• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সন্তানের মনোযোগ বাড়াতে হলে

সংগৃহীত ছবি

শিশু

সন্তানের মনোযোগ বাড়াতে হলে

  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০২১

আট বছরের মাহিন। তার মা পেশায় নার্স। অফিস থেকে বাসায় ফোন করে ছেলেকে বললেন, হোমওয়ার্কটা করে রাখ, বাসায় এসে দেখব। বাসায় ফিরে দেখেন ছেলে টিভিতে কার্টুন দেখছেন। পড়াশোনায় একদম মন নেই। সাত বছরের জারিন। মা গৃহিণী। মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসলে, সারাক্ষণ এইটা-সেইটা, এদিক-সেদিক মুখ করে বসে থাকে। একটু সুযোগ পেলেই মায়ের মোবাইল নিয়ে গেমস খেলতে বসে যায়। পড়াশোনায় মন নেই।

মাহিন বা জারিনের মতো অনেক ছেলেমেয়েই পড়তে চায় না। পড়তে বসলেও মন যেন কোথায় উড়ে বেড়ায়। এ ছাড়া পড়তে বসলে বা পড়ার কথা বললে, ছোট ছেলেমেয়েরা নানান অজুহাত দেখায়। যেমন, তেষ্টা পেয়েছে, টয়লেট চেপেছে, হাতে ব্যথা, পেট ব্যথা ইত্যাদি।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ রিয়াদ চৌধুরী জানান, ‘শিশুদের বয়সের ওপরে নির্ভর করে তার মনোযোগ। ৪-৫ বছরের শিশু ও ৮-১০ বছরের শিশুর মনোযোগ এক হবে না। অভ্যাসের মাধ্যমে মনোযোগ বাড়াতে হবে। সন্তানকে প্রথম দিনেই টানা দু’ঘণ্টা পড়তে বসালে সে বসবে না। সেজন্য প্রথম এক সপ্তাহে আধঘণ্টা পড়তে বসাতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে সেই সময়সীমা বাড়াতে হবে। শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে পারেন। যেমন-

রোজ ছোটাছুটি : শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা ছোটাছুটি করে খেলার জন্য বরাদ্দ রাখুন। ছোটাছুটি করায় ঘাম ঝরবে। ফলে শরীরে এনডরফিন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হতে থাকে। এরপর সুযোগ বুঝে শিশুকে পড়াতে বসালে প্রথম ঘণ্টাখানেক পড়ায় ওর পুরো মনোযোগ থাকতে পারে।

পাজল সলভ : বাজারে এখন প্রচুর পরিমাণে ইন্ডোর গেমস, বই পাওয়া যায়, যা শিশুদের কগনিটিভ স্কিল বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন, নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি বুক, বিল্ডিং ব্লকস, পাজলস ইত্যাদি। স্মার্টফোনের বদলে এই ধরনের খেলা বা বই শিশুদের হাতে তুলে দিলে মনোযোগের সমস্যা অনেকটাই কমে আসতে পারে।

গল্প বলা : ঘুমানোর আগে সন্তানকে গল্প শুনানোর জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন। অভিনয় করার মাধ্যমে গল্প বলতে চেষ্টা করুন, এতে শিশুরা আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। গল্পের মাঝেই শিশুকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিন। এতে শিশু শ্রোতাটির ধৈর্য ধরে শোনার প্রবণতাও তৈরি হতে পারে।

অল্পস্বল্প নির্দেশ : লেখার সময়ে ছোট সোনামণিকে অল্পস্বল্প নির্দেশ দিন। প্রথমে তিনটি দিয়ে শুরু। যেমন, ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ‘পয়েন্টগুলোকে জুড়ে দাও, রং দিয়ে আউটলাইন টানো, ভেতরটা রং করো।’ ধীরে ধীরে নির্দেশের সংখ্যা বাড়াতে থাকুন আর লক্ষ করুন সে কতটা মনে রাখতে পারছে।

খেলার ছলে : নিয়ম করে প্রতিদিন জোরজবরদস্তির মাধ্যমে সব সময় পড়তে বসিয়ে মনোযোগ বাড়ানো যায় না। সেজন্য ছোট ছোট খেলা খেলতে পারেন। ডা. আহমেদ রিয়াদ জানান, ‘ধরুন, আপনি বাজার করতে গিয়েছেন। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যান। ওকে বলুন বাজারে যত লাল রং দেখতে পাচ্ছে, সেগুলো গুনে আপনাকে বলতে। আবার কোথাও হয়তো বেড়াতে যাচ্ছেন, বাচ্চাকে বলুন দুই দিয়ে শেষ হওয়া কটি গাড়ির নাম্বারপ্লেট সে দেখতে পেল, আপনাকে গুনে জানাতে।’ এভাবেও সন্তানের মনোযোগ বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

মা-বাবার দায়িত্ব : সন্তানের সাথে কথা বলুন এবং ওর কথা মন দিয়ে শুনুন। মা-বাবা ধীরস্থির হয়ে, মন দিয়ে সন্তানের কথা শুনলে স্বভাবতই ওর অতিরিক্ত ছটফটে ভাব কমে আসবে। তার হোমওয়ার্ক তাকেই করতে দিন। স্কুলে বকুনি খাওয়ার ভয়ে নিজেরা করে দেবেন না। এতে সে পড়ার গুরুত্ব বুঝতে পারবে। সন্তানের বয়স বারো-তেরো বছর হলে তার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। পড়ানোর সময়ে টাইমার ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি টাস্কের সময় বেঁধে দিন। সময়ের মধ্যে তা শেষ করার অভ্যেস হলে পরীক্ষায় সুবিধে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads