• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শিকলবন্দি জীবন

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

শিকলবন্দি জীবন

  • শওকত জামান, জামালপুর
  • প্রকাশিত ১০ ডিসেম্বর ২০২০

বয়সের অর্ধেক সময় ধরে শিকলবন্দি মানসিক প্রতিবন্ধী সোহেল। পঁচিশ বছর বয়সের ১৩ বছর বয়স কাটিয়ে দিয়েছে শিকলে বন্দি জীবন। শিকলপরা অবস্থাতেই চলে তার নাওয়া-খাওয়া। রাতে ঘরের মাচার পাশে একটি খুঁটিতে এবং দিনে বাড়ির সামনে কংক্রিটের খুঁটিতে তাকে বেঁধে রাখা হয়। সাত বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বর হলে সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই তার এই শিকলবন্দি জীবন। টাকার অভাবে সোহেলের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দরিদ্র কৃষক বাবা আবু বকর দেড় বছর আগে গত হয়েছেন। এতদিন ধরে তিনিই করেছিলেন সোহেলের সমস্ত দেখভাল। বাবা মারা যাওয়ায় সোহেলের কষ্ট আগের চেয়ে আরো বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে পাগলামিও। তার শিকলবন্দি জীবন নিয়ে এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখেন বিধবা মা জাহানারা বেগম। সোহেলের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের খায়েরপাড়া গ্রামে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সকার ছোট। বোন শিবলির বিয়ে হয়ে গেছে। সুদে ঋণ করে সৌদি আরব গেছে বড়ভাই রুবেল। ভাই বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠায় তাতে সুদের দেনা পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। তার ওপর আছে সংসারিক খরচ। সোহেলের চিকিৎসা আর হয় না।

সোহেলের মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ছিরখল খুইলে দিলেই ও দৌড় মারে। আতাড়ি-বিতাড়ি চইলে যায়! আমি এলখা মানুষ, ওরে কই তনে খুঁইজে আনমু? তার উফ্রে পাড়া-পতিবেশীর দুষ্ট পোলাপানরাও ওরে জ্বালায়। তখন ও ক্ষেইপে যায়। কারো অনিষ্ট যাতে ও না করবের পায়, তারজন্য ওরে ছিরখল পরাই রাখছি। নইলে পোলারে কেউ এমুন কইরে রাহে!’

তিনি আরো বলেন, ‘মাও অইয়েও পোলাডারে আমি ছিরখলে বন্দী কইরে রাখছি। পোলাডার ম্যালা কষ্ট। কী করমু? গরিব মানুষ, এত টেহা-পয়সে নাই যে ওরে বালা চিকিস্সে করামু! ওর বাপ ম্যালা খরচাপাতি করছে। যহন ওষুধপাতি খাওয়াই, তহন কিছুডা বালা ব্যবহার করে। আমার মুন কয়, পোলাডারে ঠিকমুতো চিকিস্সে করাইলে বালা অয়ে যাইবো। কিন্তু এত টেহা পামু কই?’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads