• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অর্থনীতি শক্তিশালী করতেই কাজ করছি

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

জনতা ব্যাংকের এমডির মো. আব্দুছ ছালাম আজাদের সাক্ষাৎকার

অর্থনীতি শক্তিশালী করতেই কাজ করছি

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২২

এ সময় সমালোচিত ব্যাংক ছিল জনতা ব্যাংক। এখন আর সেই সমলোচনা নেই। গত তিন বছর ধরে জনতা ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। খেলাপি ঋণ ৪২ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ব্যাংকের সব ধরনের আর্থিক সূচকেও ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে। আর এই সফলতার পেছনের কারিগর ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও।

বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, পুরানো ধ্যান-ধারণা পাল্টে জনতা ব্যাংক এখন আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ একটি ব্যাংক। আমরা প্রকৃত অর্থেই দেশের আমজনতার ব্যাংক হতে চাই। জনতা ব্যাংকটি বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি করোনার মধ্যে প্রতিদিন অফিস করেছেন। এছাড়া করোনার শুরুতে তিনিই প্রথম ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভার্চুয়াল মিটিং কার্যক্রম হাতে নেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১-এ যেভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে জীবনবাজি রেখেছিলেন, ঠিক তেমনি ব্যাংকের উন্নতির জন্য করোনার মধ্যেও জীবনবাজি রেখেছেন। যার ফলে সকল সংকট কাটিয়ে জনতা ব্যাংক লিমিটেড ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন ব্যাংকিং খাতের সবগুলো সূচকে জনতা ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ভেতরে জনতা ব্যাংকের অবস্থান ওপরের দিকে। আমাদের লক্ষ্য চলতি বছরে (২০২২) দেশের সেরা ব্যাংকের স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া। আমরা ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমাদের আর্থিক সূচকগুলোর ধারাবাহিক অগ্রগতি রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের মাপকাঠি। বিশেষ করে চলমান কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক খাত পুনরুজ্জীবিত করার মানসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ জনতা ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে। করোনায় দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রমসহ অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্যই আমরা এ ভার্চুয়াল বোর্ড মিটিং করে আসছি। করোনার মধ্যে ব্যাংকের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবা নিশ্চিতকরণ, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সকল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ আরো বলেন, ২০২০ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া ২০২০ ঋণ ও অগ্রিম খাতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। সেখানে ২০২১ সালের জুন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং-এর মান একধাপ উন্নীত হয়েছে। পরিচালন মুনাফা ২৭২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, শ্রেণীকৃত ঋণ ৮৬৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স আহরণে জনতা ব্যাংক খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে।

একান্ত সাক্ষাতে তিনি জানান, করোনার মধ্যেও পরিচালনা পরিষদের সঠিক নির্দেশনা ও সকলের শ্রমে ব্যাংকের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। করোনা মহামারিতে ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও ‘ফ্রন্ট ফাইটার’ হিসেবে ব্যাংকিং সেবা সচল রেখে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কোভিড ‘প্রণোদনা প্যাকেজ’ বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে করেছে। করোনাকালীন সময়েও ব্যাংকের সব কার্যক্রম চলমান ছিল। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল হিসাবে জনতা ব্যাংককে বিশ্বমানের না হলেও গ্লোবাল ব্যাংকিংয়ের সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারবো। আমরা এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতেই আমরা এসএমই খাতে ঋণ দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আব্দুছ ছলাম আজাদ আরো বলেন, জনতা ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের বড় সফলতা হচ্ছে অন্যান্য ব্যাংকের মতো ঋণ সংক্রান্ত কোনো স্ক্যান্ডেল হয়নি। ফোর্স ঋণের কোনো সুযোগ নেই। কেননা এখন সবাই সচেতন হয়ে গেছে। সকলে জেনে গেছে যে, অন্যায় করলেই শাস্তি পেতে হবে। ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেও মনে করেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার জন্য দায়ী অ্যানন টেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ। তবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অ্যানন টেক্স তাদের ঋণ নিয়মিত রাখার কথা দিয়েছে। চলতি মাসেই তারা তাদের ঋণের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ দিয়ে দেবে। এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র রেডি করা হয়েছে। গতবছর (২০২১ সালে) অ্যানন টেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপসহ সকলের ঋণ নিয়মিত রাখার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠানই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির চাকা অনেকটা সচল রয়েছে। বছরের শেষে জনতা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা, রেমিটেন্স বৃদ্ধিসহ অনেক সূচকেই সফলতা দেখিয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ২০২১ সালে আমরা বড় ঋণ বিতরণের চেয়ে ছোট ছোট বা এসএমই ঋণ দেওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এসএমই ঋণ বিতরণের জন্য ভালো গ্রহীতা খুঁজছি।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি দিনই আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ব্যাংকের সব সেবায় প্রযুুক্তির সংমিশ্রণকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি খাতে জনতা ব্যাংকের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হলো, আমরা নিজেদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে জনতা ব্যাংকের কর্মীরা ৬০টি সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছে। ব্যাংকের সবকটি শাখা কোর ব্যাংকিং সলিউশনের আওতায় আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads