• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রাধান্য পাচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা

সংগৃহীত ছবি

বাজেট

প্রাধান্য পাচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০২১

মহামারীর কারণে দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা। লাখ লাখ মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার পাশাপাশি বেড়েছে দরিদ্রের হার। এ কারণে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও টিকা আমদানিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে এ খাতেও বরাদ্দ বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের চার কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। অনেকের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মানুষের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে পরামর্শ দেন তারা।  যারা একেবারেই দরিদ্র তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয়-রোজগার বাড়ানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য যাতে আর না বাড়ে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা। একই সাথে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় চিকিৎসাসামগ্রী এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি টিকাকার্যক্রম শক্তিশালীকরণেরও পরামর্শ দেন তারা।

এসব কারণে নতুন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট তৈরিতে কিছুটা নতুনত্ব আনতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে। আগামী ৩ জুন (সম্ভাব্য) বিকালে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের বাজেট উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য বাজেটে জায়গা করে দেবো। সরকারের আগামী বাজেট দরিদ্রদের জন্য নিবেদিত থাকবে। এবার জিডিপির চেয়ে মানুষের কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সাথে বাজেটে কর্মহীন মানুষের জন্য যতোদিন কর্ম সৃজন না হবে ততদিন তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার আরো বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল রাখা হবে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ভ্যাকসিনসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আরো প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ থাকছে। সে হিসাবে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ২২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগকে দেওয়া হবে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

এদিকে করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে কোন প্রক্রিয়ায় অর্থসহায়তা প্রদান করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো ঠিক করা হয়নি। শহরের মুদি দোকানি, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল ও দোকান কর্মচারী এবং হকারসহ নিম্নআয়ের মানুষ ও বস্তিবাসী করোনাকালীন কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না। এসব মানুষকে সহায়তা প্রদানের চিন্তা করছে সরকার। কিন্তু কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় সহায়তা পৌঁছানো হবে তা এখনো অনির্ধারিত, যদিও সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। এজন্য ২০১৫ সালে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলই যথেষ্ট।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নতুন করে আলাদা কৌশলপত্রের প্রয়োজন হবে না। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল-২০১৫ অনুযায়ী

করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কারণ ১৫ সালের কৌশলপত্রে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।’

তবে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদের মতে, গ্রামের গরিব মানুষ নানা ধরনের সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু ডেটাবেজ না থাকায় শহরের মুদি দোকানি, পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নিম্নআয়ের মানুষ ও বস্তিবাসী করোনাকালীন কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। তাই ডেটাবেজ তৈরি করে শহুরে গরিব মানুষের জন্য নতুন বাজেটে বিশেষ কর্মসূচি চালু করতে হবে। কারণ পরিবহন শ্রমিক, মুদি দোকানদার, হকার, হোটেল ও দোকান কর্মচারী-এসব মানুষ দিনদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু তাদের কোনো ডেটাবেজ না থাকায় সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না।

করোনা মোকাবিলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রণীত নতুন আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৬ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। বরাবরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটেও (প্রস্তাবিত) ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হলেও আগের মতো মাতামাতি হবে না। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ ধরে নিয়েই বাজেট প্রণয়ন হচ্ছে। এ ছাড়া বাজেটে ৫ শতাংশ হিসাবে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার ঘাটতি ধরে নিয়ে তা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে। ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার, যা ঘাটতি মেটাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে আরো ২৫ হাজার কোটি টাকা তোলা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads