• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
শ্যামনগরে সুপেয় পানির সংকট

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

শ্যামনগরে সুপেয় পানির সংকট

  • কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২১

জেলার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে সুপেয় পানির সংকট। বৈশাখী খরায় শুকিয়ে গেছে খাবার পানির পুকুর। নলকূপের পানি নোনা। খাবার পানি মিলছে না কোথাও। এক কলসি পানি সংগ্রহ করতে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে দিতে হচ্ছে লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর মিলছে এক কলসি পানি।

শ্যামনগর কৈখালী এলাকার বাসিন্দা আকবার হোসেন জানান, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের জয়াখালী গ্রামে সরকারিভাবে খাবার পানির জন্য একটি পুকুর খনন করা আছে। কিন্তু পুকুরটি প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছে। মাছের খাদ্য প্রয়োগ করায় পুকুরের পানি খাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সরকারি ওই পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহে বাধা প্রদান করছে প্রভাবশালীরা। পুকুর থেকে পানি সংগ্রহের নিমিত্তে স্থাপিত ফিল্টারের পাইপ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গরমে বার বার প্রভাবশালী মহলের কাছে আকুতি জানালেও তারা কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। পুকুর মালিক অমল প্রামান্য বলেছেন, পুকুর থেকে বিভিন্ন জায়গার মানুষ পানি নিয়ে যাচ্ছে। এতে পুকুর শুকিয়ে যেতে পারে সেজন্য তিনি কাউকে পানি দিতে চাচ্ছেন না। এদিকে খাবার পানি না পেয়ে স্থানীয়রা পড়েছেন চরম বিপাকে।

একই এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, এক কলসি পানির জন্য মানুষ তিন-চার ঘণ্টা প্রচণ্ড রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। তারা ৩/৪ কিলোমিটার দূর থেকে এসে জয়াখালী মোড় সংলগ্ন আকিজ কোম্পানির তৈরি পানির ফিল্টার থেকে পানি নিচ্ছে। কিন্তু ফিল্টারে যে পানি আছে তা দুই একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপর যে কি হবে তা কেউ জানে না। এ অবস্থা শুধু কৈখালী ইউনিয়নে নয়, পার্শ্ববর্তী রমজাননগর, ঈশ্বরীপুর, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ গোটা উপকূলে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান শ্যামনগর সদরের আজিজুর রহমান, বুড়িগোয়ালিনীর আব্দুল হালিম, মুন্সিগঞ্জের বেলাল হোসেন, পিযুষ বাউয়ালিয়াসহ অনেকেই।

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা লিডার্সের পক্ষ থেকে সুপেয় পানি সংকট নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার বিশ্বাস জানান, খরায় খাল-বিল-পুকুর শুকিয়ে গেছে। নলকূপেও উঠছে না ঠিকমতো পানি। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানির জন্য এসব এলাকায় এক প্রকার হা-হা-কা-র অবস্থা। তিনি আরো জানান, সুপার সাইক্লোন আম্পানে উপদ্রুত উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিরাপদ খাবার পানির দাবিতে সমপ্রতি কয়েক দফা মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

কলেজ শিক্ষক সামিউল মনির বলেন, সুপার সাইক্লোন আম্পানে উপকূলের বেড়িবাঁধ ভেঙে সর্বত্র নোনা পানি ঢুকে পড়ে। বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার একমাত্র পানির উৎস পানির আধার (পুকুরগুলো)। কোথাও কোনো সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় এনজিও লিডার্স পানির ব্যবস্থা করছিল। কিন্তু দশ মাস পর তারাও দুদিন পানি দিতে না পারায় সংকট এখন তীব্র। এ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে পানির ব্যবস্থা না করলে মানুষ তীব্র পানি সংকটে পড়বে। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার বলেন, বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় খাবার পানির সংকট নিরসনে সেখানে একটি অসমোসিস পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। তবে অন্যান্য জায়গায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে তিনি উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তিনি আরো জানান, উপকূলবর্তী ইউনিয়নগুলোতে সুপেয় পানির চরম সংকট নিরসনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর বরাদ্দ পাওয়ার প্রস্তাব করেছি। মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অতি দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউটশনাল রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (এক লাখ লিটার ক্যাপাসিটি) ১০০টি, ৬০টি পুকুর পুনঃখনন, হাউসহোল্ড বেসিস রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, গভীর নলকূপ স্থাপন, রিভার্স অসমোসিস প্ল্যান্ট স্থাপন, পিএসএফ সোলার স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উপকূলে আর পানির কষ্ট থাকবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads