নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নে শাহচিলাপুর গ্রামে ঐতিহাসিক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ্’র সমাধি(মাজার)। এলাকাবাসীর কাছে কালাপীরের দরগাহ বা মাজার বলে অধিক পরিচিত। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমদিকে এ সমাধি(মাজারটির) অবস্থান।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার প্রথম ইলিয়াছ শাহী বংশের তৃতীয় সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ্ রাজ্যকে বিস্তৃতির চেয়ে সুদৃঢ় করার দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা ও সুশাসনের জন্য সুনাম অর্জন করেছিলেন। সুলতানের রাজত্বকালে প্রথম বাঙ্গালি কবি শাহ মুহাম্মদ সগীর ‘ইউসুফ জুলেখা’ কাব্য রচনা করেন। তিনি পারস্যে কবি হাফিজের সাথে পত্র আলাপ করতেন এবং বাংলায় আসার আমন্ত্রন জানান। বাংলা সাহিত্যের উন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান ছিল তার। সুলতান তার পিতা (সুলতান সিকান্দার শাহ) ও পিতামহের (সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াছ শাহ্) মতোই আলেম ও সুফিদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন। তার সময়ে শেখ আলাউল হক ও নুরদ্দীন কুতুব-উল আলম বিখ্যাত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুলতান গিয়াসউদ্দিনের সমাধির পাশে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে, কোনো ব্যক্তি এ পূরাকীর্তির কোনো রকম ধংস,বিকৃতি,পরিবর্তন বা ক্ষতি করলে পূরাকীতি আইন ১৯৭৬ এর ১৯ ধারা অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। সুলতানের পাশেই তার কাজী সিরাজউদ্দিনকে সমাহিত করা হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯২০ সালের ২২ নভেম্বর গিয়াসউদ্দিনের সমাধিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পূরাকীর্তির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে সরকার। এটি ১০ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট উচু। সমাধির ৩ ফুট উচ্চতার খিলানের ওপর আরও দেড় ফুট উচ্চতায় ৭ ফুট লম্বা অর্ধাবৃত্তকার কষ্টি পাথরে ঢাকা।সমাধির কার্নিশে রয়েছে সুক্ষ কারুকাজ খচিত অলংকার। দুই পাশে রয়েছে তিনটি করে তিন খাঁজবিশিষ্ট খিলান। খাঁজের মধ্যে রয়েছে প্রলম্বিত শিকল ও ঝুলন্ত ঘন্টার নকঁশা।
এলাকাবাসী জানান, অনেক আগে একবার সমাধির উন্নয়ন করা হয়েছিল।এখন আর উন্ন্য়নের হুদিশ পাওয়া যায় না। যার কারনে আগের মতো পর্যটক দেখা যায় না। সপ্তাহের রবিবারে মাঝে মাঝে কিছু বিদেশী পর্যটক দেখা যায়। এলাকাবাসী আরো জানান, প্রত্নত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একজন শিক্ষিত এবং দক্ষ খাদেম নিয়োগ করলে বিদেশী পর্যটকদের ভালোভাবে গাইড দিতে পারবে।
খাদেম ওসমান গনি বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত কাজ করে সমাধি পরিস্কার পরিছন্ন ও দেখাশোনা করি। এর সংস্কার করার দরকার।