• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
এবার স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

এবার স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০২১

অফিস খুলেছে গতকাল রোববার। তাই ঈদের ছুটিতে গ্রামে ছুটে যাওয়া মানুষ এবার ঢাকায় ফিরছেন স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে। যেভাবে হুড়োহুড়ি, গাদাদাদি করে নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই করোনাকে তুচ্ছ করে ফিরছেন তারা। এর মধ্যে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলার কর্মস্থলে ফিরছেন।

গতকাল রোববারও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও কাঁঠালবাড়ি ঘাটে প্রতিটি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের ছিলো প্রচণ্ড ভিড়। ফেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীর চাপ থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ নেই। ঘাটে পৌঁছে সহজেই ফেরি পার হতে পারছেন। ফেরি চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল।

দেখা গেছে, করোনার ঝুঁকি নিয়েই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট দিয়ে হুড়োহুড়ি করে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। এই রুটে শনিবার সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ কম থাকলেও রোববার সকাল থেকে চাপ বাড়তে শুরু করে। যে ভোগান্তি নিয়ে তারা বাড়ি ফেরেন, ঠিক সেই ভোগান্তি নিয়েই ফিরছেন ঢাকায়। রীতিমতো এ নৌরুটে মানুষের ঢল শুরু হয়েছে।

ফেরিঘাটে আসা কয়েকজন যাত্রী জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় সড়ক ও ফেরিঘাটে তাদের চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এ জন্য সেই ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে এবার ঈদের একদিন পর কর্মস্থলে রওনা হয়েছেন। সরকারের বিধিনিষেধের কারণে দূরপাল্লার বাস না চলায় সড়ক-মহাসড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। জেলার অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে তারা ঘাটে পৌঁছেছেন। ঘাট পার হয়ে আবারো একই কায়দায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ঈদের আগে ১৭টি ফেরি চলাচল করছিল। এর মধ্যে একটি ফেরি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফিরে গেছে। বর্তমানে এই নৌরুটে ছোট বড় ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। ছুটি শেষে যাত্রী ও ছোট যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়লেও পারাপারে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

এদিকে বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া উভয় ঘাটেই রোববার ছিল কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভিড়। সকালে ভিড় কম থাকলেও বেলা ১১টা থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে এই রুটে। বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, রোববার সকালে যাত্রীদের চাপ কম থাকলেও বেলা ১১টার পরে চাপ বাড়তে শুরু করে ঘাটে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন পরিবহনে করে ঘাটে আসছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় শুধু ফেরিতে পার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে ফেরির সংখ্যা বেশি থাকায় কিছুটা দুর্ভোগ কম হচ্ছে। পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের সংখ্যাও কম রয়েছে। নৌরুটে রো রো, ডাম্প, মাঝারিসহ ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ঢাকাগামী যাত্রী আফজাল হোসেন জানান, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় এবার কাজে ফিরতে হবে। তাই ঢাকা যাচ্ছি। ঘাটে চাপ থাকলেও বাড়ি ফেরার সময় যে ভোগান্তি হয়েছে, এবার তা কিছুটা কম। ঢাকাগামী যাত্রী আফরিন জানান, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। গাড়িতে বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তি আগের মতোই আছে। ফেরিতেও ভিড়।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ঢাকাগামী যাত্রীদের যেমন চাপ রয়েছে তেমনি ঘরে ফেরা মানুষের চাপও রয়েছে। সবগুলো ফেরি চলাচল করছে নৌরুটে।

বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, জরুরি পরিসেবার যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু জরুরি যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ছে এবং গাদাগাদি করে পার হচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। শিমুলিয়ায় ঢাকার দিক থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানালেন শফিকুল।

বা‌গেরহাট থে‌কে আসা শরিফুল ইসলাম জানান, নিজ জেলা থেকে তিনি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে বাংলাবাজার ঘা‌টে পৌঁছেছেন। অন্য সময় এই ভাড়া থাকে ৩০০ টাকা। আর বরিশাল শহর থে‌কে আসা সাজিদ রহমান জানান, আমার বাংলাবাজার ঘা‌ট পর্যন্ত আসতেই ৮০০ টাকা খরচ হ‌য়ে গেছে। না এসে উপায়ও নেই, অ‌ফিস খু‌লে গে‌ছে।

কাঁঠালবাড়িতে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ম্যা‌নেজার ভজন কুমার সাহা জানালেন, এই নৌরুটে এখন চলাচল করছে ১৫টি ফেরি। রোববার ভোর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ফেরিতে করেই তারা পার হচ্ছে। আমরা পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যরার ঘাটের পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন।

এ ছাড়া রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, সায়দাবাদ, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ মোটরসাইকেলে করে, কেউ জেলা কেন্দ্রীক গণপরিবহনে ভেঙে ভেঙে, কেউবা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ভাড়া করে, আবার কেউ মিনি পিকআপে করে ঢাকামুখী হতে শুরু করেন। ছুটি শেষে নিজেদের রুটি-রুজি ও কাজের তাগিদে সবাই ফিরছে ঢাকায়। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানী ফের ব্যস্ত হতে শুরু করছে।

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে গতকাল সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের স্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়। আন্তঃজেলা গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। অনেক মানুষকে দেখা গেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ফিরতে। এদিকে ফাঁকা ময়মনসিংহ সড়ক দিয়ে আসা ফিরতি মানুষদের টঙ্গী থেকে হেটে আব্দুল্লাহপুর আসতে দেখা গেছে। তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে আবার অন্য যানবাহনে করে বাসায় ফিরছেন। হাসেম আলী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের চার দিন ছুটি পেয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায় গিয়েছিলেন। ঈদের ছুটি শেষে তিনি রোববার সকালে ঢাকায় ফিরলেন। তিনি জানান, ভালুকা থেকে মিনি পিকআপ ও টেম্পো করে করে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এসেছি। সেখান থেকে একটি বাসে চড়ে টঙ্গী স্টেশনরোড পর্যন্ত এরপর পায়ে হেটে আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত এসেছি। এখন একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর বাড্ডায় বাসায় যাব। আগামীকাল থেকে আবার প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করব। তিনি বলেন, করোনা ঠেকাতে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করেছে। কিন্তু মানুষজন ঠিকই বাড়ি গেছে। কষ্ট করেই গেছে। এখন আমাদের ঢাকায় ফিরতেও কষ্ট হচ্ছে। কাউকেই আটকাতে পারেনি। যদি গণপরিবহন খোলা থাকত তবে এত কষ্ট হতো না। আর বন্ধ রেখেও কোনো লাভ হয়নি।

 

টাঙ্গাইলের আরিফা বেগম কাজ করেন উত্তরায় একটি গার্মেন্টসে। সে জানায় তার পরিবারের সবাই থাকে টাঙ্গাইলে। তাই ঈদের ছুটিতে একা ঢাকায় থেকে কি করবো। তাই বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার ছুটি শেষ হওয়ার এক-দুদিন আগেই ঢাকায় এসে পড়েছি। কাল হয়তো অনেক ভিড় হবে মনে করেই আগে চলে আসলাম। কিন্তু অনেক ভেঙে আসতে হয়েছে। খুব কষ্ট হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads