• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাজেটে কর ছাড় চান ব্যবসায়ীরা

ফাইল ছবি

বাজেট

বাজেটে কর ছাড় চান ব্যবসায়ীরা

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০২১

আগামী বাজেটকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ভ্যাট/কর ছাড়ের দাবি ক্রমশই জোরালো হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে করপোরেট করহার কমানো, সর্বনিম্ন করের বিধান প্রত্যাহার, ভ্যাটে সবক্ষেত্রে রিফান্ড প্রদান, কোম্পানির প্রমোশনাল এক্সপেন্সের সীমা তুলে দেওয়া, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, নতুন শিল্প স্থাপনে কর অবকাশ সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ছাড়ের প্রস্তাব এনবিআরের কাছে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

করোনার কারণে গত এক বছরে দেশে বিদেশে লকডাউন এবং জীবনযাত্রা সীমিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই সময়ে রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ। জনশক্তি রপ্তানিতে ধস, বেকারত্ব বৃদ্ধি, কাঁচামাল সংকট এবং উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শিল্প লোকসানের মুখে পড়েছে। সেই সাথে দেশের কর ব্যবস্থাপনায় নানা জটিলতা এবং অসংগতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। একারণে, কর ছাড়ের পাশাপাশি কর সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, ১২০টির অধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে কর ছাড়ের এসব প্রস্তাব দেয়। সবশেষ গত রোববার (১৮ এপ্রিল) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বাজেট কনসালটেটিভ বৈঠকে এসব দাবি তোলা হয়। ভর্চুয়াল সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন,  ‘চলমান করোনার সেকেন্ড ওয়েভের বাস্তবতার আলোকে এবং গত বাজেটের ধারাবাহিকতায় রাজস্ব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’ তিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আগাম করসহ (অ্যাডভান্স ট্যাক্স বা এটি) সব ধরনের অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা দরকার। এফবিসিসিআই সভাপতি আগামী দুই থেকে তিন অর্থ বছরের মধ্যে অগ্রিম আয় কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘অনেকগুলো জায়গায় ভ্যাট ওভারল্যাপিং হয়ে গেছে। কর্পোরেট ট্যাক্স আরো যুক্তিযুক্ত করা দরকার। এছাড়া, যে কোনো ধরনের ইন্ডাস্ট্রির  ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আগে ১ শতাংশ ভ্যাট প্রদানের মাধ্যমে আনা যেতো। এখন সেখানে ২৬ শতাংশ করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিনারিজের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ঠিক করতে হবে। না হলে শিল্প বাধাগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন এই সময়ে ব্যবসায়ীদের এই বিষয়গুলো সরকারের বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

ব্যবসায়ীদের দাবিকে অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, করোনার কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেশ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের আয়-ব্যয়ের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কর আদায়ের বিষয়টি বিবেচনা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় কর্পোরেট কর অনেক বেশি। কিছু কিছু সেক্টরের ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি। যেমন ব্যাংকিং সেক্টর, টেলিকম সেক্টরে ৪০ শতাংশের ওপর কর্পোরেট ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কর্পোরেট ট্যাক্স ২৫ শতাংশের ওপরে হওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’

ব্যবসায়ীদের অনেক দাবিকে অযৌক্তিক মনে করছে এনবিআর।  ব্যবসায়ীদের এ বিপুল ছাড়ের সব দাবি গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, করোনার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানুষের হাতে টাকা দেওয়া। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প এবং অনুন্নয়ন ব্যয় বন্ধ হলে মানুষের হাতে টাকা থাকবে না। ফলে সংকট তৈরি হবে। এর সমাধানেই এনবিআরকে বেশি করে আয় করতে হবে। এনবিআরের আয় বাড়াতে হলে বেশি ছাড়ের সুযোগ নেই।

তবে এ ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনি ব্যবসায়ীদের দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন, ‘বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতিফলন থাকবে। নতুন করে কোনো করভার কারো ওপর পড়বে না।’

রোববারের (১৮ এপ্রিল) সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের দাবিগুলো যুক্তিযুক্ত এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের বাজেট কমিটি এক সঙ্গে আপনাদের দাবিগুলো নিয়ে বৈঠক করে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাছাই করবে।’ তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে এনবিআরকে আয়ের কৌশল নির্ধারণের পরামর্শ দেন।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads