• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
জাতীয় উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকের ৩৮ বছর

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

জাতীয় উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকের ৩৮ বছর

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০১ এপ্রিল ২০২১

৩০ মার্চ দেশের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালে সম্পূর্ণ নতুন কার্যপদ্ধতিতে যাত্রা শুরু করা এ ব্যাংকটি সময়ের বিবর্তনে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে। গত দুই দশক ধরে আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকিং খাতে শীর্ষস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। শুধু বাংলাদেশই নয়, গত ৯ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ ১০০০ ব্যাংকের মধ্যে দেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ব্যাংকটি। ১৯৭৪ সালে ওআইসির সম্মেলনে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগদানের সূত্রে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় বাংলাদেশ। সে ধারাবাহিকতায় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ ও কর্মপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামিক ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় চার দশকের পথচলায় এ ব্যাংক যেমন নিজে প্রসারিত হয়েছে তেমনি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, শিল্পায়ন, প্রবাসী সেবা, গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমাচন, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে রেখেছে অনবদ্য অবদান। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ যা দেশের ব্যাংকিং গ্রাহকের ১৪ শতাংশ। এ ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা যা দেশের বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ। শুরু থেকেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কাজ করে বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র গ্রাহকের সঞ্চয়ে এ ভান্ডার গড়ে তুলেছে ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষে। সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি মাইক্রোফিন্যান্স কার্যক্রম, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও ডিজিটাল অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং পরিচালনা করছে এ ব্যাংক। সম্পদের দিক থেকে এ মুহূর্তে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি যা দেশের সর্বোচ্চ। এ ব্যাংকের বিনিয়োগে ৩৮ বছরে দেশে প্রায় ৮৪ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের অনেক বড় শিল্প গ্রুপের বিকাশে এ ব্যাংকের অবদান রয়েছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ৩৬ শতাংশ আর টেক্সটাইল খাতের ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এ ব্যাংকটির বিনিয়োগে। তৈরি পোশাক খাতের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নে এ ব্যাংক মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশে ছয় হাজারের বেশি শিল্পকারখানা এ ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। আবাসন খাতের বিনিয়োগে ইসলামী ব্যাংকের মার্কেট শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি। দেশের পরিবহণ খাতের মোট বিনিয়োগে প্রায় ১৮ শতাংশ মার্কেট শেয়ার এ ব্যাংকের। চার শতাধিক নৌ-পরিবহনসহ এ ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত রেজিস্টার্ড যানবাহনের সংখ্যা বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি। ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে দুই হাজারের বেশি কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ব্যাংকের অর্থায়নে দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্যের ১৭ শতাংশ উৎপাদিত হয় এবং ২৬টি পাটকল পরিচালিত হয়। বেসরকারি পর্যায়ে সার আমদানিতে এ ব্যাংকের অর্থায়ন সর্বোচ্চ। পচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য অর্ধশতাধিক কোল্ড স্টোরেজে অর্থায়ন করেছে ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকের অর্থায়নে স্থাপিত হয় দেশের প্রথমটিসহ ৮৫২টি অটো রাইস মিল। ধানের তুষ থেকে রাইস ব্র্যান অয়েল তৈরির কারখানা স্থাপনে প্রথম অর্থায়ন করেছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক দেশের সর্বোচ্চ এসএমই বিনিয়োগকারী ব্যাংক। ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের ৩৮% রয়েছে এসএমই খাতে। এ ব্যাংকের বিনিয়োগে দেশে গড়ে উঠেছে ৩ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। দেশের মোট এসএমই বিনিয়োগের ১৭ শতাংশ এককভাবে ধারণ করে ইসলামী ব্যাংক দেশের শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাবান্ধব ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ব্যাংক শুধু আমদানি বাণিজ্য করেছে ৪.৭ লাখ কোটি টাকার। আর ব্যাংকটির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২.৯ লাখ কোটি টাকার। শুধু ২০২০ সালে এ ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার পণ্য। রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার পণ্য। আর এক বছরে প্রবাসীদের পাঠানো ৪৯ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্সের মাধ্যমও ছিল ইসলামী ব্যাংক। আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে গত বছর এ ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য হয়েছে ১.১৩ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলে কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীদের অবিচল আস্থা অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের এক-তৃতীয়াংশ আসছে ব্যাংকটির মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩.৯ লাখ কোটি টাকা রেমিট্যান্স দেশে এনেছে এ ব্যাংক। রেমিট্যান্স আহরণের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কর্মরত রয়েছেন এবং বিশ্বের ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এর রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুধু দেশে নয়, বিশ্বজোড়া ইসলামিক মাইক্রোফাইন্যান্সের অন্যতম উদ্ভাবক ও মডেল হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে বৈশ্বিক ইসলামী ক্ষুদ্রঋণের ৫০% এককভাবে পরিচালনা করছে এই ব্যাংক। ১৯৯৫ সালে চালুকৃত ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) নামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বর্তমানে দেশের ২৬  হাজার গ্রামে বিস্তৃত। প্রকল্পটি থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন ১৩ লাখের বেশি গ্রাহক। বর্তমানে এ প্রকল্পের অধীনে ৩২শ কোটি টাকার ঋণ ক্রিয়মান রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের ৯২ শতাংশই নারী যা পল্লী নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা পালন করছে। ২০১২ সালে নগর দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প সম্প্রসারণ করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads