• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
নির্মাণকাজে সন্তোষ, স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

নির্মাণকাজে সন্তোষ, স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস

  • গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০২১

জেলার কোটালীপাড়ার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা মেলে অনিল দাস (৭৫) ও তার স্ত্রী সুমালা দাস দম্পতির। এই দম্পতিকে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে খোশগল্প করতে দেখা গেল। তাদের কাছে নতুন আবাসস্থলের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চাইলেই তারা বলেন, ‘বাবা অনেক ভালো আছি। শেখ হাসিনা এই বৃদ্ধ মানুষটাকে জায়গা দিয়ে একটা পাকাঘর করে দিয়েছেন। মা-বাবা আমাকে যা দিতে পারেনি বা আমি এই ৭৫ বছর বয়সে আয়-রোজগার করে যা করতে পারিনি, সেই কাজটি আমার আরেক মা শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন। আমি আমার এই মায়ের কছে কৃতজ্ঞ।’ শুধু অনিল দাস ও তার স্ত্রীই নয়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-এর আওতায় ৮৪৮টি ও প্রকল্প-২-এর আওতায় ৫৮৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন।

সূত্রমতে, মুজিব জন্মশতর্বষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ ও ২-এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য এসব বসতঘর নির্মাণ করে দিয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসন। প্রতিটি বসতঘরে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমন স্পেস, একটি বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা রয়েছে।

বৃদ্ধ অনিল দাস (৭৫) ও তার স্ত্রী সুমালা দাস (৫৫)। তাদের ঠিকানা হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের দেবগ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আগে রাধাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মান্দ্র রাধাগঞ্জ খেয়া নৌকার মাঝি ছিলেন তিনি। মানুষ পারাপার করা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। এই দিয়ে চলত তাদের ছয় সদস্যের সংসার। জায়গা জমি না থাকায় ঘাটের পাশে হারান সাহার বাড়িতে এক হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ঘরে ছিল তাদের বসবাস। একমাত্র ছেলে বিয়ের পর পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বরিশালে। সে এখন মা-বাবার খোঁজ-খবর রাখে না। চার মেয়ে। সবারই বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ছোট মেয়েকে এসএসসি পাস করিয়েছিল। সে এখন সাতক্ষীরায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। সে তার বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণপোষণের জন্য কিছু টাকা দেয়। তাই দিয়েই চলে তাদের সকল খরচ। এক সময় যাদের ঠাঁই হয়েছিল অন্যের ভাড়া ঘরে, এখন তারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে বসবাস করছেন। মাথা থেকে দূর হয়েছে ভাড়ার টাকা আর কি খাব আর কীভাবেই বা চলব এই চিন্তা।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওসমান গণি জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় প্রকল্প-১ ও ২-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ২ হাজার ১৩টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা করে প্রকল্প-১-এ ৮৪৮টি ও এক লাখ ৯০ হাজার টাকা করে প্রকল্প-২-এ ৫৮৫টি ঘর সুবিধাভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে ৪২৬টি ঘরের। আর মাটি ভরাট করা হয়েছে ১৫৪টি ঘরের।

শুধু দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পই নয়, ঘর পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সদর উপজেলার পুরাতন মানিকদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণকারী আবতাব বিশ্বাস (৩৬), চরগোবরা গ্রামের কৃষক হেদায়েত সিকদার (২২) ও পুরাতন মানিকদাহ গ্রামের দিনমজুর টিক্কা শেখ (৪৫), নিজড়া ইউনিয়নের মালেঙ্গা গ্রামের রিকশাচালক রমিছ মোল্লা (৫২), দিনমজুর আরজু ফকির (২৬), করপাড়া গ্রামের ঝিয়ের কাজ করা মর্জিনা বেগম (৫০), কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মিয়াসহ (৮০) অসংখ্য সুবিধাভোগী।

ঘরের নির্মাণকাজ দেখতে সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গেলে কথা হয় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে। ঘরের নির্মাণ কেমন হয়েছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমরা যে ঘর পেয়েছি, নির্মাণকাজ ভালোই হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো অসুবিধা মনে হচ্ছে না। তবে কিছু দিন আগে যে প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল সে সময় ঘরের পাশের মাটি ধুয়ে গেছে। পরে সেটা আমরা ঠিক করে নিয়েছি।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, দুই হাজার ১৩টি ঘরের মধ্যে এক হাজার ৪৩৩টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তর হওয়া ঘরের মধ্যে অতিবৃষ্টির কারণে দুটি ঘরের বারান্দার নিচের মাটি সরে মেঝেটা ফেটে গিয়েছিল। সেটা আবার মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকা ঘুরে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads