফেডআপ। একটা মুলা ঝুলাইয়া দিয়া জাতীয় পার্টি দিয়া ক্ষমতায় আইসা জাতীয় পার্টিকে ন্যূনতম কোনো বিশেষ করে জাতীয় পার্টিকে কোনো ধরনের যেমন মসজিদ মাদরাসাসহ সেবামূলক কোনো কাজে পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মূল্যায়ন করে নাই। কোনো সুযোগ দেয় নাই। যে কারণে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। যা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দাবায়ে রাখতে পারবেন না—  এটা পরিষ্কার। এবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যাইতে হইলে ভোট ডাকাতি করা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নাই! আপনারা (আওয়ামী লীগ) ভোট ডাকাতি করবেন আমাদের নিয়া, আর খাইবেন একা একা— এটা তো হবে না। ভাগ দিলে আছি, না দিলে নাই। এবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন করলে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, আর এরশাদ নির্বাচন না করলে নির্বাচন হবে না। এটা পরিষ্কার।

বাংলাদেশের খবর : আপনাদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে কী হবে?

জহিরুল আলম রুবেল : দেখুন, আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন জোট হলে এই কটা সিট দিব। অনেক কথাই বলেন, যেমন ৬০ সিট দেবে। এখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যদি বলেন, ঠিক আছে ভাই, একটা সিটও লাগবে না, আপনারা ৩০০টা সিট নেন; কিন্তু দয়া করে আমাদের আপনাদের সাথে রাইখেন না। আজকে যদি জাতীয় পার্টি বাইচান্স বিএনপির সাথে জোট করতে চায়... ’৯৬-তে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় স্বয়ং রওশন এরশাদের বাসায় গেছেন। এরশাদ সাহেব তখন জেলে। বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আপনাদের। এরশাদ সাহেব প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সব আপনাদের। কিন্তু আপনারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবেন না। আপনারা সরকার গঠন করেন, আপনাদের নিঃশর্ত সমর্থন দেব। এখন খালেদা জিয়া জেলে আছেন, খালেদা জিয়ার লাশ বের হবে জেলখানা থেকে! জীবিত খালেদা জিয়া বের হবেন না, গভমেন্টের পরিকল্পনা আমরা যতদূর জানি। তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড হবে গ্রেনেড হামলা মামলায়, ইহজনমে আর বাংলাদেশে আসতে পারবে না। বিএনপি এবার ক্ষমতায় যেতে না পারলে দল ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। কারণ সিনিয়র নেতাদের বেশিরভাগ গভমেন্টের দালাল, এজেন্ট। এর চাইতে বেটার না— যদি খালেদা জিয়া ’৯৬ সালের মতো বলে ফেলেন, এরশাদের নেতৃত্বে আছি আমরা, তাহলে খালেদা জিয়া জীবিত বের হবে জেল থেকে, তারেক রহমানও দেশে আসবে। এরকম যে হবে না তার নিশ্চয়তা কী? যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণ হতে পারে। শেখ হাসিনা জানেন, চার ঘণ্টায় সরকার পতন হয়। জাতীয় পার্টি যদি বিএনপির সঙ্গে যায়, তাহলে ২৪ ঘণ্টাও সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আর এবারের নির্বাচনে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই একমাত্র ট্রাম্পকার্ড। আমাদের টার্গেট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে ৭০-৮০ সিট নেব এবং পাঁচ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাব। আর এবার বিএনপির সঙ্গে জোট হলে এবারই আমরা ক্ষমতায় যাব। আমরা ক্ষমতায় গেলে দেশের আমূল পরিবর্তন হবে। দেশের উন্নয়ন হবে। কারণ জাতীয় পার্টির যত দুর্নীতিবাজ ছিল, তারা আওয়ামী লীগ আর বিএনপিতে চলে গেছে। এখন জাতীয় পার্টি ফ্রেশ। তাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন জাতীয় পার্টির পক্ষেই গঠন করা সম্ভব। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads