• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

বর্ষার শুরুতে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরিতে ব্যস্ততা

  • রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ জুন ২০২১

নরসিংদীর রায়পুরায় বর্ষার শুরুতে মাছ ধরার ফাঁদ বা চাঁই বুননে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগর ও জেলেরা। উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পীরপুর মধ্যপাড়া গ্রামে বাড়ি বাড়ি রাত দিন চলছে চাঁই তৈরির কাজ। যা তাদের চিরাচারিত ঐতিহ্যকে লালন করে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসা। মির্জাপুর ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চল অধ্যুসিত ৬ টি ইউনিয়নেও বেড়েছে বুনন শ্রমিকদের ব্যস্ততা।

মুলি ও মোড়ল দুই ধরনের বাঁশ দিয়েই এ চাঁই তৈরি করা হয়। মূলত এ শিল্পের বেশির ভাগ কারিগরই হলেন নারী। একটি মুলি বাঁশ দিয়ে সাধারণত ছোট মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়, কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। প্রথমে বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা তুলে সেগুলো রোদে শুকানো শেষে শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ। কাজের লোক ব্যতিত পরিবারের নারী পুরুষ, বৃদ্ধসহ শিশুরাও এ কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধাপে একটি পরিপূর্ণ চাঁই তৈরি হয়। পানিতে মাছ চলাচল করতে করতে একসময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না।তাই একে মাছ ধরার ফাঁদও বলা হয়।এ চাঁই খাল, বিল কিংবা ডুবে যাওয়া ফসলি ক্ষেতে আইল কেটে পেতে রাখা হয়। বর্ষাকালে দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বাঁশের চাঁই দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। অতিরিক্ত চাঁই স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রির জন্য ওঠানো হয়। এসব হাট থেকে যেমন খুচরা ক্রেতারা চাঁই কেনেন, তেমনি আবার পাইকাররা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে ।

চাঁই বোনচা নূরুল ইসলাম বলেন, জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তক এই ৬ মাস চাঁই বুনন করে তারা। তবে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এর বিক্রি বেশি হয়। কাঁচামালের (বাঁশ) দর বেড়ে যাওয়ায় এখন চাঁইয়ের দরটাও অনেক বেশি।

মো. রিপন মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, মাছ ধরার ফাঁদ (চাঁই) তৈরিতে বাঁশ আর সুতা ব্যবহার করা হয়। তবে বাঁশের সংকটের কারণে দিনে দিনে এসব মাছ ধরার ফাঁদের দর বাড়ছে। বর্তমান বাজারে আকার ও আকৃতি ভেদে এসব ফাঁদ দু'শত থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে।

ফারুক মিয়া, জানান, এই গ্রামের ১০ থেকে ১২ টি পরিবার জীবিকা নির্বাহের একটি মাত্র ভরসা হিসেবে এ কাজে জড়িত। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাপ দাদার ঐতিহ্য হিসাবে শিখে কর্ম করে চলতেছি। আয়ের উৎস এটাই। পুঁজির অভাবে কিছুটা সমস্যা হলেও চালিয়ে যাচ্ছি। বয়োবৃদ্ধসহ শিশুরাও মাঝে মধ্যে এ কাজে সহায়তা করে যাচ্ছে। ঘরের মেজে, বারান্দয়, উঠোনে কাজ করা হয়। চাঁই তৈরিতে বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন অংশ তৈরি করা হয়। যা আলাদা আলাদা তৈরিতে সুতা বাধার জন্য ১৫ থেকে ২৫ টাকা করে চুক্তিতে অনেকে কাজ করে থাকে। এক সাথে জড়ো করলেই হয়ে যায় চাঁই। সপ্তাহে প্রতিটি পরিবার থেকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টি তৈরি করতে পারি। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপুষকতা পেলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। একটি বাঁশ দুই থেকে তি'শত টাকা দিয়ে কিনে দশটা চাঁই বানানো যায়। পাইকার বাড়িতে এসে প্রতিটা দু'শত টাকা দরে কিনে নেয়। খুচরা বাজারে এর মূল্য আরও বেশি হয়।

মাছ ধরার ফাঁদ বুননে নিয়োজিত এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা ৬ মাস চাঁই বুনন, বিক্রি ও মাছ ধরার কাজ করে। বাকি ৬ মাস এই টাকা দিয়েই জীবিকা নির্বহ করে থাকে।নিজেদের অল্প যে পরিমাণ ফসলি জমি আছে তাতে মাত্র এক মৌসুমে ধান চাষ করা যায়। অবশিষ্ট সময় তা পানিতে তলিয়ে থাকে।পূর্বপুরুষ থেকে শেখা এই একটিমাত্র কাজই তারা জানে।তবে নিজেদের ছেলে মেয়েদেরকে চাঁই বুনন শিখানোর পাশাপাশি লেখাপড়াও করাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads