নতুন করে বাড়তি করের বোঝায় আসন্ন জাতীয় বাজেট মাঝারি ও বড় মাপের আমানতকারীদের জন্য আরো ‘দুঃসংবাদ’ নিয়ে আসছে। এই বাজেটে ব্যাংক হিসাবে জমানো টাকার ওপর আবগারি শুল্ক আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের।
জাতীয় রাজস্ব বোড-এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আবগারি শুল্ক বাবদ বছরে আদায় হয় তিন হাজার কোটি টাকার মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, কোটি টাকা ব্যাংক আ্য্যকাউন্ট আছে এমন সঞ্চয়কারীর সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। প্রতিবছর এই সংখ্যা গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার করে বাড়ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ওপর নতুন করে চাপ আসবে না। তবে ব্যাংকে যাদের বেশি টাকা জমা আছে তাদের সঞ্চয়ের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হতে পারে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকে টাকা রাখলে কর কেটে রাখে সরকার। একে বলা হয় আবগারি শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি। বছর শেষে আমানতকারীদের আ্য্যকাউন্টে যে পরিমাণ স্থিতি থাকে তার বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখে ব্যাংকগুলো। পরে কর্তিত অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। কারো ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে প্রযোজ্য হারে ওই টাকা আবগারি শুল্ক হিসাবে কেটে নেওয়া হয়।
বর্তমানে ছয়টি স্তরে আমানতকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ আবগারি শুল্ক আদায় করা হয়। সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ এক লাখ টাকার মধ্যে থাকলে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয় না। এর বেশি অর্থাৎ এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে বছর শেষে কেটে নেওয়া হয় দেড়শ টাকা।
নতুন বাজেটে এই স্তরের আমানতকারীদের আবগারি শুল্কের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে।
বর্তমানে পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে আবগারি শুল্ক কাটা হয় ৫০০ টাকা। এই স্তরে অতিরিক্ত ২০০ টাকা শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
১০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে বর্তমানে আবগারি শুল্ক দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। নতুন বাজেটে এই স্তরে আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।
বর্তমানে এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হয় ১৫ হাজার টাকা। এটি বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা করা হতে পারে।
এর চেয়েও বেশি অর্থাৎ যাদের ব্যাংক হিসাবে পাঁচ কোটি কিংবা তার চেয়ে বেশি টাকা স্থিতি বা জমা আছে তাদের থেকে এখন বছর শেষে কেটে রাখা হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। নতুন বাজেটে তাদের সঞ্চয় থেকে আবগারি শুল্ক হিসেবে কেটে রাখা হতে পারে ৪৫ হাজার টাকা।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপের ফলে ছোট আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে মাঝারি ও বড় মাপের আমানতকারী ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। বাড়তি কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে বিবেচনা করেই তাদের ক্ষেত্রে করা বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে।
