• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
দখলদারদের আগ্রাসনে কংস নদীর মৃত্যু

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

দখলদারদের আগ্রাসনে কংস নদীর মৃত্যু

  • আব্দুল কাইয়ুম, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) 
  • প্রকাশিত ১১ মে ২০২১

কংস নদী। এ যেন রূপকথার গল্প। যে নদী দিয়ে চলত জাহাজ, ধান, পাটবোঝাই সারি সারি পালের নৌকা। জেলেরা ধরত মাছ। গোসল ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা হতো পানি। কোথায় সেই নদী। নতুন প্রজন্মের কাছে নদীর বৈচিত্র্যময় রূপকথার গল্পের মতো। কারণ, নদীর কোনো অস্তিত্বই নেই। অথচ কাগজ-কলমে আর মানচিত্রে এখনো কংস নদী বিদ্যমান।

কোথায় কংস নদী : স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ লোকদের দেওয়া তথ্য ও মানচিত্র অনুযায়ী কংস নদীর শুরু পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো গেটের উত্তরে আজিবপুর হয়ে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে মিজমিজির ভেতর দিয়ে ফতুল্লা হয়ে পশ্চিমে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। আনুমানিক ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ থেকে ৭০ ফুট প্রশস্থ এই নদীর প্রাণ ছিল পূর্ব-পশ্চিমের দুইটি মুখ। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে কংসের সঙ্গে ৯টি শাখা খাল, ২১০টি আউটলেক ও দশটি নিস্কাশন খাল যুক্ত ছিল। এসব খালের দৈর্ঘ্য ছিল মোট ১৮৬ কিলোমিটার। খরা মৌসুমে আবাদি জমিতে পানিসেচ দিতে ও বর্ষায় পানি নিষ্কাশন করতে সরকারিভাবে খালগুলো খনন করা হয়। তথ্য মতে, ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগে তুরার কাছে গারো পাহাড় থেকে এ নদীর উৎপত্তি। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, পূর্বধলা ও দুর্গাপুর থানা হয়ে নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নারায়ণগঞ্জে মিলিত হয়।

কংস নদীর নৈপুণ্য : একসময় এই নদী দিয়ে নৌকায় চড়ে লোকজন ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার, মিজমিজি আব্দুল আলিপুল বাজার ও ফতুল্লার পাগলা বাজারে আসা-যাওয়া করত। ঢাকায় যাওয়ার নৌপথও ছিল এই নদী। দূরের ব্যবসায়ীরা পালের নৌকায় করে ধান,পাট ও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসত বাজারে। অত্র অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি ফসলের সেচ সুবিধার প্রাণকেন্দ্র ছিল নদীটি। স্থানীয় জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। গোসল ও রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো নদীর পানি। দেশের অন্য জেলায় নদীটি প্রবাহমান থাকলেও সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার অংশ অদৃশ্য হয়ে পড়েছে।

কংস নদীর মৃত্যু : তথ্য মতে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি সেচব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ষাটের দশকে ডিএনডি বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রথমে কংস নদীর দুইটি মুখ আটকে দেওয়া হয়। নদীটির বুড়িগঙ্গা ও শীলক্ষ্যার সংযোগ হিসেবে মূল প্রবাহ বন্ধ করে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ বসানো হয়। তখন থেকেই কংসের নাব্যতা হারাতে থাকে। বাড়তে থাকে ডিএনডি এলাকায় বসতির সংখ্যা। বেদখল হতে থাকে কংসের সঙ্গে যুক্ত খালগুলো। নদীর প্রতি নজর পড়ে প্রভাবশালী মহলের। তারা শুরু করে নদী দখলের প্রতিযোগিতা। দখলদারদের আগ্রাসনে আজ নদীটির বিলুপ্তি ঘটে। নদী ভরাট করে গড়ে তুলা হয় বহুতল ভবন, মিলকারখানা, আবাসন, দোকানপাটসহ নানা ধরণের স্থাপনা। ফলে বাস্তবতা দেখে কল্পনাও করা যাবেনা এটা একসময় নদী ছিল। দখল ভারাটেই জীবননাশ হয় নদীটির।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা : কংস নদী দখল মুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। সর্বশেষ গত চারদলীয় জোট সরকার আমলের মাঝামাঝি সময়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে ফিরে আসতে হয়। এখন এই নদী দখল ও অস্তিত্বহীন বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাই অফিসিয়াল কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads