• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়ছে গ্যাস বিদ্যুতের দাম

সংগৃহীত ছবি

বাজেট

বাড়ছে গ্যাস বিদ্যুতের দাম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০২২

পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনে টানাটানির মধ্যে আগামী অর্থবছরে প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ায় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয় সংসদে গতকাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা জানান মন্ত্রী।

করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তখন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষভাগ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

আগামী অর্থবছরের ছয়টি প্রধান চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অত্যন্ত কৌশলী হতে হবে। কোনো একটি সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান করা না গেলে তা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে। আমাদের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধি করা। সে লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা অথবা হ্রাস করা। নিম্ন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতি হ্রাস করা হবে এবং একই সময়ে উচ্চ ও মধ্যম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হবে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের বিক্রয়মূল্য পর্যায়ক্রমে ও স্বল্প আকারে সমন্বয় করা হবে।

তবে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা দাম বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপানো হবে না বলে আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল তেলের দাম বেড়ে ১১৩ ডলার ছাড়িয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বিশ্ববাজারে অন্তত ১২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তেল-গ্যাসের পাশাপাশি বৈশ্বিক কমোডিটি মার্কেটে কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে (যেমন গম, ভুট্টা, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও রেয়ার আর্থ খনিজ) রাশিয়া ও ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী দেশ। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যেরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে।

পশ্চিমা দেশগুলো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করায় দেশটির আমদানি-রপ্তানি সংকুচিত হয়ে আসার পাশাপাশি বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনকে ব্যাহত করছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মে ২০২১ এর তুলনায় মে ২০২২ সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ৬৫ শতাংশ, ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৪ শতাংশ, সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ, গমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং চিনির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাপী কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি সামনেও অব্যাহত থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হিসেবে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পণ্যের, যেমন : জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল একই পরিমাণে আমদানি করতে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে ৮.২ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার পরিশোধ করতে হবে।

এগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্য এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন খরচ বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে বলেও বাজেট বক্তৃতায় বলেন মুস্তফা কামাল।

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ব্যয়ের প্রাক্কলন ছিল ৫৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকি বাবদ সরকারের ব্যয় বাড়ছে। তাই ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ব্যয়ের প্রাক্কলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬,৮২৫ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৭০ শতাংশ)। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের প্রাথমিক প্রাক্কলনে এ বাবদ ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৯০ শতাংশ)।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যের সাম্প্রতিক যে গতিপ্রকৃতি তাতে ভর্তুকি ব্যয় আরও ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যা আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads