• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় জমে উঠেছে পশুর হাট

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। পশুর হাটে গরু,ছাগল ও মহিষ রয়েছে চোখে পড়ার মত। চলছে কেনা বেচা। পশুর হাটে ক্রেতাদের চোখ যেন মাঝারি গরুতে বেশী। তবে বড় গরু নিয়ে বিপাকে আছেন খামারিরা।
এদিকে পশুর হাটে নেই সামাজিক দূরত্ব, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিধি। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে হাট পরিচালনা করতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলে বেশী ভাগ লোকজনকে মাস্ক পরে পশুর হাটে আসতে দেখা যায়নি। ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।

সরেজমিনে পৌর শহরের কলেজ পাড়া শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ মাঠে বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় দেশী বিদেশী লাল, কালো, সাদা রঙের গরু, মহিষ, ছাগল উঠেছে। পশুর তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেকটাই যেন কম। সকাল ১০টা থেকেই এই হাটে শুরু হয়েছে কেনা বেচা। তবে বাজারে বেশী ভাগ ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি হচ্ছে বেশী। ক্রেতা বিক্রেতাদের বেশীভাগ লোকদের মুখে মাস্ক না থাকায় গায়ের সঙ্গে গা লেগে চলছে পশুর দরকষাকষি। এখানে নেই কোনো শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা ও ।

অথচ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলে ও কেউ তা মানছে না। তাছাড়া হাটে নেই ক্রেতা বিক্রেতাদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া কিংবা জীবাণুমক্ত করণের কোন ব্যবস্থাও। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে পশুর হাটে শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি মানার কোন উপায় নেই। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাজারে আসা ক্রেতারা বলেন অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পশুর দাম কিছুটা বেশী মনে করছেন তারা। বাজারে অনেক মধ্য ও নিন্ম আয়ের লোকদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে। এখানে ছোট সাইজের গরু ৩৫-৪৫ হাজার, মাঝারি সাইজের দেশী গরু ৫০-৭০ হাজার, বড় সাইজের গরু ৭০ থেকে ১লাখ টাকার উপর বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট ও মাঝারি গরু বেশী বিক্রি হচ্ছে বিক্রেতারা জানায়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০৬ টি খামার সহ, পারিবারিক ভাবে কৃষক তাদের বাড়িতে মোটাতাজাকরনসহ মোট ১৩ হাজার ৮৩২ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরমধ্যে গরু ১১১৫০টি মহিষ ৩৬৩টি ও ছাগল ভেড়া ২৩১৯টি রয়েছে।

সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় সদর উপজেলাসহ অন্যান্য স্থান থেকে আরো ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পশু আসবে বলে আশা করছেন। এ উপজেলায় যে পরিমান পশু কোরবানি করা হবে তা স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে ।

ব্যবসায়ী মো. কাদের মিয়া বলেন, তার খামারে থাকা ২২ টি গরু ট্রাকে করে আখাউড়ায় নিয়ে আসেন লোকজন ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। দুপুরের মধ্যে ৬০হাজার টাকায় ৩ টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানায়। তারা আশাবাদি ঈদের আগেই সব গরু বিক্রি হবে।

মাধবপুরের ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে পশুর হাট বন্ধ থাকায় গরু বিক্রি নিয়ে এক প্রকার শঙ্কায় পড়েছিলাম। তার খামারে ছোট বড় ২৭টি গরু রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় তিনি ট্রাকে করে ২০টি গরু এই বাজারে নিয়ে আসেন। ইতিমধ্যে তার বাজারে ৪ টি গরু বিক্রি করা হয় বলে জানায়।

মোগড়া এলাকার রমজান মিয়া বলেন, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ৭টি গরু তিনি লালন পালন করেন। ইতিমধ্যে তিনি অনলাইনের মাধ্যমে ২টি গরু বিক্রি করেন। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে হাট না বসায় নিতি খুবই চিন্তিত ছিলেন। তবে বাজার বসায় ৬টি গরু বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। এরমধ্যে ১টি গরু বিক্রি হয়। বিক্রিতে ভালো টাকা লাভ হয় বলে জানায়। বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে। অনেকে দরদাম করছে। আশা করছেন ঈদের আগেই তিনি সবগুলো বিক্রি করতে পারবেন।

কোরবানির পশু ক্রয় করতে আসা মোগড়া এলাকার মো. জাকির মিয়া জানান, আসলে বাজারে যে রকম ভিড় হওয়ার কথা ছিল তেমন নেই। পশু আছে বেশী ক্রেতা কম। বাজার ঘুরে দেখে শুনে একটি গরু তিনি ৬০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন । গত বছরের তুলনায় এবছর দাম কম হয়েছে বলে তার কাছে মনে হচ্ছে বলে জানায়। তিনি বলেন গত বছর এমন একটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন ।

উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের মো: মোবারক হোসেন বলেন, বর্তমান এই পরিস্থিতিতে গরু কেনা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলান। অবশেষে পশুর হাট দেওয়ায় বাজার ঘুরে দখে ১লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দেশী ১টি গরু কেনা হয়।

উত্তর ইউনিয়নের আলী আকবর বলেন শেষ মুহুর্তে গরু নিয়ে টানাটানি থাকে । তাই আগে বাগে মাঝারি সাইজের একটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় কেনা হয়। গরু ক্রয় করতে কোন প্রকার ঝামেলা হয়নি। বাজারে পশুবেশী ক্রেতা কম হওয়ায় অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে দাম অনেক কম হয়েছে বলে জানায়।

তারাগনের সাইফুল ইসলাম বলেন গরুর দরদাম কেমন বাজার ঘুরে দেখছি । শেষ মুহর্তে গরু কেনা হবে।

বাজার ইজারাদার মো. ইয়াছিন মিয়া বলেন, মাইক যোগে বার বার বলা হচ্ছে সকলে যেন মাস্ক পড়ে আসতে। দুরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে বলা হচ্ছে। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়টি পালনে চেষ্টা করা হচ্ছে।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামাল বাশার বলেন, বর্তমান এ অবস্থায় পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনা-বেচা করতে বলা হচ্ছে ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads