• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
অর্থনীতির স্বার্থে স্বাস্থ্যে প্রাধান্য

প্রতীকী ছবি

বাজেট

অর্থনীতির স্বার্থে স্বাস্থ্যে প্রাধান্য

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০২১

অর্থনীতির সাথে স্বাস্থ্যের এমনিতেই যোগসূত্র রয়েছে। তবে তা কখনো এমন ছিল না যে, কেবল স্বাস্থ্যের কারণেই মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতিসহ জনগণের স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকা। কিন্তু করোনা মহামারী স্বাস্থ্যের সাথে অর্থনীতি এবং সাধারই মানুষের জীবনযাত্রাকে আষ্টেপৃষ্ঠে এমনভাবে বেঁধেছে যে, একমাত্র স্বাস্থ্য সুরক্ষাই দিতে পারে অর্থনীতিসহ সব সংকট থেকে মুক্তি। ফলে কেবল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই নয়, অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবারই নজর এখন স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের দিকে।

এ কারণে স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়েই আসন্ন বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। আগামী ৩ জুনের বাজেটে করোনা মোকাবিলাকে প্রধান লক্ষ্য ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বাস্থ্য খাতে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করতে পারেন। এমনটাই আভাস দিয়েছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। সে হিসাবে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। এর বাইরে টিকা কেনার জন্য আরো অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এবারের বাজেট মূলত হবে স্বাস্থ্য বাজেট। যতটুকু জানতে পারছি, স্বাস্থ্য খাতের বাজেট এবার অনেক বড় বাজেট হবে। স্বাস্থ্য খাতের বাজেট ধীরে ধীরে আরো বাড়ানো দরকার। শুধু এক বছরের চিন্তা করলে হবে না। আগামী ৩ থেকে ৪ বছর টানা আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে আরো উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’

অর্থনীতির বর্তমান অবস্থাকে আরো গতিশীল করতে হলে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব টিকা প্রদান কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার ওপরও জোর দেন ড. আতিউর। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির স্বার্থে যেখান থেকে যেভাবেই হোক, যত টাকাই লাগুক টিকা সরবরাহের ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ দ্রুত টিকা নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবসায়ীরা আস্থা ফিরে পাবে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে যেখানে ঘনবসতি সেখানে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে পারলে মোটামুটি সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। গ্রামে একটু পরে দেওয়া হলেও তেমন সমস্যা হবে না।’ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে অর্থনীতিবিদরা দ্রুত টিকা প্রদানের ওপরই জোর দিয়েছেন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আগামী বাজেটে করোনার টিকাকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ লক্ষ্যে বাজেটে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই তা বাস্তবায়ন করা যায়। করোনার টিকা যতদিন সবাই না পাবে, ততদিন একের পর এক ঢেউ আসতে থাকবে।’

স্বাস্থ্য খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর কমানোর সুপারিশ করেছে। সিপিডি’র সিনিয়র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঝুঁকিগুলোকে সামাল দিতে হবে। এখন প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ না।’

এদিকে এবার করোনার কারণে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এর আগের বাজেটে এই খাত অবহেলিত ছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম।

মোট বাজেটের অনুপাতে বরাদ্দ বাড়লেও এবং জিডিপির শতাংশ হিসাব করা হলে বরাদ্দ বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরে মোট বাজেটের ৫.১৫ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। এবার সেটি বাজেটের ৫.৬ শতাংশে উন্নীত হচ্ছে। বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দের বড় একটি অংশ খরচ হবে পরিচালন ব্যয়ে। বাকিটা ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে।

পরিসংখ্যান বলছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এর আগের বছর (২০১৮-২০১৯) এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ১৪ কোটি টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমান ছিল ১৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে এই অর্থের পুরোপুরি সুফল পায়নি নাগরিকরা।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন স্বাস্থ্যের বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এখনো জিডিপির এক শতাংশের কম। গত অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে জিডিপির ০.৯ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অল্প বরাদ্দ দিয়ে কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সম্ভব। তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে সরকারি হাসপাতালগুলোকে অত্যাধুনিকায়ন এবং করোনা মোকাবিলায় নতুন করে দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে। এজন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামীণ চিকিৎসকের সংখ্যা ও সেবার মান বাড়াতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৭৫ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads