• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

পণ্যবাজার

বিধিনিষেধের মিশ্র প্রভাব বাজারে

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০২১

করোনা সংক্রমণরোধে সরকারি বিধিনিষেধের মিশ্র প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যের ওপর। এতে অনেক পণ্যের সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম বেড়েছে। আবার সরবরাহ বেশি থাকায় অনেক পণ্যের দাম কমেছে। এছাড়া, ঝড়বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বেড়েছে কয়েক প্রকার সবজির দাম। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম।

অন্যদিকে, বিধিনিষেধের প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতির সব খাতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, অস্বাভাবিক হারে মূল্যস্ফীতি  হয়েছে খাদ্যপণ্যে। জুন মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মে মাসে যা ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুগ্ধজাত ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীতে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এছাড়া, গত জুন মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশে। যা আগের মাসে (মে) ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এদিকে, বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ টাকা মিলছে মাত্র ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ। যেখানে সপ্তাহ খানেক আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো অতি প্রয়োজনীয় এই নিত্যপণ্যটি। আর সপ্তাহ দুই আগে যা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণের মতো। বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দাম বেড়েছে জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বর্ষার কারণে আগের মরিচ গাছগুলো তুলে নতুন করে লাগানোর অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষক। কিন্তু বৃষ্টিতে অনেক মরিচ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

তবে মরিচের দাম বাড়লেও সহনীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সবজির দাম। এতে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা  কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে। লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস, কাঁচকলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হালি, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা আঁটি। তবে মৌসুমি সবজি না হওয়ায় টমেটো ও গাজরের দাম বেশি। প্রতিকেজি টমেটো এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। গত কয়েকমাস ধরে প্রতিকেজি  ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে ডিমের দাম বেড়েছে হালিতে ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা। বর্তমানে লাল ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর সপ্তাহের ব্যবধানে হাঁসের ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ১৫ টাকা। তবে কোরবানির কারণে কমেছে ব্রয়লার  মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সোনালি (কক) মুরগি প্রায় আগের দামে ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, আমদানি ও সরবরাহ বাড়তি থাকলেও লকডাউনের কারণে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় মশলাজাতীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে আদা ও রসুনের দাম। ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় কাঁচা মসলা পণ্য আদা ও রসুনের দাম কমে দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ কাঁচা মসলা পণ্যের আমদানি করেন তারা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলমান লকডাউনের কারণে জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছে না। ফলে ঈদের আগে থেকে পণ্যের দাম দফায় দফায় কমতে থাকে। আদা ও রসুনে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, চীন থেকে প্রতিকেজি আদা আমদানিতে ১৩০ টাকা এবং রসুনে ১২০ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু পণ্য দুটির দাম বর্তমানে কেনা দরের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এতে কন্টেইনার প্রতি পণ্যে ১০-১৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আদা ও রসুনসহ মশলার দাম কিছুটা কমলেও ভরা মৌসুমেও বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকা, মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। গত সপ্তাহে মোটা চলের কেজি ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকা, পোলাওর চাল আগের দামেই  ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার পাইকারি ব্যবসায়ীরা চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিলারদের দায়ী করে বলেন, এই সময় চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেট। তাদের মতে, সরকার যদি প্রতিদিন চালের বাজার মনিটরিং করতে, তাহলে দাম বাড়ত না। দু-একটি রাইস মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বাকিরা ভয় পেত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads