• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
বাজেটে কমছে না কর হার

প্রতীকী ছবি

বাজেট

বাজেটে কমছে না কর হার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০২১

করোনা মহামারীর মধ্যে দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য করপোরেট কর হার কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হলেও বাস্তবে কর হার কমছে না। আগামী অর্থবছরের বাজেটেও ব্যবসায়ীদের উচ্চহারে কর দিতে হবে। তবে পুঁজিবাজারকে চাঙা রাখতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর কিছুটা কমতে পারে। এ ছাড়া আগামী বাজেটে উৎসে কর সামান্য কমানোর ঘোষণাটি আসতে পারে। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাকালে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট কর হার বেশি। ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার কমানো জরুরি বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেন, করপোরেট কর হার কমানো হলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। তবে তাতে রাজস্ব আহরণ কমে যাবে এমন আশঙ্কায় সরকার করপোরেট করে হাত দেয়নি। আগামী বাজেটেও করপোরেট করে তেমন পরিবর্তন আসবে না। অবশ্য আগামী তিন অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য করপোরেট কর কমাতে হবে। তিনি ক্রমবর্ধমান হারে আগামী তিন অর্থবছরে প্রতি বছর ২ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট হারে কমিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশে এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির কর হার ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার ৪০ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যান্য খাতে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ করপোরেট কর রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের করপোরেট কর হার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।

এনবিআর সূত্র বলছে, কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারমুখী করতে আগামী অর্থবছর তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর দুই শতাংশ কমতে পারে। এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানি ছাড়া অন্য কোম্পানির কর হার কমানোর কথা ভাবছে না এনবিআর।

এনবিআরের হিসাবে বর্তমানে আটটি স্তরে করপোরেট কর রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে ৩২ দশমিক পাঁচ শতাংশ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংককে ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত ব্যাংককে ৪০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংককে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ; সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ, তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ এবং লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। এর বাইরে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানকে ১০ ও ১২ শতাংশ এবং সমবায় প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হয়।

দেশে ৭৫ হাজার করদাতা প্রতিষ্ঠান কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছে। এর অর্ধেক অর্থাৎ ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠান বছর শেষে রিটার্ন দিয়ে কর দেয়। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের যদি বার্ষিক লেনদেন ৩ কোটি টাকার বেশি হয়, তাহলে লাভ না হলেও লেনদেনের দশমিক ৫ শতাংশ কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

অথচ প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের করপোরেট কর হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। এসব দেশে করপোরেট কর হার ২০-২৫ শতাংশের মধ্যেই আছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আট দেশের মধ্যে সবার নিচে। অথচ বাংলাদেশে করপোরেট করের হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে যেখানে সাড়ে ৩২ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে, সেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশ থাইল্যান্ডে ট্যাক্স ২০ শতাংশ, মিয়ানমারে ২০ শতাংশ, একইভাবে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ায় ট্যাক্স ২০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ২৯ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৭ শতাংশ, ভারতে পুরনো কোম্পানি হলে ২০ শতাংশ, নতুন কোম্পানি ১৫ শতাংশ।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, তৈরি পোশাকসহ কিছু কিছু খাতসংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার উৎসে কর নাও বাড়তে পারে। যদিও উৎসে কর বাড়ানো-কমানো নিয়ে প্রতি বছরই এনবিআরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এক ধরনের ঠান্ডা লড়াই চলে।

তবে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কর ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজ করার অংশ হিসেবে অনলাইনে কর প্রদানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে আয়কর বিভাগ। আগামী বছর রিটার্ন দাখিলে কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে করদাতার আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার জন্য আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বৈশ্বিক অবস্থানের দিক থেকে ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে করের পরিমাণের (কর-জিডিপি) দিক থেকে (কর-জিডিপি অনুপাত) বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আট দেশের মধ্যে সবার নিচে। দীর্ঘদিন ধরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৮ শতাংশের ঘরে। করোনার কারণে এই অনুপাত ৭ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। এতে ১৪ বছর আগের অবস্থায় ফিরে গেছে বাংলাদেশ।

এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার আঘাত লেগেছে রাজস্ব আহরণে। ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতি যে-কোনো অর্থবছরের চেয়ে বেশি হবে। যে কারণে আগামী অর্থবছর বাজেটে কর খাতে তেমন চমক থাকছে না।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। ফলে নতুন কোনো ফর্মুলা দিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ কম। তবে অর্থনীতি চাঙা করতে স্থানীয় উৎপাদনশীল শিল্পের প্রতি থাকবে বিশেষ নজর। এজন্য রাজস্ব কাঠামোতে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হবে না। তিনি বলেন, মানুষ যাতে ভোগান্তি ছাড়াই রিটার্ন জমা দিতে পারে সেজন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে থাকবে নির্দেশনা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads