• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

হাস্যরস

শাহী নির্বাচনী হালুয়া

  • শাহাদাত ফাহিম
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০১৮

শাহী নির্বাচনী হালুয়া। সময়ের শ্রেষ্ঠ হালুয়া। কমিশন বাবার এই হালুয়া একবার খেলে বারবার খেতে মন চায়। এক নজর দেখলে বারবার দেখতে মন চায়। একবার শুনলে হাজারবার শুনতে মন চায়। আপাতত সবাই দেদার খাচ্ছে এই হালুয়া। বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে ও রিকশায়। এমনকি সাইকেলে চলছে এই হালুয়া গলাধঃকরণ। গেলা যাচ্ছে চা দোকান, মাছবাজার, অফিস, ডাইনিং টেবিল এবং পাকঘরে। বাসরঘরও বাদ যাচ্ছে না। বিদ্যালয় এখন হালুয়াদালয়। এক সময় শিক্ষক তার ক্লাসে ছাত্রদের উদ্দেশ করে জানতে চাইতেন, তোমরা বড় হয়ে কে কী হতে চাও। উত্তরে ছাত্ররা বলত- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজনেসার ইত্যাদির কথা।

এখন সময় হালুয়াময়। শিক্ষক এখন বড় হয়ে কে কী হতে চাও বলে প্রশ্ন করলে ছাত্ররা উত্তরে বলছে- স্যার, আমরা বড় হতে পারব কিনা তারই তো নেই গ্যারান্টি। কারণ নির্বাচন পরিস্থিতি আমাদের জীবনকে অনিশ্চিত করে ফেলছে। নির্বাচনী হালুয়ার কারণে অফিসের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিকে ফেল করে। বস প্রতিটা ফাইলে সাইন করার পূর্বে সামনের লোকটিকে জিজ্ঞেস করছেন, নির্বাচনের কী বোঝেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে বলে মনে হয় নাকি। হলে কেমন হবে। নাহলে কী হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। সামনেরজন বিজ্ঞের মতো করে তার বর্ণনা বয়ান করে যায়। আর ওদিকে ফাইলের জট বাড়ে ট্র্যাফিক জ্যামকে উতরিয়ে। তরকারিতে লবণ ঠিক আছে কি নেই, এটি এখন নগণ্য বিষয়। কারণ ডাইনিংয়ে এখন লবণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নির্বাচনী হালুয়া। পার পেয়ে যাচ্ছে ছোটা বুয়া। কারণ পাকের সময় তো তার সাথে হালুয়া ভাগাভাগি করে খাওয়ায় মত্ত ছিল গৃহকর্ত্রী নিজেই। তাই কে দেবে কার দোষ।

টংদোকানে চা খেতে এসে এখন নিয়মিতভাবে শরবতের বিল দিচ্ছে গ্রাহক। চায়ে চুমুক দেওয়ার আগে পরে যে পরিমাণ নির্বাচনী হালুয়া তারা খাচ্ছেন তাতে চা শীতল শরবত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এখানে নির্বাচনী হালুয়া চলে পাইকারি নিয়মে। আলোচনার ছিরি দেখলে বোঝা যায়, এখান থেকেই কলকাঠি নাড়ানো হয় কাউকে ক্ষমতায় রাখার এবং না রাখার বিষয়ে। এখানে সকালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আরোহণ করানো হয়। দুপুরে ক্ষমতাচ্যুত করিয়ে আরোহণ করানো হয় বিএনপিকে। বিকালে তারেক মিয়াকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে বাধ্য করার পর সন্ধ্যায় সজীব ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে।

বাসর রাত শেষে তাজা স্ত্রীরা সকাল করছে মুখ গোমড়া করে। নির্বাচন শেষে বউয়ের সঙ্গে কোনোদিন শুতে পারবে কি না এই টেনশানে উদাসীনভাবে রাত পার করে দিচ্ছে তাজা দুলারা। হালুয়ার গুণে নিয়মিতভাবে সওদা ওজন করার বেলায় মাপে ভুল করছে দোকানি। ক্রেতা ভুল করছে দেনা টাকা পরিশোধের হিসেবে। ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত প্রেমিক হুঁশে-বেহুঁশে প্রিয়তমার জায়গায় শুধুই মা ডেকে ফেলছে বারবার। প্রিয়তমা এতে মাইন্ড করছে না একটুও। মাইন্ড করার সময় তার হাতে নেই। কারণ তিনি ব্যস্ত এমনই হাইব্রিড প্রেমিক খোঁজার তালে; যে প্রেমিক সহজে যেকোনো সরকারের আমলে তাকে নিয়ে অবলীলায় রেস্টুরেন্টে যাওয়া আসা করতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads