• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

এশিয়া

খেসারত দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০২১

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে এশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারির নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির হাসপাতালগুলো নতুন রোগী ভর্তি করছে না, মেডিকেলে অক্সিজেনেরও তীব্র সংকট। দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মরদেহ বের করছেন। এটিই এখন ইন্দোনেশিয়ার দৈনন্দিন চিত্র।  খবর বিবিসির।

ভারতে যেমন করোনা বিস্ফোরণের জেরে সারি সারি চিতা জ্বালানোর দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, অনেকটা সেভাবেই সারি সারি নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়ায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত মে মাসের প্রথম দিকে ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ করেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

তখন ঈদের ছুটিতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে যাতায়াত করেছে। আজ তারই খেসারত দিচ্ছে দেশটি। তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।

ইন্দোনেশিয়ায় এ পর্যন্ত ২৭ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগীর চাপে ভেঙে পড়তে বসেছে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

দেশটিতে অনেকেই মারা গেছেন অক্সিজেন সংকটের কারণে। মৃত্যুর সময় তাদের পাশে কেউ ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেশীরা উদ্ধারকর্মীদের খবর দিয়েছেন আসার জন্য। দমকল বাহিনীর কর্মীরা এসে বাড়ির ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করছেন।

জাকার্তায় দীর্ঘদিন ধরে দমকল কর্মীর কাজ করেন উইরাওয়ান। তবে গত বছর থেকে আগুন নেভানোর বদলে তাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুধু তিনিই নন, একই কাজ করছেন দমকল বাহিনীর আরও অনেক কর্মী।

উইরাওয়ান জানান, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে পুরোপুরি একাকী অবস্থায়। সম্ভবত চিকিৎসা না পেয়ে ঘরের ভেতর ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন তারা।

উইরাওয়ান বলেন, অনেক সময় প্রতিবেশীরা আমাদের কল দিয়ে বলেন, তারা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। পরে আবিষ্কার করেন, তিনি মারা গেছেন। এ ধরনের ঘটনা আমরা রোজ দেখছি।

ইন্দোনেশিয়ার ভেতরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মূল কেন্দ্র হচ্ছে সবচেয়ে জনবহুল জাভা দ্বীপ। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সেখানকার একটি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কারণে ৬৩ জন কোভিড রোগী মারা গেছেন। তখন থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কারণে নতুন রোগী ভর্তি করানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়ার হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব লিয়া গার্দেনিয়া পারটাকুসুমা বলেন, সাধারণত একটি হাসপাতালে এক সপ্তাহে তিন টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন এই পরিমাণ অক্সিজেন এক দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি এতোটা খারাপ হবে, সেটি সরকার অনুমান করতে পারেনি। সেজন্য অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। নিজেদের পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের জন্য অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অক্সিজেন ট্যাংক এবং হাসপাতালে শয্যার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।

অক্সিজেন সংকটের কারণে ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ অক্সিজেন স্টোর বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়েকটি অক্সিজেন স্টোর খোলা রয়েছে, সেখানে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অক্সিজেন সংকটের এই সময়ে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। টাকা দিয়েও অক্সিজেন পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads