• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
পাঁচ মাসেই ১২ কোটি টাকার রাস্তায় ধস!

পাঁচ মাসেই পাবনার ফরিদপুরে এলজিইডির ১২ কোটি টাকার রাস্তার বেহাল দশা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

পাঁচ মাসেই ১২ কোটি টাকার রাস্তায় ধস!

  • চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ নভেম্বর ২০১৯

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় পাবনার ফরিদপুরে এলজিইডির ১২ কোটি টাকার একটি রাস্তা ভেঙে গেছে। চলতি বছরের ৩০ জুন নবনির্মিত সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু পাঁচ মাস পার হতে না হতেই সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে কার্পেটিং সহ বেশিরভাগ জায়গা ধসে গেছে। এ ছাড়া সড়কের আরো কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। ফলে সড়কটিতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা সহ দুই চাকার কিছু গাড়ি চলাচল করছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কের বাকী অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানিয়েছে, ঠিকাদারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি পুনরায় মেরামত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায়।

সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাবনার ফরিদপুর উপজেলা অফিস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী গ্রাম পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটি পায় রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। কিন্তু কাজটি তিনি নিজে না করে বিক্রি করে দেন পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজটি শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলী ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য চিঠ দেন। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই কাজ শুরু করেন। এ সময় ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস কাজটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। এরপর চলতি বছরের ৩০ জুন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। সে সময় ঠিকাদার দায়সারাভাবে ওই স্থানগুলো সংস্কার করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬ কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের ভেতরের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। খালের ভেতরের সড়ক নির্মাণের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর সামান্য কিছু মাটিও ব্যবহার করা হয়। সড়কের ধসে পড়া ঠেকাতে খালের নিচে থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত আরসিসি বন্টক দেয়া হয়েছে। এসব বন্টক বসানো হয়েছে এলোমেলো ও দায়সারাভাবে।

গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও পানি প্রবাহের কারণে অনেক স্থানেই তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আর কিছু জায়গায় গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও শুরু থেকেই তা অর্ধেক হেলে পড়েছিল। এ অবস্থায় গাইডওয়াল ও বন্টক সহ সড়ক ধসে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের কারণেই সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে।

স্থানীয় দেওভোগ গ্রামের বাবুল খান সাংবাদিকদের জানান, সড়ক নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ করা যায়। নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এলে প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু কাজের মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে কিছুদিন যেতেই সড়ক ভেঙ্গে গেছে।

বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সড়ক ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ায় আমরা খুবই হতাশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কের বাকীও অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঠিকাদারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি পুনরায় মেরামত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণ কাজের মান খুব ভাল ছিল। কিন্তু চলতি বছর বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এতে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের পর্যাপ্ত টাকা সিকিউরিটি হিসেবে অফিসে জমা আছে। তার নিজ দায়িত্বেই পুনরায় সড়ক মেরামত করে দিতে হবে। এতে সরকারের অর্থের কোন অপচয় হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads