• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
শান্তিরক্ষীরা আমাদের গর্ব : প্রধানমন্ত্রী

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

শান্তিরক্ষীরা আমাদের গর্ব : প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত। শান্তিরক্ষায় এ দেশের বাহিনী যেখানেই যাচ্ছে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। এটা গর্বের বিষয়। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলতে চাই। গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১ উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।   

শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা পরকে আপন করে নেওয়ার মতো কঠিন কাজটি করছেন। জানি আপনাদের কষ্ট হয়, বৈরী পরিবেশে দায়িত্ব পালন করছেন। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।  সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ ও জটিল জায়গায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা সফলভাবে কাজ করছেন। এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১-এর প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের যুবশক্তিকে বিশ্বশান্তির অন্যতম নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আপনারা বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন। পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের তরুণসমাজ যেন এটা শেখে-শান্তিই একমাত্র উন্নয়নের পথ। শান্তিই নিরাপত্তা ও মানুষের কল্যাণের পথ। সেই পথে যেন সকলে যেতে পারেন বা সেভাবে যেন তৈরি হন, আমরা সেটাই চাই। যখন যে সরঞ্জাম লাগবে, ব্যবস্থা করে দেব।

বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশবাহিনীর তরুণ সদস্যরা একুশ শতকের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। আগামীতে যারা আসবেন তারাও যেন প্রস্তুত থাকেন, সেভাবেই তাদের সরকার তৈরি করতে চায়। শান্তিরক্ষায় কর্মরতদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালন করা হয়।

বিশ্বশান্তি রক্ষায় নিয়োজিতরা কেবল দেশের প্রতিনিধিত্বই করছেন না বরং দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করছেন। তাদের সাহসী ভূমিকা বিশ্ববাসী ও দেশের জনগণ চিরকাল স্মরণ করবে। আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। এটা আমি জাতিসংঘকে আরো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই।

বর্তমানে ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছেন। এই সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮.৪ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এ ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন। নারী পাইলটদের নিয়ে খুব গর্ববোধ করি। এখন সব জায়গায় মেয়েদের একটা ভালো সুযোগ আছে।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সুনাম সর্বত্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরে যখন যেখানে গিয়েছি, সেখানে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গর্বে আমার ‍বুকটা ভরে গেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

যে-কোনো জটিল অবস্থায় অনেক সময় আমরা দেখেছি যে অনেক দেশ (শান্তিরক্ষা মিশনে) যেতে চায় না। যখন আমাদের কাছে বলা হয়েছে, আমি বলেছি, হ্যাঁ, আমরা বাঙালিরা যে-কোনো জটিল অবস্থায়, যে-কোনো বৈরী পরিবেশে থাকার মতো সাহস রাখি। কাজেই আমাদের শান্তিরক্ষীরা পারবে। সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ জায়গা, সবচেয়ে জটিল জায়গাগুলোতেই আজকে আমাদের শান্তিরক্ষীরা অবদান রেখে যাচ্ছে।

আমাদের বাঙালিরা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানে একদিকে যেমন শান্তি রক্ষায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে, অপরদিকে সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে ওখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। তাদের বিশেষ করে সামাজিক যে চাহিদা অনেকগুলো কিন্তু আপনারা নিরূপণ করে দিচ্ছেন। অত্যন্ত দরদি মন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে এটা মনে হয় আমাদের বৈশিষ্ট্য-পরকে আপন করে নেওয়া। তাদের ভালো-মন্দ দেখা, তাদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া। এই কাজগুলো আপনারা করে যাচ্ছেন। শান্তিরক্ষী হিসেবে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকে। তার বাইরেও এই মানবিক দিকগুলো যে ফুটে উঠছে এটিই সবচেয়ে বড় কথা। এজন্য সত্যিই আমি আপনাদের নিয়ে গর্ববোধ করি। আপনাদের এই মানবিক গুণের জন্যই আমি মনে করি বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী নেওয়ার চাহিদাটা বেশি।

আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে আটটি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবির কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী তাদের দক্ষতার কারণেই আজকে আমরা এই উচ্চপদ পেতে সক্ষম হয়েছি।

সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ মানুষকে ভীষণভাবে কষ্ট দিচ্ছে। এ সময় ধৈর্য ও ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমাদের যারা শান্তিরক্ষায় যাচ্ছেন, তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করছি। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যা যা প্রয়োজন সঙ্গে সঙ্গে তা দেওয়ারও ব্যবস্থা করছি।

দেশের মানুষের অর্থনীতির উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান তৈরি করাই আমাদের কাজ। আমরা সেটা করছি। করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। অনেক উন্নত দেশই হিমশিম খাচ্ছে। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের বাংলাদেশে সবাই যাতে নিরাপদ থাকতে পারে বা করোনার কারণে দেশে প্রাণহানি না হয় বা এর প্রাদুর্ভাব বেশি না ছড়ায়। পাশাপাশি আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডও যেন স্থবির না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা সেভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার জন্য শিক্ষা খাতের সমস্যা দ্রুত দূর করার আশ্বাস দেন সরকারপ্রধান।

অনুষ্ঠানে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের পরিবারের সদস্য এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর একটি বিশেষ উপস্থাপনাও পরিবেশন করা হয়। সেনাকুঞ্জ প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন সেনাকুঞ্জে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads