• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার

সংগৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০২১

বোরো ধান উঠলে চালের দাম কমবে, সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে-এমন প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে তেমনটি হয়নি। বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দামে প্রভাব পড়েনি। প্রতিকেজি মোটা চাল কিনতে এখনো ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ধান ও চাল নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা রোধে কঠোর হচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত বিধিবিধানের কঠোর বাস্তবায়ন চায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। অভিযান পরিচালনা করা দপ্তরগুলোকে খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মজুত সংক্রান্ত বিধিবিধানের কঠোর বাস্তবায়ন, অভিযান পরিচালনা ও বাজার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে খাদ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সমপ্রতি পাঠানো এ নির্দেশনার চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবকে।

গত বছরের শেষ দিকে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। মোটা চাল গিয়ে ঠেকে ৫০ টাকা কেজিতে। পরে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারিভাবেও চাল আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে কিছুতেই কিছু হয়নি। আশা জাগিয়ে রাখে বোরো। সে আশাও পূরণ হয়নি। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বোরো ধান উঠলেই কমবে চালের দাম। কিন্তু বোরো ঘরে উঠলেও স্বস্তি মেলেনি ক্রেতাদের। শুরুতে কিছুটা কমলেও চালের দাম ফের বেড়ে সেই আগের জায়গায়ই ঠেকেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের তথ্য নিয়ে গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে চিকন (সরু), মাঝারি ও মোটা, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চিকন চালের দাম ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম ৬ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৬ এবং মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের দাম এক সপ্তাহে ২ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে। খুচরা পর্যায়ে চালের দাম আরো বেশি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, খাদ্যশস্যের (চাল/ধান ও গম) বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে আগে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,  ঢাকা মহানগরে খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আওতায় গঠিত মনিটরিং টিমের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। মাঠ পর্যায়ে খাদ্যশস্যের অবৈধ মজুত নিয়ন্ত্রণ ও বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের দেশের সব জেলায় নিয়মিত অভিযান ও সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, মনিটরিংটা চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য আমরা নিয়মিত তাগিদ দিই। সেজন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। চালের দাম যেভাবে বেড়েছে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম আর সেভাবে কমবে না। গত বছর কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছিল, জুন মাস পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করে আরো উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, আম্ফান ও উপর্যুপরি বন্যায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পূরণ হয়নি। তবে এবার উৎপাদন বাড়বে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে চালের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছিল। সেটা হয়েছিল ভারত থেকে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টন চাল আমদানির কারণে। আমরা এবার ভারত থেকে ১৫ লাখ টন চাল আনতে চেয়ে এনেছি সাড়ে ৭ লাখ টন। যদি আবার ৭০ লাখ টন আনতে পারতাম তবে আগের দামে যেতে পারতাম। সেটা আমরা করিনি, কারণ কৃষককে মারার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আমরা আর ওই পর্যায়ে যাব না, তাই চালের দামও আর  পূর্বের পর্যায়ে যাবে না।

বিধিবিধানগুলো আমরা কিছুদিন পর পরই ডিসিদের মনে করিয়ে দিই, কারণ তাদের হাজার কাজের মধ্যে এটা একটা কাজ। অভিযান পরিচালনা করেন ডিসিরা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আমাদের (খাদ্য বিভাগের) লোকেরা মনিটরিং করে, তাদের তো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই। বিধিবিধানগুলো পালন হয়, তবে মাঝে মাঝে গাফিলতি হয়। এজন্য আমরা চিঠি দিয়ে মনে করিয়ে দিই। মনে করিয়ে দিলে তারা একটু নড়েচড়ে বসবেন, কাজটা ঠিক মতো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads