দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। আর এই ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা । ঈদের আনন্দকে উপভোগ করতে ছোট বড় ধনী দরিদ্র সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে এ কেনাকাটায় । সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ধনীদের পাশাপাশি মধ্য ও নিন্মআয়ের লোকজন তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এই আনন্দ উপভোগ করতে কেনা কাটায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। শত কষ্টের মাঝে তারাও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোঁটাতে নতুন পোশাক কিনছেন। এদিকে শেষ মুহুর্তে এসে মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে যেন তিল ধরার ঠাঁই না থাকলেও
মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষদের ঈদের কেনাকাটার ভরসা হচ্ছে ফুটপাতের দোকান। সেখানে ও নারী পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। বিপুলসংখ্যক ক্রেতা সমাগমে খুশি ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে পৌর শহরের সড়ক বাজার মোটর স্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,পৌর শহরের সড়ক বাজারের মটর স্ট্যান্ড মার্কেট, সিটি কর্নার মার্কেট, সরকার প্লাজা, গোল্ডেন প্লাজা, সিঙ্গাপুর মার্কেট, খান টাওয়ারসহ বিভিন্ন মার্কেটে নারী পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। চলছে জমজমাট কেনা বেচা।
প্রতিটি মার্কেটে শোভা পাচ্ছে স্কার্ট, টপস, থ্রিপিছ,জিন্স পেন্ট, জামদানি শাড়ি, বেনারশি, কাতান, সিল্ক, জর্জেট জয়পুরি, ছেলেদের নবাবী পাঞ্জাবী,শেরওয়ানী, ফতুয়া, টি শার্ট প্যান্ট এবং ছোট ছেলে মেয়েদের শাড়ী ও বাহারি ডিজাইনের তৈরি পোশাক।
তাছাড়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে অলিগলি ও ফুটপাতে গড়ে উঠা ছোট বড় দোকানগুলোতে ভিড় কমতি নেই। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষদের তাদের পরিবার পরিজনের পছন্দের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন। ওইসব ফুটপাতের দোকানগুলোতে যেন ক্রেতাদের তিল ধরার কোন জায়গা নেই । নারী পুরুষের উপচেপড়া ভিড়। তবে বছরের অন্য সময় ফুটপাথগুলোতে দোকান সংখ্যা কম থাকলেও ঈদ উপলক্ষে দোকান বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফুটপাতের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে শিশুদের পোশাক, জুতা, থ্রি-পিস, শার্ট ও লুঙ্গিসহ আছে অন্যসব পণ্য। শার্ট ১০০ টাকা থেকে উপরে ৪০০ টাকা, জিন্স প্যান্ট ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টি-শার্ট ৫০ থেকে ২৫০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ২০০ থেকে ৫৫০ টাকা, ফ্রক ও টপস ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে স্বল্প দামে কিনতে পেরে সবাই খুশি।
উপজেলার আজমপুর এলাকার সবজি বিক্রেতা মো. হারুন মিয়া বলেন,পরিবারে তার ১ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে। ঈদ পোশাক কিনতে তিনি ছেলে মেয়েকে নিয়ে আখাউড়ায় এসেছেন। মার্কেটগুলোতে পোশাক বেশী দাম থাকায় ফুটপাতে দোকানগুলোতে সাশ্রয়ী দামে ছেলের জন্য ১টি শার্ট ১টি প্যান্ট ও মেয়ে জন্য একটি জামা মোট ৯০০ টাকায় কিনেছেন। এই পোশাক মার্কেট থেকে কিনলে দেড়হাজার টাকা লাগতো। ফুটপাত থাকায় নিন্ম আয়ের লোকদের কেনা কাটা অনেক ভালো হয়েছে।
মসজিদ পাড়া এলাকার গৃহিণী লিমা আক্তার বলেন, অনেক্ষণ ধরে মার্কেটে ছেলের জন্য পাঞ্জাবি ও শার্ট দেখছি। কিন্তু টাকায় কম থাকায় কেনা যাচ্ছে না। কোন উপায় না পেয়ে ফুটপাতের দোকান থেকে ৫৫০ টাকায় শার্ট ও পাঞ্জাবি কেনা হয়।
মো. ফিরোজ মিয়া বলেন স্ত্রী, ছেলে ও বাবার জন্য নতুন কাপড় কিনতে আল্লাহর উপর ভরসা করে আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি থেকে তিনি বের হয়েছেন। সড়ক বাজার মোটর স্ট্যান্ড এলাকায় ফুটপাতে গড়ে উঠা দোকান থেকে ছেলের জন্য ১টি শার্ট , বাবার জন্য ১টি পাঞ্জাবি কেনা হয়েছে। স্ত্রীর শাড়ী কিনতে মার্কেটে দেখছেন।
সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের মো. তাজু মিয়া বলেন, এমনিতেই আয় রোজগার কমে গেছে। সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তবে ঈদ বলে কথা। তাই ফুটপাত ছেলে মেয়ের জন্য ৬৫০ টাকা দিয়ে জামা কেনেন তিনি।
ফুটপাত ব্যবসায়ী মো. আল-আমিন বলেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বেচা কেনা বাড়ছে। মধ্য নিন্ম আয়ের লোকজনরা এখান থেকে মালামাল কিরছেন। চাহিদানুযায়ী পোশাক দিতে পারলে বিক্রির পরিমাণ আরো বাড়তো। তবে কেনাবেচা বেশ ভালো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সড়ক বাজারের ব্যবসায়ী মো. আবু ছায়েদ মিয়া বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে ইতোমধ্যে তাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে দোকানপাট খুলে দেয়ায় বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে।
আসমা আক্তার বলেন, এমনিতেই করোনাই ভয় সবসময় কাজ করে। তাছাড়া সামনে ঈদ আসছে তাই সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন কাপড় কিনতে আল্লাহর উপর ভরসা করে আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হয়েছি। দ্রুত কেনাকাটা করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবো।