• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

পণ্যবাজার

ইফতার বাজারে আগুন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০২২

এ বছর রমজান মাস শুরুর আগেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে ইফতারসামগ্রীর মূল্য। আর গতকাল রোববার রমজানের প্রথম দিনই রাজধানীর ইফতারসামগ্রীর দাম আরেক দফা বেড়ে হয়েছে প্রায় আড়াই গুণ। এ দেশের মুসল্লিদের ইফতারে পছন্দের তালিকায় থাকা খেজুর, পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, লেবু ও কলার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। হঠাৎ করেই ইফতারসামগ্রীর দাম আড়াইগুণ হয়ে যাওয়ায় বাজারে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।

রমজান মাসে সাধারণত ইফতারের তালিকায় থাকে খেজুর, পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, হালিম, জিলাপি ও বুন্দিয়া। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের ফল, চিঁড়া ও মুড়ি। কিন্তু রমজানকে ঘিরে এসব পণ্যের বাজার বেশ উত্তপ্ত। দাম বাড়ছে হু হু করে। গত বছরের তুলনায় এবার ইফতারপণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ। এর মধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে শতভাগ। তবে রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে ইফতারির খণ্ডকালীন দোকানগুলোতে ইফতারির দাম হোটেল রেস্তোরাঁর চেয়ে খানিকটা কম।

রাজধানীর কয়েকটি ইফতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারির দোকানগুলোয়

এলাকাভেদে বেগুনি, পিঁয়াজু, সমুচা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পিস হিসেবে। এরপরও এবার আইটেমগুলো আকারে কিছুটা ছোট হিসেবে দেখা গেছে। এছাড়া ডিমের চপ ২০ থেকে ২৫ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ৪০ টাকা, ভেজিটেবল রোল ৩০ টাকা, জিলাপি প্রতিকেজি ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দইবড়া প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, টানা পরোটা ৪০-৬০টাকা, কিমা পরোটা ৫০-১০০ টাকা, চিকেন ললি ৬০-৯০ টাকা, বিফ মিনি কাবাব ৬০-১০০ টাকা, চিকেন সিংগার স্টিক ৫০, ভুনা ছোলা প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চিকেন স্টিক পিস ৮০ থেকে ১২০ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ৮০ টাকা, বিফ স্টিক ৬০ থেকে ১২০ টাকা, হালিম (বাটির আকারভেদে) ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাবারের মধ্যে খাসির কাবাব প্রতি কেজি ১০০০, গরুর কাবাবের কেজি ৮০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট প্রতি পিস ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, দেশি ছোট মুরগি রোস্ট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, রমজানে ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ, বেগুন ও ভোজ্যতেলসহ অন্য পণ্যেও মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূলত ইফতারির আইটেমগুলোর দাম বেড়েছে। এসব পণ্য আমরা যদি কম দামে কিনতে পারতাম তাহলে আমরাও কমে দিতে পারতাম।

রাজধানীর অভিজাত শ্রেণির মানুষের ইফতারির বাজার হিসেবে খ্যাত বেইলি রোড। মন্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা, ব্যাংকার, বিভিন্ন সরকারি আমলা ও কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরাই মূলত এখানকার ক্রেতা। তবে সাধারণ মানুষ আসে। এখানে রয়েছে বিখ্যাত ফখরুদ্দিনের ইফতার। এছাড়া রয়েছে স্কাইলার্ক, গোল্ডেন ফুড, আমেরিকান বার্গার, ক্যাপিটাল কনফেকশনারি, রেডকোর্ট, বুমার্স, মিস্টার বেকারস, কেএফসি, পিৎজা হাটসহ সব লোভনীয় সব ফাস্টফুডের দোকান। এসব বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলোয় ইফতারসামগ্রী গতবারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা। তারা জানান, মূলত সুন্দর পরিবেশ ও বাড়তি স্বাদের কারণে বেইলি রোডের ইফতারি কেনেন তারা।

বেইলি রোডে দোকানভেদে রয়েছে দামের তারতম্য। এখানে দইবড়া প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, জিলাপি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, হালিম ২০০ থেকে ১০০০ টাকা, আলু চপ প্রতিপিস ১০-২০ টাকা, বেগুনি ও পিঁয়াজু ১০-২০, ছোলা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাছাই করে কেনার সময় নেই যাদের, তাদের জন্য রয়েছে ইফতার প্যাকেজ। ১২ পদের ইফতার প্যাকেজের দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। রেস্তরাঁয় বসে দুই ধরনের সেট মেন্যু দিয়ে ইফতার করা যাবে। আম্রপালির জুস, শামি কাবাব, হালিম ও ফিরনিসহ ১৭ পদের সেট মেন্যুর দাম পড়বে ভ্যাট ছাড়া জনপ্রতি ৬৫০ টাকা। এসবের দাম বেড়েছে গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

এদিকে রোজার একদিন-দুই দিন আগে যে কলার হালি ছিল ১০-২০ টাকা, সেই কলার হালি গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৬০ টাকায়। শসার দামও ৩০ টাকা কেজি থেকে হয়েছে ৬০-৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যে লেবু বিক্রি হয়েছে ২০টাকা হালি, সে লেবু গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।

রমজান মাসে সাধারণত বেশিরভাগ এলাকাতেই ইফতারের সময় খেজুর মুখে দিয়ে রোজা ভাঙেন রোজাদাররা। সেই খেজুরের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। খেজুর বিভিন্ন ক্যাটাগরির আছে। সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি রয়েছে। তবে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরের খেজুরই বেশি কিনছেন ক্রেতারা।  কাওরান বাজারের খেজুর বিক্রেতা রহিম বলেন, ফরিদা খেজুরের কেজি ২৬০-৩০০ টাকা। সৌদি আরবের মরিয়ম খেজুর ৪০০-৫০০ টাকা। বরই খেজুর ১৪০-২৫০ টাকা।

ফলের দামও বেড়েছে। আপেল ও মাল্টার দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৮০টাকা বেড়েছে। বেদানা ও আঙ্গুর আগের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৪০-৬০ টাকা। কাওরান বাজার ফল বিক্রেতা আতিক বলেন, আফ্রিকান আপেল পাইকারি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। নাশপাতি ফল ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া প্রায় সব ফলের দাম টুকটাক বেড়েছে।

কাওরান বাজারের কয়েকটি মুড়ি ও চিড়ার দোকান ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি মুড়ি ৬০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিড়া বিক্রি হতে দেখা যায়, ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। তারা জানান, মুড়ি গত কয়েক দিনে ১০-১৫ টাকা কেজি দরে বেড়েছে। আর যে চিড়া ৬৮ টাকা করে ছিল সেই চিড়া এখন ৭৫ টাকা দরে কিনতে হয়েছে তাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads