• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
স্কুলছাত্রের তৈরি পদ্মা সেতু

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

স্কুলছাত্রের তৈরি পদ্মা সেতু

  • ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০২১

ধীরে ধীরে প্রমত্ত পদ্মার বুকে জেগে উঠছে দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে চলেছে বর্তমান সরকার। দীর্ঘতম এই সেতুর নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই জাজিরা পয়েন্টে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সরকারের মেগা এই প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকলেও এক স্কুলছাত্র মাটি ও সিমেন্ট দিয়ে বানিয়েছেন ডামি ‘পদ্মা সেতু’। নিপুণ হাতে গড়া হুবহু পদ্মা সেতুর মতো ডামি সেতুটি দেখতে প্রতিদিনই ঢাকার ধামরাইয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে ভিড় করছেন অনেকেই।

উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বানানো পদ্মা সেতু দেখতে আসছেন আশপাশের এলাকার মানুষ। নিজ বাড়ির পাশেই বাঁশ ও মাটির স্ট্রাকচারের ওপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে বানানো হয়েছে পদ্মা সেতু। মূল পদ্মা সেতুর মতোই হুবহু পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ডামি এই পদ্মা সেতুটি। রেললাইন থেকে শুরু করে মূল সেতু, ল্যাম্প পোস্টসহ সবই রয়েছে এই ডামি সেতুতে। রাতের বেলাতেও ল্যাম্প পোস্টগুলোতে জ্বললে আরো সুন্দর হয়ে উঠছে সোহাগের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রথম অবস্থায় তার কাজে সকলেই হাসি-মশকরা করলেও এখন তার পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন সোহাগ।  সোহাগ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম যেদিনকা পদ্মা সেতুর স্প্যান বসে, ওদিনকা থাইকাই আমি অনুপ্রাণিত যে আমি ওইরকম একটা সেতু করতে চাই। প্রথম ২০১৮ সালে আমি সেতুর কাজ শুরু করি। কিন্তু ২০১৯-২০২০ সালেও কাজ সমাপ্তি দিতে পারিনি। কারণ তখন আর কি আমি মাটি দিয়া বানাইছিলাম। মাটির কারণে ওইটা ভাইঙ্গা গেছে। আবার বৃষ্টির পানিতেও গইলা গেছিল। তবে এ বছরও আমি মাটি দিয়াই বানাইছি। কিন্তু মাটির ওপর হালকা করে সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দিছি, যাতে ছোটমোট বৃষ্টিতে এই সেতুটার মাটি যেন গলে না যায়।’  তিনি আরো বলেন, ‘আমি দশম শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগে পড়ালেখা করতাছি। বাড়ির কাজের পাশাপাশি আমি এই পদ্মা সেতু তৈরি করছি। এতদিন পর এটা বানাইতে পাইরা আমার খুব ভালো লাগতেছে। আগে আমার বাবা-মা আমাকে এটাতে বাধা দিছে। কিন্তু বাড়ির কাজে ফাঁকে ফাঁকে আমি ওইটা করছি। আশপাশের লোকজনও অনেক হাসি-মশকরা করছে।’

‘অনেক লোক আসতেছে দেখতে। যেই দেখতেছে সেই প্রশংসা করতাছে। এই জিনিসটা বানিয়া আমি আনন্দিত অনেক। আমার এলাকাবাসী ও অনেক দূরের লোকজন এইটা দেখতে আসতাছে। আমি খুশি এই জন্য যে, আমার নিজের প্রতিভাটা আমি মানুষকে দেখাতে পারতেছি।’

সুতিপাড়া ইউনিয়নের গার্মেন্ট শ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে শুনলাম যে পদ্মা সেতু তৈরি করছে একটা ছেলে। শুনে খবর পেয়ে আজকে বিকেলে আমি দেখতে আসলাম। ব্রিজটা দেখে অনেক সুন্দর লাগল। মনে করেন, একটা পদ্মা সেতুর যা যা প্রয়োজন ওই ছেলেটা তা করছে। রেললাইন আর যে কয়টা রাস্তা সব করছে। যে ছেলেটা আসলে করেছে তার ব্রেনশক্তি আল্লাহ দিছে। আশা করি, আল্লাহর রহমতে এর চেয়ে সে আরো ভালো কিছু করতে পারবে।

গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মৃধাও এসেছেন স্কুলছাত্র সোহাগের বানানো পদ্মা সেতু একনজর দেখতে।

তিনি বলেন, ‘লোকমুকে আমার খবর পাইলাম যে, এখানে সুতিপাড়া এলাকায় একটা পদ্মা সেতু তৈরি করছে একটা ছেলে। প্রথমে ভাবছিলাম, কি না কি পদ্মা সেতু তৈরি করছে, মনে একটা সন্দেহ ছিল। সেটা দূর করার জন্য চলে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি যে না, আসল যে পদ্মা সেতুটা আছে এবং এটা সেম। আমি তার কাজে খুব সন্তুষ্ট। সে একটা ছোট ছেলে ও দশম শ্রেণিতে পড়ে। এই রকম একটা কাজ এই ছোট ছেলের মাথায় আসছে আমার অবাক লাগছে। দোয়া করি ভবিষ্যতে সে আরো সামনে এগিয়ে যাক এবং বাংলাদেশের একজন অনেক বড় প্রকৌশলী হোক।’

সোহাগের বাবা সুলতান উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকার যে পদ্মা সেতু তৈয়ার করতেছে ওইডাতো সবাই যাইয়া দেখতে পারে না। আমার ছেলে মাটি দিয়া যাই করছে সব সময় লোকজন আসে। দেখে ভালো বলতাছে। আমার খুব আনন্দ লাগতাছে। আমি অনেক দিন নিষেধ করছি। কয়েক বচ্ছর (বছর) চেষ্টা করছে উ (সোহাগ), পারে নাই। এই বচ্ছর (বছর) আইসা করবার পারছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি তো চাই যে রকম কাজ করছে এহন, ভবিষ্যতেও এই রকম ভালো কাজ করুক। কিন্ত হ্যার জন্য সরকারের সাহায্য লাগবো।’

সুতিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি নিজেও গিয়া পদ্মা সেতুটা দেইখা আইসি। অনেক সুন্দর হয়েছে কাজটা। ছেলেটা আসলে অনেক মেধাবী। সে আমাদের এলাকাকে সবার কাছে পরিচিত করেছে। প্রতিদিনই লোকজন সেতুটা দেখতে আসতেছে। আমরা এলাকাবাসী ওরে নিয়া গর্বিত। ভবিষ্যতে সোহাগ ভালো কিছু করলে আমার কাছে যে-কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads