• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ঘুষখোর ও ইলিশ মাছ!

প্রতীকী ছবি

হাস্যরস

ঘুষখোর ও ইলিশ মাছ!

  • কাজী সুলতানুল আরেফিন
  • প্রকাশিত ০৬ অক্টোবর ২০১৮

যাত্রীবাহী লোকাল গাড়ি। গাড়ির ভেতরে মুখোমুখি বসা যাত্রীরা। গাড়ি ছাড়ার অপেক্ষায় আমিও বসে ছিলাম। প্রচণ্ড গরমে ঘামছিলাম। এক সিট এখনো খালি। সেটা পূর্ণ হলে তবেই গাড়ি ছাড়বে। আমরা প্রতীক্ষায় আছি শেষ যাত্রীর জন্য। কেউ কেউ মনে দোয়াও করছেন যেন শেষ যাত্রীটা তাড়াতাড়ি আসে। কারণ গাড়িতে বসে অপেক্ষা করা প্রায় সব যাত্রীর কাছেই বিরক্ত লাগে।

অবশেষে এলেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। চোখে গোল কাচের চশমা। চশমার ফ্রেমটা সোনালি রঙের। জামা-কাপড় ইস্ত্রি করা। বলতে গেলে মোটামুটি স্মার্ট। জামা-কাপড়ে বলে দিচ্ছিল ভদ্রলোক কোনো চাকরিজীবী হবেন। হাতে একটা থলে, যার ভেতরে কিছু নড়াচড়া করছিল। তিনি আসন গ্রহণ করতেই গাড়ির হেলপার হাঁক ছাড়ল। গাড়ি চলতে শুরু করল। সবাই একটু স্বস্তির বাতাস পেল। ভদ্রলোকের মুখোমুখি যিনি বসেছিলেন, তিনি একজন যুবক। ভদ্রলোক গাড়িতে বসামাত্রই সালাম দিলেন। দুলাভাই সম্বোধন করে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে লাগল যুবক। আমরা বুঝতে পারলাম যুবক সম্পর্কে ভদ্রলোকের শ্যালক হলেও আপন নয়। শ্বশুরের এলাকার শ্যালক। কথা বলতে বলতে আচমকা ভদ্রলোকের থলের ভেতর থেকে আবার কিছু নড়েচড়ে উঠল। শ্যালক জানতে চাইল, দুলাভাই বাজারের থলের ভেতর কী?

-‘ইলিশ মাছ, ইলিশ মাছ। তোমরা খেতে পারবে না!’ এ কথা বলেই দুলাভাই হেসে উঠলেন হে হে হে হে হে করে। চেহারায় দাম্ভিকতা ফুটে উঠল।

ভদ্রলোকের এই হাসিতে আমরা দেখতে পেলাম তার সামনে দুই দাঁতের মাঝে একটা বড় ফাঁক। ভদ্রলোকের উত্তর আর কথা শুনে যুবকের চেহারা কালো হয়ে গেল। এমন উত্তর শোনার পর গাড়ির সব যাত্রীর কান খাড়া হয়ে গেল। সবার মনোযোগ চলে গেল পরের কথাবার্তা শোনার জন্য। আমাদের নিরাশ হতে হলো না। যুবক পাল্টা জানতে চাইল, ‘আমরা কেন খেতে পারব না দুলাভাই?’

‘ইলিশ মাছের যে দাম! কী করে খাবে।’ দুলাভাই আবার জবাব দিলেন।

এবার মনে হচ্ছে যুবক একটু খেপেছে। সে বলল, ‘আপনি কোথায় চাকরি করেন? ভূমি অফিসে নাকি! আর কী করেন আমাদের জানা আছে। আর হারাম টাকায় ইলিশ মাছ আমাদের খাওয়ার ইচ্ছে নেই। আপনি হারাম টাকায় ইলিশ মাছ খান আর বোয়াল মাছ খান সবই টয়লেট!’

-‘থাম! বাদ দাও এই প্রসঙ্গ।’ দুলাভাই যুবককে থামাতে চাইলেন! কিন্তু যুবককে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এদিকে ভদ্রলোকের অভদ্র রূপ গাড়িতে প্রকাশ হয়ে পড়ায় তিনি কাঁচুমাচু করতে লাগলেন। ওদিকে শ্যালক বলেই যাচ্ছে, ‘এই ঘুষের কারণে একবার গণধোলাই খেয়েছিলেন! আমরা একথা ভুলিনি। আপনার ছেলে একটা প্রতিবন্ধী...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক কিছু প্রকাশ করা সম্ভব নয়। গাড়ির যাত্রীরা খুব মজা পাচ্ছিল। আমারও এক ঘুষখোরকে সরাসরি দেখা হয়ে গেল।    

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads