• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
‘প্রয়োজনে নয়ন বন্ড হমু’

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

‘প্রয়োজনে নয়ন বন্ড হমু’

  • পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০১৯

শিক্ষক মাসুদ আলম। পাথরঘাটা উপজেলার ৪৬ নং শিংড়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। অনেকেই বলেন, তিনি দেখতেও যেমন, তার কাজও তেমন খারাপ। এরকম শিক্ষকের দ্বারা কী শিখবে জাতি? এমন প্রশ্ন শিক্ষকসহ স্থানীয় সচেতন মহলের। তার বিরুদ্ধে জন্মদাত্রী মাকে নির্যাতন ও ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওই শিক্ষককে সতর্ক করে দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃদ্ধ মাকে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেন তিনি। বারবার নির্যাতন ও অপমান সহ্য করতে না পেরে অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বিচার দাবি করেছেন বৃদ্ধ মা জাহানারা বেগম (৮০)। একজন শিক্ষক নিজ হাতে মাকে ঘরের বাইরে ও প্রকাশ্য দিবালোকে বারবার মারধর করায় বিষয়টি সর্বমহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘৃণা জানিয়েছেন অনেকেই।

অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ আলম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের মৃত আলী আকবরের ছেলে। জনশ্রুতি রয়েছে, কখনো কখনো মায়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে নয়ন বন্ড হমু, তবুও মায়ের সঙ্গে আপস নয়।’ সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মা জাহানারা বেগম ও অপর ভাইদের মুখ থেকেও তা প্রকাশ পায়।

জাহানারা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি তার স্বামীর নির্মাণ করা ঘরে ছেলে মাসুদ আলমের সঙ্গে থাকলেও প্রায়ই তাকে ঘর থেকে নেমে যেতে বলত এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করত তার স্ত্রীসহ সে। সম্প্রতি মাসুদ আলম ও তার স্ত্রী মোসা. রুমা আক্তার এবং মাসুদ আলমের ছেলে ইফতি জাহানারা বেগমকে বেধম পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ঘর থেকে বের করে দেয়।

বিষয়টি জাহানারা বেগম স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানালে তিনি ওই শিক্ষক মাসুদ আলমকে ডেকে সাবধান করে দেন। এরপর সংসদ সদস্য বাসা থেকে বের হয়ে গেলে পাথরঘাটা কলেজের সামনে আবারো মা জাহানারা বেগমকে মারধর করেন ওই শিক্ষক।

জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত জানালে মাসুদ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় জাহানারা বেগমকে মারধর করে। এতে স্বামীর ঘরে ঠাঁই না পেয়ে অবশেষে বাড়ির পাশে দেবরের ঘরে আশ্রয় নেন তিনি। শিক্ষক মাসুদ আলমকে তার পিতা আলী আকবর ১৯৯০ সালের দিকে ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কাকচিড়া পুলিশ ফাড়িতে সোপর্দ করেন। একাধিক এলাকাবাসী ও শিক্ষক জানান, শিক্ষক মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মাদক ও সুদের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধে তাকে কারাবাসসহ জরিমানাও দিতে হয়েছে। নির্যাতনের কারণ সম্পর্কে মা জাহানারা বেগম বলেন, জোর করে সম্পত্তি লিখে নিতে চাইলে তা না দেওয়ায় আমাকে মারধর করে।

এদিকে বৃদ্ধ মাকে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টিতে চরমভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় শিক্ষক সমিতি। স্থানীয় এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ আলমের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বিভাগীয় উপপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা বরিশালের বরাবর সুপারিশ করেছেন।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, যে শিক্ষক বৃদ্ধ মাকে পেটাতে পারে তার মতো শিক্ষক এ উপজেলায় দরকার নেই, আমি শিক্ষক মাসুদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। কাকচিড়া ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু বলেন, ‘ইউএনও’র কথায় অভিযুক্ত মাসুদ ও তার মাকে স্থানীয়ভাবে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মাসুদ তাতে রাজি না হয়ে বলেন, প্রয়োজনে নয়ন বন্ড হমু, তবুও মায়ের সঙ্গে আপস নয়।’ পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ছগির হোসেন বলেন, যে শিক্ষক বৃদ্ধ মাকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে সে ক িকরে জাতি গড়বে? তার কার্যকলাপ গোটা শিক্ষক জাতিকে কলুষিত করেছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষক মাসুম আলমের বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। আর প্রাথমিকভাবে মাকে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অধীনে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads