• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এশিয়ার প্রাচীন বটগাছ

কিছু হীনম্মন্য মানুষের অত্যাচারের কারণে ধ্বংস হতে বসেছে সর্ববৃহৎ বটগাছটি

সংরক্ষিত ছবি

সারা দেশ

এশিয়ার প্রাচীন বটগাছ

  • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৮

অযত্ন, অবহেলা আর স্থানীয় কিছু হীনম্মন্য মানুষের অত্যাচারের কারণে ধ্বংস হতে বসেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মালিয়াট ইউনিয়নের সুঁইতলা-মল্লিকপুর গ্রামে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বটগাছটি। এখানে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ নির্মিত সরকারি রেস্টহাউজ থাকলেও সেটি এখন পাখি আর পোকামাকড়ের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক এলেও রাত্রীযাপন বা বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় দিনশেষে তাদের ফিরে যেতে হয় জেলাশহরে বা অন্যত্র। কর্তৃপক্ষ বলছে এটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে বেথুলি মৌজায় এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন বটগাছটি অবস্থিত। বর্তমানে ১১ একর জমি জুড়ে বিদ্যমান এই বটগাছটি। সুঁইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ হিসেবেই এটি সমধিক পরিচিত। এলাকাবাসীর মতে, গাছটি প্রায় দুইশ’ বছরের পুরনো। 

জনশ্রুতি আছে, সুঁইতলা-মল্লিকপুরের এ স্থানটির মালিক ছিলেন পার্শ্ববর্তী রায়গ্রামের জোতদার নগেন সেনের স্ত্রী শৈলবালা সেন। পরবর্তী সময়ে এটি সরকারি খাসজমি হয়ে যায়। কথিত আছে, পূর্বের তিথি অনুযায়ী এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পাঁঠা বলি দিত। এ গাছের নিচে একটি স্থায়ী কালীপূজার আসন রয়েছে, যেখানে মানুষ মানত করে রোগমুক্তির আশায়। এখনো ফি-বছর চৈত্রসংক্রান্তিতে মেলা বসে। ১৯৮২ সালে বিবিসির সংবাদভাষ্যের মাধ্যমে গাছটির আন্তর্জাতিক খ্যাতি আসে। বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু কোনো সচেতন পরিচর্যা নেই এই বটগাছটির। অযত্ন, অবহেলা আর এলাকার কিছু অসাধু মানুষের অত্যাচারে বিলীন হতে বসেছে বটগাছটি। প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে এর ডালপালা। কাটতে কাটতে মূল গাছটিই এখন চেনা দায়, নেই পুরনো চেহারা। ডালপালা কাটার ফলে প্রায় ফাঁকা হতে চলেছে ঐতিহাসিক এই বটগাছটি।  

এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বটগাছটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ১৯৯০ সালে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের উদ্যোগে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে একটি রেস্টহাউজ। কিন্তু সেটিও অযত্ন আর অবহেলার কারণে ধ্বংস হতে চলেছে। বটগাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা জেলা পরিষদ কর্মী দুখু মিয়া জানান, রেস্টহাউজ থাকলেও সেখানে কোনো লোকজন থাকে না। নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুল হক লিটনের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন এই বটগাছটি দেখতে। এ ঐতিহ্যকে গুরুত্বসহকারে কাজে লাগালে এ অঞ্চল হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র এবং এখানে হতে পারে বেশকিছু লোকের কর্মসংস্থান। বিশালাকৃতির বটগাছটির দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখির কলকাকলি মুখরিত শীতল পরিবেশ যে কাউকে বিমুগ্ধ ও অভিভূত করে। এশিয়ার বৃহত্তম এই বটগাছের সার্বিক পরিচর্যা করে এর পূর্বে অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি করেছেন তিনি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায় জানান, ইতোমধ্যে বন বিভাগ থেকে এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট, টয়লেট, প্রাচীর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads