• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সারা দেশ

আখাউড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে খুশি ৫০ পরিবার

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০২১

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় দ্বিতীয় ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৫০টি পরিবারের হাতে বাড়ির দলিলপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা আজ রোববার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে গৃহ প্রদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্ধোধন করেন। এরপর ওইসব উপকারভোগীদের হাতে বাড়ির দলিলপত্র হস্তান্তর করা হয় ।

এ উপলক্ষে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ ভূমিহীন পরিবারের লোকজন স্বত:স্ফুর্ত ভাবে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়ত উদ-দৌলা খাঁন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা অতিরিক্ত রাজস্ব কর্মকর্তা আশ্রাব আহম্মদ রাসেল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো, আবুল কাশেম ভূইয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে-এ আলম, আখাউড়া পৌরসভা মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক মো. জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম আহবায়ক মো. সেলিম ভূইয়া, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ জামদে শাহ, প্রকল্প বাস্তবায়ক কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. আব্দুল মমিন বাবুল, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন বেগ শাপলু প্রমূখ।

স্বপ্নের ঘর পেয়ে উপকারভোগীরা খুবই খুশি। যে স্বপ্ন দীর্ঘ বছর তারা পুরণ করতে পারেনি সেই স্বপ্ন সরকার এগিয়ে এসে পুরন করে দেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি উপকারভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

বিধবা মরিয়ম বেগম বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে ৩ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখেছি। সামান্য আয়ের সংসারে ভাঙ্গাচুরা ভাড়া বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম দিনানিপাত করতে হয়েছে। তাছাড়া ভাড়া ঘরটি খুবই ঝরাঝির্ণ, সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ায় আর শীতের সময় এই ভাঙ্গা ঘরে ছেলে সন্তান নিয়ে তাদের থাকতে খুবই কষ্ট করতে হয়। কখনো কল্পনা ও করতে পারেনি তার পাকা ঘর হবে । পাকা ঘরে থাকতে পারবে। সব কিছু যেন এখন তার স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি পাকা ঘরে থাকতে পারবে কখনো কল্পনাও করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন পুরন করেছে। তিনি আরো বলেন আমার মাথায় যত চুল আছে আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করে এবং সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। মো. আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমরা নিতান্তই অসহায় ভূমিহীন গরিব মানুষ। সামান্য আয়ের সংসার। ভাঙ্গাচুরা ঘরে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিনানিপাত করছি। ভাড়া বাড়িতে থাকায় কোন স্বাধীনতা ছিল না। আমাদের ছেলে মেয়ের সাথে অন্য কেউ খেলা ধুলা করতো না। সব কিছু চোখ বুঝে সহ্য করেছি। বর্তমান সরকার আমাদের মতো গরিবের দিকে তাকানোর ফলে থাকার জায়গা পেয়েছি। আমরা কী কখননো আয় রোজগার করে বাড়িঘর করতে পারতাম। তাছাড়া কোনদিন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটা পাকা ঘর দেবেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যেন ভালো ও সুস্থ রাখে। তিনি যেন অনেক দিন বেঁচে থাকেন।
আনন্দপুর গ্রামে ভুমিহীন হারুণহাওলাদার বলেন, তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে কর্মচারীর কাজ করেন। অন্যের বাড়িতে ভাড়া করে স্ত্রী, ৩ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন। তবে বাড়িটিও ভাঙ্গাচুরা। থাকার অনুপযোগী হয়ে আছে। কিন্তু সাধ্য না থাকায় কষ্ট করে পড়ে আছেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ও। তিনি বলেন আমার জীবনতো শেষ থাকার ব্যবস্থাটুকু করতে পারি নাই। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর বরাদ্দ পেয়ে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে তার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে-এ আলমের সার্বিক তত্বাবধানে চরনারায়পুর ১৪ টি, কেন্দুয়াই ৭টি, চানপুরে ১৫টি ও ধরখারের রুটি গ্রামে ১৪টিসহ মোট ৫০টি উপকারভোগী পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। তবে উপকারভোগীদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা, কাজের মহিলাসহ গৃহহীন পরিবার।

প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য থাকছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এসব ঘর। চৌচালা বিশিষ্ট রঙিন টিনের ঘর , প্লেন শিটের জানালা, ও দরজা, ইটের দেয়াল,এবং পাকা মেজ রয়েছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সবগুলো বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় করা হচ্ছে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট, টিউবওয়েল, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধা থাকছে এসব বাড়িতে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা দফায় দফায় গৃহ নির্মাণ কাজ পরিদর্শনসহ নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহার স্বরূপ এসব নির্মাণ করে দেওয়া হয় । সরকারের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং কোনো মানুষ যেন গৃহহীন না থাকেন। তিনি আরো বলেন দ্বিতীয় ধাপে এই উপজেলায় ৫০টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলার সব ভূমি ও গৃহহীনদের এ কর্মসুচির আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে-এ আলম বলেন, এ উপজেলার মোট ৬৫১টি ভূমিহীনদের তালিকা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৫০ টি পরিবারের মাঝে ভূমি ও ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এরআগে ৪৫ টি পরিবারের মাঝে ভূমি ও ঘর হস্তান্তর করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপকারভোগী ওইসব পরিবারের নিকট গৃহ হস্তান্তরের কার্যক্রম শুভ উদ্ধোধন করেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের হাতে বাড়ির দলিলপত্র হস্তান্তর করা হয় । পর্যায়ক্রমে বাকীঘরগুলো নির্মাণ করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads