• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

খেলার মাঠ ও খাল দখল করে আশ্রায়ণ প্রকল্প, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

  • খায়রুল আহসান মানিক, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০২১

কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রচুর পরিমানে সরকারী খাস জমি থাকতেও উপজেলার ভানীতে খাল ও রাজামেহারের সৈয়দপুরে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠে তৈরী হচ্ছে আশ্রায়ণ প্রকল্প। এর ফলে ভানীর ৭/৮টি গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা ও রাজামেহারের ৯টি গ্রামের শিশু-কিশোরদের খেলার কোন জায়গা থাকবে না। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর দাবি খাল ও খেলার মাঠ রক্ষা করে বিকল্প খাস জায়গায় আশ্রায়ণ প্রকল্প করা হোক। তারা বলেন, আশ্রায়ণ প্রকল্প যেমন জরুরী, ঠিক তেমনই জরুরী খেলার মাঠ ও পানি নিষ্কাশণের খাল।

ওই দুই এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভানী ইউনিয়নের ভানী গ্রামের উপরে দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির অধিকাংশ এলাকা ভানী গ্রামের সাইফুলের বাড়ির কাছে ভরাট করা হয়েছে। খাল ভরাট করার ফলে খালের উপর থাকা কালভার্টের নিচে
যেখানে পানি প্রবাহিত হবার কথা সেখানে এখন মাটির বাঁধ দেখা যায়। ভেকু মেশিন দিয়ে খালের অধিকাংশ অংশ ভরাট করে চারদিকে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই স্থান থেকে দুইশতগজ দূরে সরকারী খাস জমিতে অবস্থিত একটি পুকুরে ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। সেই স্থান থেকে ড্রেজার মেশিনে মাটি এনে এখানে জায়গা ভরাট করে আশ্রায়ণ প্রকল্প করা হবে।

ভানী এলাকাবাসীর পক্ষে আনায়ার হোসেন, সাবেক মেম্বার মো. মমিন আলী, আল আমিন বলেন, শতবর্ষের পুরোনো এ খালটি ভানী গ্রামসহ আসাদনগর, খিরাইকান্দি, বখরিকান্দি, তেবাড়ীয়াসহ ৭/৮টি গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমির পানি বর্ষাকালে প্রবাহিত হয়ে গোমতী নদীতে নামে। ফলে এই এলাকায় তিন ফসলী ওই জমিগুলো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকে। এ খালটি ভানী এলাকায় ভরাটের ফলে ওই একহাজার একর ফসলী জমি এবং হাজার হাজার বাড়ি ক্ষতির সম্মুখিন হবে।

তারা বলেন, আশ্রায়ণ প্রকল্প যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন পরিবেশ রক্ষাসহ এলাকায় এক হাজার একর জমি রক্ষা করা। সেই সাথে জলাবদ্ধতা থেকে এলাকাকে বাঁচানো। তাদের দাবি ওই এলাকায় আরো অনেক খাস জমি থাকার পরও
উদ্দেশ্যমূলকভাবে এখানে ভরাট করা হচ্ছে। এর ফলে এই এলাকা চরম ক্ষতিরমুখে পড়বে। 

তারাও আশ্রায়ণ প্রকল্প চান, তবে এলাকাকে ক্ষতির হাত থেকে না বাঁচালে ওই এলাকার হাজার হাজার জমির মালিক বা কৃষককে পথে বসতে হবে। এই এলাকার অন্যত্র এর চেয়ে বড় খাস জমি থাকতে এখানে আশ্রায়ণ প্রকল্পটির স্থান পরিবর্তন করে
অন্যত্র সরিয়ে নিতে তারা সরকারে কাছে জোড়দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে, রাজামেহার ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে অবস্থিত এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটিকে শতাধিক বছরের পুরোনো খেলার মাঠ উল্লেখ করে ওই এলাকার আবদুর রহিম, জামাল সরকার, মো. জাভেদসহ এলাকাবাসী বলেন, এটি সৈয়দপুর খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত হলেও আশপাশের বতরা, কটকশর, আন্ধিপাড়, ওখারী, চুলাশ, মরিচা, সাইতলাসহ অন্তত ১০টি গ্রামের শিশু-কিশোর তরুণরা এখানে খেলাধুলা করে।

সৈয়দপুর সরাকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও খেলার মাঠ নেই। এ মাঠটি তারাও খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে। ওই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়াসহ সকল খেলাই এখানে হয়। এ মাঠটি ছাড়াও পাশের ওখারী ও চুলাশ গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় আরো ভালো
সরকারী খাস জমি রয়েছে। বিশাল এলাকার শিশু-কিশোরদের ক্রীড়ামুখী করতে এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটি রক্ষা করতে তারা সরকারের প্রতি জোড় দবি জানান। তারা বলেন, খেলাধুলা যুব সমাজকে অবক্ষয় থেকে রক্ষার মূলমন্ত্র। খেলার মাঠটিকে রক্ষা করে এলাকার উঠতি শিশু-কিশোরদের রক্ষারও দাবি জানান তারা। ওই এলাকার সত্তোরোর্ধ বয়সী মরিচা গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন-আমি যখন খুব ছোট, বাবার হাত ধরে এ মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলাম। এখানে আমার বাবা
খেলেছেন, আমি খেলেছি, আমার সন্তানরা খেলেছে। এখন নাতিরা খেলছে। এটি শতাধিক বছরের পুরোনো খেলার মাঠ। এলাকার বৃহৎ স্বার্থে এ মাঠটি রক্ষা করা জরুরী। তিনি বলেন, আমরা আশ্রায়ণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে নই। তবে খেলার মাঠটি
থাক সেই পক্ষে আছি। তিনি বলেন,আশ্রায়ণ প্রকল্প হোক। অন্যত্র অনেক জয়গা রয়েছে, সেখানে হোক। তাদের প্রশ্ন অন্যত্র সরকারে খাস জায়গা থাকতে এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটি কেন ধ্বংস করা হবে ?

এ দুইটি বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও আশ্রায়ণ প্রকল্পের কুমিল্লা জেলা সভাপতি মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, বিষয়গুলোর প্রতি আমরা অবগত আছি। যে মাঠটির কথা বলা হয়েছে এটি বছরের একটি সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে
বাকি সময় শিশু-কিশোর তরুণরা এখানে খেলাধুলা করে। আর খালটি প্রাকৃতিকভাবেই কিছুটা ভরাট হয়ে গেছে। তবে খাল ভরাট করে গৃহ নির্মাণ করা হবে না। আর খেলার মাঠ নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী
অফিসার ও প্রকল্প কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে দেখে স্থানীয়দের কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন। যদি মাঠরে একটা অংশে আশ্রায়ণ প্রকল্প ও আরেকটা অংশ খেলাধুলার জন্য ছেড়ে দিয়ে স্থায়ী মাঠ তৈরী করা যায় তহলে তারা এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে তা
করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads