• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কপোতাক্ষ নদে নোনা পানির অনুপ্রবেশ

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

কৃষি-জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব

কপোতাক্ষ নদে নোনা পানির অনুপ্রবেশ

  • কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২১

কপোতাক্ষ নদে হঠাৎ করেই নোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এতে স্থানীয় কৃষি-জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সেচের পানির অভাবে ফসলের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ঘনিয়ে আসছে বিপর্যয়। এরমধ্যে পচতে শুরু করেছে কপোতাক্ষে জমাট বেঁধে থাকা কচুরিপানা।

এলাকাবাসী জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও যশোর জেলার কেশবপুরসহ নদীর তীরবর্তী বসবাসরত হাজার হাজার পরিবার কৃষি জমির সিংহভাগ পানির চাহিদা মেটে কপোতাক্ষ নদ থেকে। এক মাসেরও বেশি হলো কপোতাক্ষ নদে হঠাৎ করেই চিরায়ত ধারা পরিবর্তন করে লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এতে সেচ সংকটে কপোতাক্ষের ওপর নির্ভরশীল মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। কৃষি কাজ, মিল, ছোটবড় কারখানা ও গবাদি পশু পালনে মিষ্টি পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ জানান, হঠাৎ নদীতে লোনা পানি আসায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পরিবার ও কৃষি কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। কৃষি কাজে কপোতাক্ষ নদের পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত কৃষকদের এখন চরম দুরবস্থা।

স্থানীয় চাষি জয়দেব সাহা বলেন, একদিকে অনাবৃষ্টিতে পুকুর জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলসহ সেচকাজে ব্যবহূত মোটর ও স্যালোমেশিনে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কপোতাক্ষ নদীর পানি আগে সব কাজে সিংহভাগ ব্যবহার করলেও এখন নদীতে নোনা পানি আসায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে ইরি ধানের জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। ধান ফোটার মুখে এমন পানি সংকটে কৃষকের চরম ক্ষতি হবে।

বিশাখা তপন সাহা বলেন, আমরা নদীর তীরবর্তী বসবাস করায় কপোতাক্ষ নদের ওপরই নির্ভরশীল শতকরা ৯০ জন মানুষ। নদীতে লবণাক্ত পানি আসায় পশুপালন, নিজেদের গোসল, পরিবারের রান্নাসহ কোনো কাজ করেতে পারছি না। কচুরিপানা পচে পানি দিন দিন দুর্গন্ধ হয়ে উঠছে। লবণাক্ত পানি গরু-ছাগলকে খাওয়ালে রোগাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।

জয়নগরের ধান চাষি স্বরজিত দাস বলেন, নদীতে নোনা পানি এসে ইরি ধানসহ পাট, পানের বরজ ও সবজি আবাদে সেচকাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ধানের ফলন বিঘাতে ২২-২৫ মণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যায়ে সেচের পানির অভাবে ধানের রোগ -বালাইয়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। পানির নানামুখি সংকটের জন্য এখানকার কৃষকদের চরম লোকসান গুণতে হতে পারে।

কপোতাক্ষে নোনা পানি অনুপ্রবেশের বিষয়ে গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, জোয়ারভাটার প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও নদীর তলদেহ ভরাট হওয়ার কারণে সমুদ্রের নোনা পানি অনেক বেশি অভ্যন্তরে চলে আসতে পারে। একইসঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত নির্দেশ করে। এ মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত হবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে বিষয়টির তদন্ত করা। নোনা পানি প্রবেশের কারণে কৃষি ও মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে স্থানীয় কৃষি প্রাণ বৈচিত্র্যে। আমাদের নিজেদেরই রক্ষা করা কঠিন হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads