• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
সেনা অভিযানে নিহত পাঁচশ’র বেশি  

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

মিয়ানমারে বিক্ষোভ, সেনা অভিযানে নিহত পাঁচশ’র বেশি  

  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২১

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যবেক্ষক একটি সংস্থা গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে অভ্যুত্থানের পর দুই মাসের মাথায় নিহতের সংখ্যা এই মাইলস্টোন অতিক্রম করল। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে দেশটিতে আন্দোলন চলছে।

এর মধ্যে গত শনিবার সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারী সেনা অভিযানে নিহত হন। এদিন নিহত হয়েছেন ১১৪ জন। গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেওয়া এসব বিক্ষোভকারীকে ‘ফলেন স্টারস’ বা ‘খসে যাওয়া তারা’ বলে উল্লেখ করেছে অভ্যুত্থানবিরোধীরা। দিনটি ছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

পরদিন রোববার পৃথক দুই স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরো দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানায় রয়টার্স। মিয়ানমার নাউ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী নেপিডোতে একদল বিক্ষোভকারীকে লক্ষ্য করে সেনারা গুলি করলে একজন নিহত হন। জান্তা সরকারের গুলিতে গত সোমবারও দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচ বিক্ষোভকারী।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জান্তা সরকারের ওপর চাপ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫১০ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এএপিপি সতর্কতা জারি করে বলেছে, প্রকৃত নিহত মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। 

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মানুষের প্রতি এত বেশি সহিংসতার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। অনেক মানুষ সহিংসতায় প্রাণ হারাচ্ছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আজ বুধবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসবে। যুক্তরাজ্য জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সোমবার দেশটিতে অন্যান্য দিনের তুলনায় ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভকারীরা এ সময় বালির বস্তা দিয়ে তৈরি ব্যারিকেডের পেছনে মাথা নিচু করে অবস্থান করছিলেন। তবে ঠিক কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও মনে করা হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অবশ্য দাবি করেছে, রাস্তায় জড়ো হওয়া সন্ত্রাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে ‘দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী অস্ত্র’ ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের দাবি, এতে আহত হয়েছে একজন।

দক্ষিণ ড্রাগন জেলার এক বাসিন্দা গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্সকে জানান, সোমবার দিবাগত রাতে ওই এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘সারারাত ধরে গুলিবর্ষণ করেছে সেনা সদস্যরা।’ এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মিয়ানমারের পুলিশ বা জান্তা সরকারের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেনি।

অভিনব কায়দায় ধর্মঘট : সেনাবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ানোর পর এবার অভিনব কায়দায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন অ্যাকটিভিস্টরা। গতকাল মঙ্গলবার ‘আবর্জনা ধর্মঘট’ নামের ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইয়াঙ্গুনের সড়কগুলোতে আবর্জনা ছড়িয়ে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চলমান অসহযোগ আন্দোলন আরো জোরালো করতে নতুন এই কৌশল বেছে নেন বিক্ষোভকারীরা। গত সোমবার লাউড স্পিকারে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়দের শহরের প্রধান প্রধান সড়কে আবর্জনা ফেলার আহ্বান জানানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় স্তরে স্তরে আবর্জনা জমা করা হচ্ছে। একটি পোস্টারে লেখা আছে, ‘জান্তার বিরোধিতা করতেই এ আবর্জনা ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সবাই এতে শামিল হতে পারেন।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়েছে। এরপর থেকেই ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। চরম দমন-পীড়নের মুখেও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads