• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মাঠে শিক্ষকরা

সংগৃহীত ছবি

ক্যাম্পাস

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মাঠে শিক্ষকরা

  • সিলেট ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২০ জানুয়ারি ২০২২

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা ছয়দিন থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে উত্তপ্ত পুরো ক্যাম্পাস। এ কয়দিন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে গেলেও শাবির কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে এবার শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।

শিক্ষার্থীদের ‘কটূক্তিমূলক ও কুরুচিপূর্ণ’ কথাবার্তার প্রতিবাদে শাবির ৩০-৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা গতকাল বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান।

এসময় তাদের হাতে ‘স্টপ ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট ওমেন টিচার্স’ ‘শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করছি’ ‘শাবিপ্রবির নারী শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড ছিল। এই প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন, অধ্যাপক ড. চন্দ্রানী নাগ, সহকারী অধ্যাপক ফাহমিদা সুলতানা, শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচি নিয়ে এক শিক্ষিকা বলেন, ‘আমরা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলছি না। আমরা বলছি, এই যে শিক্ষার্থীরা, যারা আন্দোলন করছেন, তারা আমাদের বিষয়ে যে কটূক্তি, কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ছড়াচ্ছে, এর প্রতিবাদে আমরা এখানে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়েছি।’

আরেক শিক্ষিকা বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর আসলে আক্রমণ। শিক্ষার্থীদের যেসব মন্তব্য, তা অপমানজনক। এর প্রতিবাদে এখানে আমাদের দাঁড়ানো। আমাদের সঙ্গে সকল শিক্ষকই আছেন, তারাও এখানে এসে দাঁড়াবেন।’

এক শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু তারা যে ধরনের কথাবার্তা বলছে, তা আমরা আশা করি না, গ্রহণ করতে পারি না।’

এদিকে, উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনে অনড় অবস্থানে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতে নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে গতকাল বুধবার থেকে অনশন শুরু করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এছাড়া গতকালও টানা ষষ্ঠদিনের মতো আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারীরা।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনের গতিপথ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা উপাচার্যকে বুধবার (গতকাল) দুপুর বারোটা পর্যন্ত পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন। এসময়ের মধ্যে পদত্যাগের দাবি না মানলে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৪ শিক্ষার্থী গতকাল বিকেল ৩টা থেকে অনশন শুরু করেন। তাদের এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেন আন্দোলনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরাও।

অনশনে অংশ নেওয়া জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য রীতিমতো আমাদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করছেন। আমাদের প্রতি তার কোনো সংবেদনশীলতা নেই। আমরা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। তিনি তাতে গুরুত্ব না দিয়ে বরং মিডিয়ায় আমাদের নামে মিথ্যাচার করছেন।

‘ফলে তিনি উপাচার্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। এখন আমরা তার পদত্যাগ চাই। উপচার্য পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা অনশনে থাকব।’

আন্দোলনকারীদের মধ্যে মুখপাত্র হিসেবে মোহাইমিনুল বাশার রাজ মঙ্গলবার রাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন। লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে নুসরাত আরেফিন জানান, রোববার সন্ধ্যায় উপাচার্য যখন আইআইসিটি ভবনে ছিলেন, তখন তিন দফা দাবি নিয়ে তারা কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কোষাধ্যক্ষ তাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য আইআইসিটি ভবনে যেতে চান। সে সময় পুলিশ বিনা উসকানিতে শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরে উপাচার্য তাদের ওপরই হামলার অভিযোগ তোলেন। এ থেকে বিষয়টা স্পষ্ট যে উপাচার্যের নির্দেশেই নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। যিনি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার নৈতিক ও যৌক্তিক কারণ হারিয়েছেন।

এ কারণে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে তারা আমরণ অনশন করছেন বলে জানিয়েছেন। এই অনশনের কারণে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে এর দায় উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির বলেও জানান আন্দোলনকারীরা।

এর আগে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাত দশটা অবধি সময় বেঁধে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। অর্থাৎ উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবি আন্দোলন এবার কঠোর ও নতুন রূপ নিল।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।

অপরদিকে, শাবির চলমান পরিস্থিতির জন্য সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান করতে বাধা দেওয়া, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন।

এ বিষয়ে ফরিদ জানান, সরকার তদন্ত কমিটি করে কোনো সুপারিশ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।

আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনা করার প্রস্তাব করছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত সময়ে এসে কারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে চড়াও হতে বাধ্য করেছিল, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ায় তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তার আহ্বান জানান উপাচার্য ফরিদ।

উল্লেখ্য, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত শনিবার আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন রোববার সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। এতে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে উত্তুঙ্গে ওঠে আন্দোলন।

গত রোববার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads