• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
যোগ্য নেতৃত্ব দেওয়ার কলাকৌশল

প্রতীকী ছবি

ক্যাম্পাস

যোগ্য নেতৃত্ব দেওয়ার কলাকৌশল

  • অরণ্য সৌরভ
  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০২১

প্রায়ই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, কীভাবে ভালো নেতৃত্ব দেব? কীভাবে ভালো লিডার হওয়া যায়? কীভাবে সবাইকে আমার কথা শোনাব? কিংবা কীভাবে সবার মন জয় করব? উত্তরটা খুবই সহজ। একজন চিন্তাশীল মানুষ হওয়ার মাধ্যমে। একজন চিন্তাশীল মানুষ হলেন তিনি, যিনি কোনো বিষয়ের ওপর মতামত দেওয়ায় ক্ষমতাশীল এবং প্রভাবশালী। তবে একজন চিন্তাশীল মানুষ হয়ে ওঠা সহজ নয়। যদিও কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ আর সৃজনশীলতার মাধ্যমে যে কেউই একজন চিন্তাশীল লিডার হতে পারেন। চিন্তাশীল লিডার হতে চাইলে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে নিজের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে উন্নতি করতে। এছাড়া সামাজিক গণমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে নিজের ব্রেন্ড তৈরি করতে পারেন। মনে রাখবেন, উচ্চতর লেভেলে যাওয়ার জন্য একজন চিন্তাশীল মানুষ হতে হবে। আর সৃজনশীল মানুষ ই নেতৃত্ব দিতে পারেন।

কাজকে ভালোবাসুন : চিন্তাশীল নেতা হতে হলে আপনাকে লিখতে হবে, কথা বলতে হবে, ভিডিও তৈরি করতে হবে, ইন্টারভিউ নিতে হবে এবং ভালো ভালো আইডিয়া উদ্ভাবন করতে হবে নানান টপিকের ওপর। অবশ্যই ধৈর্য সহকারে এটা বছরের পর বছর করতে হবে। সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত একই আইডিয়া পুনরায় সামনে নিয়ে আসতে হবে বারবার। সেজন্য আপনি যদি কাজকে ভালো না বাসেন কিংবা বিশ্বাস না করেন তাহলে বেশিদিন এই কাজে টিকে থাকতে পারবেন না। একজন চিন্তাশীল ভালো নেতা হতে পারবেন না।

অভিজ্ঞতা অর্জন করুন : একজন নেতা হতে হলে অবশ্যই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যার মানে আপনাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে, মূল্যবান প্রসঙ্গ আবিষ্কার করতে। এ ছাড়া এগুলো প্রচার করতে নিজেরই চেষ্টা করতে হবে। বার বার একই কাজ করতে হবে। দেখে থাকবেন, একজন দায়িত্ববান বাবা সন্তানকে অন্তত বিশ বছর লালন পালন করেন। সেখান থেকে বাবা নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলি অর্জন করেন। অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তাতে নেতৃত্ব দেওয়াটা সহজ হয়ে যায়।

লিখুন, লিখুন, লিখুন : ‘লিখুন’ এই শব্দটা তিনবার বলার পেছনে কারণ রয়েছে। কারণ লেখার মাধ্যমেই আপনার চিন্তা এবং অনুভূতি মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারবেন। নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন। আপনার উচ্চারিত কথাই বলে দিবে নেতৃত্বে আপনি কৃতকার্য হবেন নাকি অকৃতকার্য হবেন। যে কোনো একটি বিষয়ে যখন আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা লেখার বা বলার মাধ্যমে মানুষের মাঝে শেয়ার করবেন, তখন দর্শক বা পাঠক থেকে পজেটিভ কিংবা নেগেটিভ একটা সারা পাবেন। আর তখনই বুঝবেন আসলে মানুষের কাছে কি মূল্যবান।

সাহায্য চাওয়া : একজন লেখক বলেছিল, আমি স্কুল এবং কলেজে গনিতে বেশ ভালো ছিলাম। আমি লেখক ছিলাম না। আমি লেখালেখি পছন্দও করিনি। কিন্তু আমি জানতাম, আমাকে এটা করতে হবে। সেজন্য এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলাম। লেখালেখি এবং বক্তৃতার বিষয়ে ধারনা পেয়েছিলাম। জেনেছিলাম খারাপ কিছু বলা থেকে নিজেকে বিরত বা সংযত রাখার উপায়। ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ আমাকে গ্রহণ করেননি যতক্ষণ না আমার আর্টিকেল প্রথম সারির পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।

অন্যদের জানুন : আপনার কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে কাজ করতে হলে সবার আগে সেই দল ও দলের সদস্যদের সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এ থেকেই তাদের প্রত্যেককে নিয়ে ধারণা করতে পারেন নেতারা। এ থেকে সদস্যদের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া সৃষ্টি হবে। এ কারণেই দলের সদস্য সম্পর্কে নেতা ছাড়া আর কেউ ভালো জানেন না।

উদাহরণ সৃষ্টি করা : আপনি যদি চান আপনার টিম কঠোর পরিশ্রম করে তাদের সেরা কাজটি উপহার দেবে, তবে সবার আগে আপনাকে তা করে দেখাতে হবে। নেতাকে নিজের হাতে কাজ করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে দেখার চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কিছু হতে পারে না। নেতা যদি তার নিজের কাজটি পূর্ণভাবে করেন, তাহলে অনুসারীরা ফাঁকি দিতে বা কাজে ঢিল দিতে লজ্জাবোধ করে। অন্যদিকে যে নেতা নিজের হাতে কাজ না করে শুধু অন্যদের নির্দেশ দিতে পছন্দ করেন তার অনুসারীরা তার প্রতি অতটা শ্রদ্ধাশীল হয় না, এবং কাজের প্রতি অতটা দায়িত্বশীলও হয় না। নেতা হিসেবে আপনি যদি উদাহরণ সৃষ্টি করতে চান, তবে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সাথে নিজের কাজ করুন। আপনার দেখাদেখি অন্যরাও তাদের কাজটি ঠিকমত করার জন্য উৎসাহিত হবে।

বাস্তব উদ্দীপনা উপলব্ধি করা : নেতৃত্ব প্রদান কোনো গতানুগতিক চাকরি নয়। যদি নেতা সব বিষয় গতানুগতিকভাবে নেন তবে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। নেতাকে তার আত্মোপলব্ধি অনুভব করতে হবে। আদর্শ নেতা নিজের ভেতরটা বুঝকে নিজেকে প্রশ্ন করেন। তাদের নেতৃত্ব প্রদানের কারণ বুঝতে হবে। প্রত্যেক কাজেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুভব করে সে অনুযায়ী উদ্দীপনার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

লাইভ ভিডিও ব্যবহার করা : লাইভ ভিডিও ছাড়াও চিন্তাশীল এবং দায়িত্ববান লিডার হওয়া যায়। কিন্তু এরকম করে আপনি নিজেকে পিছিয়ে রাখছেন। যদি একটি ভালো আইডিয়া মাথায় আসে তাহলে সাথে সাথে ক্রেতা, শুভাকাঙ্ক্ষী, দর্শকদের জানিয়ে বিষয়টা সম্পর্কে ঝালাই করে নেওয়া উচিত। তাতে বিষয়টা সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ এবং মূল্যায়ন সহজে বুঝতে পারবেন।

নেটওয়ার্ক তৈরি করা : অনেকেই এটিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু চিন্তাশীল নেতৃত্ব পরীক্ষা করার জন্য এটি ভালো একটি পন্থা। নতুন নতুন আইডিয়া নিন মানুষকে প্রশ্ন করে, কথা বলে। নিজেকে প্রশ্ন করুন। আত্মবশ্বাসী হোন। পেশাদারিদের মতো কাজ করতে শিখুন।

গণমাধ্যমের প্রতি ঝুকে যাওয়া : মিডিয়ার দিকে ঝুঁকে যাওয়ার জন্য অনেক পথ রয়েছে। সরাসরি সম্পাদকের সাথে দেখা করারও প্রয়োজন পড়ে না। বরং তাদের ঠিকানায় লিখুন। মেইল করুন। বার্তা পাঠান। সম্পূর্ণ স্টোরিটা প্রকাশের জন্য অনুরোধ করুন। স্টোরি স্বয়ংসম্পূর্ণ করে পাঠান। তাদের একটুও কাজ করতে দেবেন না। নিজেই যখন সব ঠিকঠাক করে পাঠাবেন তখন অবশ্যই লেখা প্রকাশ হওয়ার সম্ভবনাও সুযোগ থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখুন, নিজেকে জানান দিন; তাহলে সহজে বিষয়টা মীমাংসা হয়ে যাবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads